কেউ রডে ঝুলছেন, কেউ বসে শৌচালয়ের সামনেই

যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিদিন এমনই অবস্থা থাকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার ট্রেনের। তাঁদের আশঙ্কা যে কোনওদিন একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে ওই ট্রেনে।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৮ ০৯:৫০
Share:

কামরা: ভিড়ে ঠাসাঠাসি অবস্থা ট্রেনে। নিজস্ব চিত্র

কামরার মধ্যে দমবন্ধ অবস্থা। এক একটি আসনে অন্তত বারো জন বসে রয়েছেন। সাধারণ কামরার লাগেজ রাখার জায়গায় উঠে গিয়েছেন যাত্রীরা। কেউ কেউ লোহার রডে কাপড় বেঁধে ঝুলে রয়েছেন। শৌচাগারের চারদিকে গিজগিজ করছে যাত্রী। দরজায় ঝুলে রয়েছেন আরও কয়েকজন। এটা জেনারেল কামরা।

Advertisement

পাশের সংরক্ষিত কামরাতেও অবস্থা অনেকটা একইরকম। সেখানে কেউ ঝুলে না থাকলেও একেকটি আসনে ছয় থেকে সাতজন করে বসে রয়েছেন। রবিবার এমনই অবস্থা গুয়াহাটি-ব্যাঙ্গালুরু সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসের। এই ট্রেন গুয়াহাটি থেকে নিউ কোচবিহার হয়ে বেঙ্গালুরু যাবে।

যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিদিন এমনই অবস্থা থাকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার ট্রেনের। তাঁদের আশঙ্কা যে কোনওদিন একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে ওই ট্রেনে। উত্তর-পূর্ব রেলের এক আধিকারিক বলেন, “যাত্রী উঠে যাচ্ছে। কাউকে তো আটকানো যায় না। তবে পরিষেবার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।” অসম সহ উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণ ভারত যাওয়ার যাত্রী ক্রমশই বেড়ে চলেছে। কাজের জন্য তো বটেই সেই সঙ্গে চিকিৎসক দেখানো এবং পড়াশোনার জন্য অনেকে নিত্যদিন দক্ষিণ-ভারত যাতায়াত করেন। রেল সূত্রের খবর, সেখানে সব মিলিয়ে পাঁচদিন গড়ে একটি করে ট্রেন ওই রুট ধরে চলাচল করে। বাকি দুদিন দুটি ট্রেন চলাচল করে।

Advertisement

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “গত চার বছরে একটি ট্রেন উত্তর-পূর্বের জন্য বরাদ্দ হয়নি। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া কামরা দেওয়া হয় এই রুটে। যাত্রীদের নিয়ে কোনও চিন্তাভাবনাই নেই রেলের।”

ওই ট্রেনেই নিউ কোচবিহার থেকে বেঙ্গালুরু যাচ্ছিলেন মন্টু বর্মন নামে এক যুবক। যিনি কাপড় বেঁধে ঝুলে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, বেঙ্গালুরুর কারখানায় তিনি শ্রমিকের কাজ করেন। মন্টু বলেন, “আমি প্রায় দুই বছর ধরে এই রুটে যাতায়াত করছি। এই ট্রেনেই যাই সবসময়। আসার সময় মাঝে মধ্যে ফাঁকা পেয়েছি। কিন্তু যাওয়ার ট্রেনে এভাবেই ঝুলে যেতে হয়।” দিন কয়েক আগে ওই ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায় চেপে আত্মীয়কে চিকিৎসক দেখাতে দক্ষিণ ভারতে যান দিনহাটার বাসিন্দা আজিজুল হক। তিনি জানান, সংরক্ষিত কামরা বাহাত্তর জনের। সেখানে একটি কামরায় যাত্রী ছিল প্রায় ২০০ জন। তাঁর অভিযোগ, ওয়েটিং টিকিট কেটে অনেকে উঠে পড়েছিলেন সংরক্ষিত কামরায়। অনেকে আবার জেনারেল টিকিট কেটে ওই কামরায় উঠে পড়েছিলেন। পরে টিকিট পরীক্ষক অনেককে জরিমানা করলেও তাঁরা আর নেমে যাননি।

আজিজুল বলেন, “রাতে শৌচাগার যেতে পারিনি। চারদিকে যাত্রী বসে রয়েছে। পা ফেলার জায়গা নেই। কামরা জুড়ে দুর্গন্ধ। সকালে গিয়ে দেখি শৌচাগার উপচে পড়েছে নোংরায়। জল মিলছে না কোথাও। রেল পরিষেবার এমন হাল মেনে নেওয়া যায় না।”

কোচবিহার ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সম্পাদক রাজেন বৈদ দাবি করেন, এই রুটে দক্ষিণ ভারতে যাওয়ার ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, “কয়েক দফায় নানা ভাবে রেলমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছি ওই দাবি নিয়ে। কোনও কাজ হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন