পঞ্চায়েতে হানা দুর্নীতি দমন শাখার
Corruption

পৌনে দু’কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ

শুক্রবার ধৃতদের নগর দায়রা আদালত ২৫ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে। নগর দায়রা আদালতের মুখ্য সরকারি কৌঁসুলি দীপঙ্কর কুণ্ডু ধৃতদের ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের আর্জি জানান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা, গাজল শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৩৩
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

পুকুর খনন থেকে সৌন্দর্যায়ন—একাধিক প্রকল্পে দুর্নীতিতে প্রধানের সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের। বৃহস্পতিবার মালদহের গাজলের বৈরগাছি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে হানা দিয়ে সরকারি প্রকল্পের প্রায় দু’ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগে প্রাক্তন প্রধান-সহ দুই পঞ্চায়েতের আধিকারিককে গ্রেফতার করল রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখা (এসিবি)। দিনভর জেরার পরে, তাঁদের গ্রেফতার করে কলকাতা নিয়ে যান রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখার কর্তারা।

Advertisement

শুক্রবার ধৃতদের নগর দায়রা আদালত ২৫ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে। নগর দায়রা আদালতের মুখ্য সরকারি কৌঁসুলি দীপঙ্কর কুণ্ডু ধৃতদের ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের আর্জি জানান। তাঁর দাবি, ‘‘কোনও কাজ না করেই বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। শ্রমিকদের মজুরি ইত্যাদি দেওয়ার ক্ষেত্রেও কারচুপি করা হয়েছে। এই দুর্নীতির সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত।’’ ধৃতদের আইনজীবী বি এস চৌবে জামিনের আর্জি জানাননি। বিচারক ধৃতদের আট দিনের পুলিশ হেফাজত দেন।

আদালত সূত্রের খবর, ২০১৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন সুবোধ। গত বছর এই দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট চায় হাই কোর্ট। এর পরেই জেলা প্রশাসনের তরফে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলায় চলতি বছরের মে মাসে গাজল থানায় অভিযোগ করেন বিডিও। জুন মাসে এই মামলার তদন্তভার যায় এসিবি-র হাতে।

Advertisement

প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২-এ কোনও কাজ না করেও একশো দিনের কাজের প্রায় ৪০টি প্রকল্পের প্রায় দু’কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। অভিযোগ, ভুয়ো নথি তৈরি করে ওই দুই বছরে ওই টাকা তছরুপ করা হয়েছে। তবে ওই টাকা কাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে বা তাতে লাভবান কারা হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

তৃণমূল পরিচালিত বৈরগাছি ২ পঞ্চায়েতের দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ করে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে বিজেপি কর্মী ধনঞ্জয় সরকার খুন হন বলে দাবি নেতৃত্বের। অভিযোগ, ১০০ দিনের প্রকল্পে পুকুর খনন না করেই টাকা তছরুপ করা হয়। এ ছাড়া, শ্মশানের সৌন্দর্যায়নের নামেও এক কোটি এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সে ঘটনায় হাই কোর্টে জুন মাসে মামলা করেন নিহত ধনঞ্জয়ের ভাই প্রহ্লাদ সরকার।

বৃহস্পতিবার গাজলে হানা দিয়ে বৈরগাছি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তৃণমূলের সুবোধ সরকার, পঞ্চায়েতের সচিব শোভন রায়, নির্মাণ সহায়ক অপূর্ব বাড়ুইকে গ্রেফতার করে দুর্নীতি দমন শাখা। এ দিন পুলিশের এক কর্তা বলেন, “দুর্নীতির ঘটনায় পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান এবং দুই পঞ্চায়েতের আধিকারিককে রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখা গ্রেফতার করেছে।” প্রহ্লাদের দাবি, “পঞ্চায়েতে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছিল। সেই অভিযোগই হাই কোর্টে করা হয়েছিল। সে জন্য দাদাকে খুন করা হয়।’’

এ বারে ওই পঞ্চায়েত বাম ও কংগ্রেসের দখলে গিয়েছে। প্রধান ও উপপ্রধান কংগ্রেস এবং সিপিএমের হয়েছেন। বিজেপির উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মুর দাবি, “তৃণমূল পঞ্চায়েতের মাধ্যমে মানুষের টাকা লুট করেছে। পঞ্চায়েতগুলিতে তদন্ত হলে আরও অনেকে গ্রেফতার হবে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুল রহিম বক্সী বলেন, “আইন আইনের পথে চলবে। তৃণমূলের আমলে ঘটনা ঘটলে, ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement