আগুনে গৃহহীন দেড়শো পরিবার

ফের গৃহহীন হলেন মালদহের কালিয়াচক ২ ব্লকের মোথাবাড়ির চারটি গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবার। সোমবার দুপুর ১টা নাগাদ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে মোথাবাড়ি ফাঁড়ির বাঙিটোলার এই চারটি গ্রামে। ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ভষ্মীভূত হয়ে যায় দেড়শোটি কাঁচা বাড়ি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৪৫
Share:

জ্বলছে ঘরবাড়ি।— নিজস্ব চিত্র

ফের গৃহহীন হলেন মালদহের কালিয়াচক ২ ব্লকের মোথাবাড়ির চারটি গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবার। সোমবার দুপুর ১টা নাগাদ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে মোথাবাড়ি ফাঁড়ির বাঙিটোলার এই চারটি গ্রামে। ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ভষ্মীভূত হয়ে যায় দেড়শোটি কাঁচা বাড়ি।

Advertisement

পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যায় মালদহ থেকে দমকলের চারটি ইঞ্জিন। ওই চারটি ইঞ্জিনের দেড় ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে পরিবারগুলির সমস্ত কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঙিটোলা হাইস্কুলে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সেই শিবিরেই রাখা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের মধ্যে শুকনো খাবার বিলি করা হয়েছে। জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব রকম সাহায্য করা হচ্ছে। শুকনো খাওয়ার থেকে শুরু করে রান্না করা খাওয়ার বিলি করা হবে।’’

১৯৯৮ সালে ভাঙনে ঘর ছাড়া হয়েছিলেন কালিয়াচক ২ ব্লকের কেবি ঝাউবনা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাজার হাজার বাসিন্দা। ওই বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছিলেন বাঙিটোলা গ্রামপঞ্চায়েতের পঞ্চানন্দপুর-মোথাবাড়ি রাজ্য সড়কের ধারে পাঁচকুড়ি টোলা, খাসমহল, মতিটোলা এবং গৌড়পুর গ্রামে। রাজ্য সড়কের দুই ধারে অস্থায়ী বাঁশ ও খড় দিয়ে বেড়া তৈরি করে টিন এবং টালির ছাউনি দেওয়া ঘরে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। এ দিন দুপুর একটা নাগাদ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফের ঘর ছাড়া হয়ে পড়লেন ওই গ্রাম গুলির দেড়শোটি পরিবার।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিলীপ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির রান্না ঘর থেকে প্রথমে আগুন লাগে। এদিন প্রখর রোদের সঙ্গে বাতাস থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পড়শি বাড়িগুলিতে। এ ছাড়া বাড়িগুলি খড়ের তৈরি থাকায় আরও দ্রুত গতিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে নিজেরাই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তবে ওই এলাকায় একটি বড় ট্রান্সফর্মার আগুনে ফেটে যায়। যার ফলে আগুন আরও ভয়াবহ আকার নেয়। এর জন্য মানুষ আগুন নেভানো ছেড়ে ঘরের পণ্য বের করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। আগুন লাগার ঘণ্টা খানেক পর ঘটনাস্থলে আসে মালদহ থেকে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন। পরে আরও একটি ইঞ্জিন যা।

গ্রামবাসীরা দমকল কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, ‘‘দমকলের ইঞ্জিন সময় মতো এলাকায় আসেনি। যার জন্য এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল এ দিন।’’ দমকল বিভাগের এক কর্তা আজাহার আলি বলেন, ‘‘খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছি। ঘরগুলি বাঁশ, খড় দিয়ে তৈরি থাকায় দ্রুত আগুন ছড়িয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’’

ঘটনাস্থলে ব্লক প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের কর্তারাও যান। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দেড়শোটি পরিবার এদিনের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ২৫টি গরু, ১০টি ছাগল এবং প্রচুর হাঁস মুরগির মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু গবাদি পশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের তরফ থেকে তাদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবারগুলিকে পোশাকও দেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকায় প্রশাসনের তরফে জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে ত্রাণ শিবিরের জন্য। ক্ষতিগ্রস্ত মানিক মণ্ডল, নিখিল মণ্ডল, দ্বিজেন মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘দ্বিতীয় বারের জন্য আমরা সর্বস্বান্ত হলাম। ভাঙনের কবলে ঘর হারাতে হয়েছিল। এবার আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল আমাদের। আমাদের পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট থাকল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন