ভোগান্তি: সোমবারের রেল অবরোধে যাত্রীদের সমস্যার জের চলল মঙ্গলবারও। এনজেপি স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র
বর্ধমানের বাসিন্দা নির্মল সেন। গ্যাংটক, নামচি-সহ দক্ষিণ সিকিম ঘোরার পরে মঙ্গলবার শতাব্দি এক্সপ্রেসে বাড়ি ফেরার টিকিট কেটেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী, পুত্র এবং শ্বশুর-শাশুড়ি। সোমবার বিকেলেই পাহাড় থেকে নেমে এসেছিলেন শিলিগুড়িতে।
কিন্তু সেদিনই অসমের শ্রীরামপুরে আদিবাসী সংগঠনের অবরোধের জেরে বাতিল হয়ে যায় এনজেপি থেকে মঙ্গলবার ভোরের শতাব্দী এক্সপ্রেস। আর বিপাকে পড়ে যায় সেন পরিবার। টিকিটের টাকা ফেরৎ পেলেও রাত কাটানোর জন্য হন্যে হয়ে ঘোরেন নির্মল। শেষে স্টেশন লাগোয়া একটি লজে জায়গা মেলে তাঁদের। মঙ্গলবার বিকেলের তিস্তা-তোর্সার টিকিট কেটে লজে ফেরার আগে বললেন, ‘‘কী দুর্ভোগে পড়লাম বলুন তো। সঙ্গে দু’জন বয়স্ক লোক। সংরক্ষিত টিকিট ছিল। বাসে যাওয়া সম্ভব নয়। সাধারণ কামরায় টিকিট কাটতে হল। খাওয়া দাওয়ার কথা ছেড়ে দিন। লজভাড়াটাও লেগে গেল। এখন কোনওমতে বাড়ি পৌঁছতে পারলে বাঁচি।’’
জলের বোতল হাতে চলমান সিঁড়ির আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন দিল্লির বাসিন্দা গুরুপ্রীত কউর। টানা ফোনে পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। মঙ্গলবার সকালে এনজেপি-নিউ দিল্লি সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসে টিকিট ছিল গুরুপ্রীত ও তাঁর আরও চার সঙ্গীর। কালিম্পং, লাভা ঘুরতে এসেছিলেন তাঁরা। এখন বলছে সূচি বদলে সন্ধ্যায় ছাড়বে তাঁদের ট্রেন। বলেন, ‘‘দিনভর ওয়েটিংরুমে বসে আছি। জল, খাবার তো পাচ্ছি। টানা ব্যবহারে শৌচাগার নোংরা ছিল। কখন ট্রেন ছাড়বে আবর কখন বাড়ি যাব কে জানে।’’
রেল সূত্রের খবর, সোমবারের তুললায় মঙ্গলবার উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের পরিষেবা অনেকটাই স্বাভাবিক হলেও অধিকাংশ ট্রেনই দেরিতে চলাচল করেছে। একমাত্র বাতিল হয়েছে শতাব্দী এক্সপ্রেস।
এ দিনও এনজেপি স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, ওয়েটিং রুম, ওভারব্রিজে খবরের কাগজ, চাদর পেতে বহু যাত্রীদের শুয়ে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। রেল পুলিশের থানার সামনে দুই ছেলেমেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে চাদরে শুয়ে ছিলেন লামডিঙের অনিল প্রসাদ। আনন্দবিহার-গুয়াহাটিতে ফেরার কথা ছিল তাঁদের। অনিলের কথায়, ‘‘প্রায় ৭ ঘণ্টা দেরিতে চলছে ট্রেন। রুটি, ফল খাচ্ছি।’’
স্টেশনের যাত্রীদের চাপ থাকায় রেলের তরফে সোমবার সকাল থেকে শৌচাগার, ওয়েটিংরুম, পানীয়জলের ব্যবস্থা ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়। ডুয়ার্স ঘুরে তিস্তা-তোর্সায় টিকিট কেটেছিলেন কলকাতার নীলাভ বিশ্বাস, কাকলি বিশ্বাসেরা। দুপুর সাড়ে তিনটায় ট্রেন থাকলেও ঘণ্টা দু’য়েক আগে স্টেশনে চলে আসেন। দ্বিতীয় শ্রেণির ওয়েটিং রুমে কোনওমতে বসে কাকলিদেবী বলেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গের মত গরম পড়েছে। ওয়েটিং রুমের চারটি ফ্যানের মধ্যে একটি ঠিকঠাক চলছে না।’’
রেল সূত্রের খবর, এ দিন সকালে দার্জিলিং মেল, পদাতিক সময়মত এসেছে। রাতেও ঠিকঠাক ছেড়েছে। অসমের দিকে ট্রেনগুলোর দেরি হওয়ায় সমস্যা হয়েছে। এরমধ্যে চন্ডীগড়-ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস, নর্থইস্ট এক্সপ্রেস, ক্যাপিটল এক্সপ্রেস, সিকিম মহানন্দা লিঙ্ক এক্সপ্রেস রয়েছে।
উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের এডিআরএম পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘ট্রেন পরিষেবা প্রায় স্বাভাবিক হয়েছে। কিছু ট্রেন একটু দেরিতে চলেছে। আর শতাব্দীর রেকের সমস্যা থাকায় বাতিল হয়েছে।’’