ছাত্রদের পাশে নিয়ে পার্থেনিয়াম উচ্ছেদ

জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়কের পাশাপাশি মালদহের চাঁচল মহকুমাজুড়েই যত্রতত্র ছড়িয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত পার্থেনিয়াম। কৃষিক্ষেত্রের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত দূষণকারী ওই গাছ উচ্ছেদে উদ্যোগী হওয়ার কথা প্রশাসনের।

Advertisement

বাপি মজুমদার

চাঁচল শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:২২
Share:

ছাত্রদের প্রশিক্ষণ।—নিজস্ব চিত্র।

জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়কের পাশাপাশি মালদহের চাঁচল মহকুমাজুড়েই যত্রতত্র ছড়িয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত পার্থেনিয়াম। কৃষিক্ষেত্রের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত দূষণকারী ওই গাছ উচ্ছেদে উদ্যোগী হওয়ার কথা প্রশাসনের। কিন্তু কারও কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ।

Advertisement

সেই দেখে পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে এ বার ওই পার্থেনিয়াম উচ্ছেদের পরিকল্পনা নিয়েছেন চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক কমলকৃষ্ণ দাস। তা উচ্ছেদ করে কীভাবে নির্মূল করা সম্ভব, সেই প্রশিক্ষণ দিয়ে সঙ্গে নিয়েছেন পড়ুয়াদের।

পেশা শিক্ষকতা হলেও কমলকৃষ্ণবাবু পরিবেশ আন্দোলনকারী হিসেবেও পরিচিত। পার্থেনিয়ামের বাড়বাড়ন্তে চুপ করে থাকতে না পেরে তিনি স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে পার্থেনিয়াম উচ্ছেদের জন্য জেলা স্কুল পরিদর্শকের অনুমতিও নিয়েছেন। গত শনিবার দুপুরে স্কুল ছুটির পর একেক দিন একেকটি স্কুলের পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর চলছে অভিযান। পড়ুয়াদের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া মিলেছে।

Advertisement

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) আশিসকুমার চৌধুরী বলেন, ‘‘পার্থেনিয়ামের মতো দূষক উদ্ভিদ উচ্ছেদ করতে এক জন শিক্ষকের এগিয়ে আসাটা খুব ভাল ব্যাপার। ছাত্রছাত্রীদেরও সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। স্কুলের চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকাটাও জরুরি। তাই পড়ুয়াদের নিয়ে কমলবাবুর উদ্যোগে আপত্তি করিনি।’’

পরিবেশপ্রেমীরা জানিয়েছেন, অত্যন্ত দূষক উদ্ভিদ বলে পরিচিত পার্থেনিয়ামের রেণু অতি সূক্ষ্ম ও হালকা হওয়ায় তা সহজেই বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকতে পারে এবং সহজেই হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগ সৃষ্টি করে। এই উদ্ভিদের উপক্ষার পার্থেনিন ক্যান্সারেরও সহায়ক। পার্থেনিয়ামের নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের সংযোজন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় এরা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে কৃষির পাশাপাশি এটি স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও বড় বিপদের কারণ।

চাঁচলের মহকুমাশাসক পোন্নমবলম এস বলেন, ‘‘ওই শিক্ষকের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। পার্থেনিয়াম উচ্ছেদ করতে প্রশাসনের তরফেও কী করা যায়, তা দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কৃষি দফতরের সঙ্গে কথা বলব।’’ চাঁচলের প্রাক্তন এসিএমওএইচ চিকিৎক স্বপন বিশ্বাসও জানিয়েছেন, পার্থেনিয়াম স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। কৃষিক্ষেত্রে পার্থেনিয়াম আগাছা হিসেবে শুধু ক্ষতিকারকই নয়, ধানের বৃদ্ধিকেও ব্যাহত করবে বলে জানিয়েছেন কৃষি দফতরের মালদহের উপ অধিকর্তা অনন্তদেব মাইতি।

কিন্তু এত কিছু জানার পরেও প্রশাসন কেন উদাসীন, তা নিয়েই পরিবেশপ্রেমীরা প্রশ্ন তুলেছেন। চাঁচল শহরে কয়েক বছর আগে ব্যাপক ভাবে পার্থেনিয়ামের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এখন শহরে তা কম হলেও অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

কমলবাবুর আবেদনে সাড়া দিয়েছে স্কুলগুলিও। শনিবার একেকটি স্কুল বেছে নিয়ে সেখানে হাজির হচ্ছেন তিনি। একদল পড়ুয়াকে প্রথমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তার পর শুরু হচ্ছে পার্থেনিয়াম উচ্ছেদ। হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক পড়ে রাস্তার দু’পাশ থেকে পার্থেনিয়াম গাছ তুলে তা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলছে পড়ুয়ারা। কখনও সেখানে পুঁতে দেওয়া হচ্ছে গাঁদা বা কালকাসুন্দা গাছের চারা। কেননা ওই দুই গাছ থাকলে সেখানে পার্থেনিয়াম হয় না।

কমলবাবুর কথায়, ‘‘পার্থেনিয়াম এলাকায় যে ভাবে থাবা বসাচ্ছে তাতে কিছু একটা করা দরকার বলে মনে হয়েছিল।’’ তিনি জানান, স্কুলগুলির কিছু ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের পার্থেনিয়াম উচ্ছেদের প্রক্রিয়া দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর পর থেকে তাঁরা নিজেদের এলাকায় নিয়মিত ওই দূষক উদ্ভিদ উচ্ছেদ করবেন। ধারাবাহিক ভাবে এটা চললে পার্থেনিয়াম উচ্ছেদ অনেকাংশেই সফল হবে বলে দাবি কমলবাবুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন