যন্ত্রণা নিয়েই ফিরতে হল ছোট্ট আফসানােক

লাবলু বলেন, “রাস্তায় সাইকেলের আঘাতে মাথায় চোট পেয়েছে। হাসপাতালেই ব্যান্ডেজ করিয়েছিলাম। সেখান থেকেই চিকিৎসক সার্জেন দেখাতে বলেছিলেন। মঙ্গলবার সময় পেরিয়ে যাওয়ায় ফিরে যাই। আজও চিকিৎসক পেলাম না। বাচ্চাটা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। কী যে করি!”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯ ০৫:০৪
Share:

বন্ধ বহির্বিভাগ। চিকিৎসা না পেয়েই ফিরতে হল আফসানাকে। বুধবার কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

পাঁচ বছরের আফসানা রারিয়ার মাথায় ব্যান্ডেজ। মাঝেমধ্যে অস্ফুটে বলছে, ব্যথা । দাদু লাবলু হোসেন ছোট্ট নাতনিকে নিয়ে বর্হিবিভাগের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঘুরছেন। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী আমিজন বিবিও। সার্জেন দেখানোর জন্য নাতনিকে নিয়ে এসেছিলেন ওই দম্পতি। ঘণ্টাখানেক পরেও চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে দিশেহারা তাঁরা। এমন অভিজ্ঞতা নিয়ে বুধবার কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফিরলেন অনেকেই। ইমার্জেন্সি অবশ্য খোলা ছিল।

Advertisement

লাবলু বলেন, “রাস্তায় সাইকেলের আঘাতে মাথায় চোট পেয়েছে। হাসপাতালেই ব্যান্ডেজ করিয়েছিলাম। সেখান থেকেই চিকিৎসক সার্জেন দেখাতে বলেছিলেন। মঙ্গলবার সময় পেরিয়ে যাওয়ায় ফিরে যাই। আজও চিকিৎসক পেলাম না। বাচ্চাটা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। কী যে করি!” আমিজনের সংযোজন, “কোথাও চিকিৎসকের ওপর হামলা হলে তা যেমন ঠিক নয়, তবে আমাদের মতো ভোগান্তিও আশা করিনা।” ঘুঘুমারির বকম মিঁয়াও গলার ব্যথার জন্য বর্হিবিভাগে চিকিৎসক দেখাতে এসেছিলেন। তিনিও একসুরে বলেন, “ভীষণ অসুবিধেয় পড়েছি। শুনেছি কলকাতায় ডাক্তারবাবুকে মারধর করা হয়েছে। কেউ দোষ করে থাকলে সে জন্য সবাইকে ভুগতে হবে কেন? আন্দোলনটা অন্যভাবে করা যেতে পারত।” স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখানোর জন্য অপেক্ষায় থাকা শালবাড়ির তপন মোদক বলছিলেন, “ডাক্তার নিগ্রহ নিন্দার। কিন্তু সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলাও কাম্য নয়। ফিরেই গেলাম।”

চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্হিবিভাগে এমন ছবিই দেখা গেল বুধবার। হাসপাতাল সূত্রের খবর, গড়ে এক হাজার রোগী বর্হিবিভাগে চিকিৎসার জন্য আসেন। কিন্তু এ দিন বর্হিবিভাগে পরিষেবা মেলেনি। কয়েকজনের দাবি, সকাল ৯টার আগে তারা টিকিটও কাটেন। কিন্তু অপেক্ষা করে চিকিৎসকের দেখা পাননি। বেলা বাড়ায় কাউন্টার থেকেও অনেককে নতুন টিকিট দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ। যদিও হাসপাতাল সূত্রের দাবি, নিয়ম মেনে কাউন্টার খোলা হয়। অনেকে টিকিট নেন। কুকুরে কামড়ানোর জন্য ভ্যাকসিন লাইন ছিল। তাঁরা পরিষেবা পেয়েছেন। ইমার্জেন্সিতে অবশ্য পরিষেবা দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এক কর্মীর দাবি, ‘‘ডাক্তারবাবু না এলে আমরা কী করব!’’ সুপার রাজীব প্রসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। অন্য এক কর্তার দাবি, ‘‘রাজ্য জুড়েই প্রায় এক ছবি। কী আর করা যাবে?’’

Advertisement

শহরের একাধিক নার্সিংহোম, ক্লিনিক, প্রাইভেট চেম্বারেও ডাক্তাররা বসেননি। একটি নার্সিংহোমের বর্হিবিভাগের কর্মী জানান, যাঁরা বুধবার নাম লিখিয়েছিলেন তাদের বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক দেখবেন। যা শুনে রোগীর আত্মীয়ের বক্তব্য, ‘‘গাড়ি ভাড়া নিয়ে জেলাশহরে আসার খরচ, হ্যাপার কী হবে?’’ এক চিকিৎসক বলেন, “বার বার একই ঘটনা ঘটছে। চিকিৎসা করতে গিয়ে আমরা মৃত্যু মুখে পড়ছি। এই প্রবণতা বন্ধ না হলে কাজ করব কী করে। সবার অসুবিধে বুঝতে পেরেও তাই একদিনের প্রতিবাদে সামিল হয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন