মোবাইলের জন্য বকুনি দেওয়ায় আত্মঘাতী কিশোর

উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানিয়েছেন, একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলেই ওই কিশোরের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২১
Share:

শোওয়ার ঘরের বাঁশের সিলিং থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কিশোরের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল ইটাহারের চালুনিয়ায়। মৃতের নাম ভুবনচন্দ্র সরকার(১৬)। পড়াশোনা না করে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বকাবকি করেছিলেন বাবা-মা। তারই জেরে অভিমানে আত্মঘাতী হয়েছে কিশোর। এমনটাই অনুমান পুলিশের।

Advertisement

উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানিয়েছেন, একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলেই ওই কিশোরের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

ইটাহারের বানবোল হাইস্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত ভুবন। চালুনিয়া এলাকাতেই একটি মিষ্টির দোকান রয়েছে তার বাবা কার্তিক সরকারের। বাড়িতেই থাকতেন মা কৌশল্যাদেবী।

Advertisement

দু’ বছর আগে বিয়ে হয়ে গিয়েছে ওই দম্পতির বড় মেয়ের। আর কয়েকদিন পরেই মাধ্যমিক পরীক্ষা তাঁদের ছোট ছেলে ভুবনের। কিন্তু পড়াশোনা না করে দিনরাত সে মোবাইল নিয়ে মেতে থাকতো বলে জানিয়েছেন ভুবনের কাকা মাখনচন্দ্র সরকার।

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাতে ওই কারণে ভুবনের বাবা-মা ভুবনকে বকাবকি করেন। এরপরেই সে শুতে চলে যায়। একটি বড় ঘরের মাঝে পর্দা টাঙিয়ে একদিকে ভুবন ও অন্যদিকে তার বাবা ও মা রাতে ঘুমাতেন।

এ দিন সকালে কৌশল্যাদেবী ভুবনের ঘর সাফাই করতে গিয়ে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে চিত্কার চেঁচামেচি শুরু করেন। এরপরেই বিষয়টি জানাজানি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে পাঠায়।

ওই ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে পড়ুয়াদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের প্রবণতা এবং এ ব্যাপারে অভিভাবকদের ভূমিকা। বানবোল হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক বিপুল মৈত্র ও সহকারী প্রধানশিক্ষক চন্দ্রনারায়ণ সাহার দাবি, মোবাইলের কুপ্রভাব সম্পর্কে স্কুলের তরফে অতীতে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের সচেতন করা হয়েছে।

স্কুলে মোবাইল আনা ও ব্যবহার রুখতে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা নিয়মিত নজরদারিও চালান। তাঁদের বক্তব্য, অভিভাবকরা সচেতন না হলে পড়ুয়াদের মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয়। কারণ, অভিভাবকরাই তাঁদের নাবালক ছেলেমেয়েদের মোবাইল কিনে দেন। একটানা মোবাইল ব্যবহারের জেরে পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য ও পড়াশোনার ক্ষতি হয়। ভুবনের অকাল মৃত্যু থেকে অভিভাবকের শিক্ষা নেওয়া উচিত।

ছেলের শোকে কাতর কার্তিকবাবু এখন শুধু একটাই কথা বলছেন। ‘‘এমন হবে জানলে ছেলেকে কখনও মোবাইল ফোন কিনে দিতাম না। সেই নিয়ে বকাবকিও করতাম না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন