পেনশন নয়, পেলেন হুমকি

পেনশনের টাকা চেয়ে জুটল গ্রেফতারির হুমকি। কেউ মুদির দোকানে মাসকাবারের খরচ মেটাবেন, কেউ বা ওষুধ কিনবেন। সব কাজ ফেলে সকাল সকাল এসে ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দিয়েছিলেন পেনশন প্রাপকরা। ব্যাঙ্ক খুলতেই ঘোষণা, ২ হাজার টাকার বেশি কাউকে দেওয়া সম্ভব নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:০৩
Share:

এসবিআইয়ের শিলিগুড়ি কোর্ট শাখায় বিক্ষোভ।— নিজস্ব চিত্র

পেনশনের টাকা চেয়ে জুটল গ্রেফতারির হুমকি। কেউ মুদির দোকানে মাসকাবারের খরচ মেটাবেন, কেউ বা ওষুধ কিনবেন। সব কাজ ফেলে সকাল সকাল এসে ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দিয়েছিলেন পেনশন প্রাপকরা। ব্যাঙ্ক খুলতেই ঘোষণা, ২ হাজার টাকার বেশি কাউকে দেওয়া সম্ভব নয়। অন্যান্য ব্যাঙ্কের শাখায় ন্যূনতম ৪ হাজার টাকা দেওয়া হলেও, এই শাখায় কেন হবে না— ম্যানেজারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কয়েক জন প্রবীণ নাগরিক। তার পরেই ব্যাঙ্ককর্মীদের একাংশ হুমকি দিতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, ব্যাঙ্কের কোলাপসিবল গেট আটকে, ভিতরে থাকা গ্রাহকদের গ্রেফতার করা হবে বলে শাসানো শুরু হয়। খবর দেওয়া হয় পুলিশকেও। যাঁরা ম্যানেজারের কাছে প্রশ্ন করতে গিয়েছিলেন, তাঁদের গ্রেফতার না হলে কর্মীরা কাজ করবেন না বলেও দাবি করেন।

Advertisement

খবর পেয়ে শিলিগুড়ি থানা থেকে পুলিশ বাহিনী এসে পৌঁছয়। বাইরে লাইনে থাকা গ্রাহকরা তখন বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিক্ষোভের চাপে ফের কাজ শুরু হয় ব্যাঙ্কে। বুধবার শিলিগুড়ির কোর্ট মোড়ে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার শাখার ঘটনা। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনার কারণেই গ্রাহকদের গত কয়েক দিন ধরেই দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের পাল্টা দাবি টাকার, জোগান না থাকাতেই গ্রাহকদের হাতে বেশি টাকা তুলে দেওয়া যায়নি।

ব্যাঙ্কের কর্মীদের একাংশ দাবি করেছেন, গ্রাহকদের অনেকেই গালিগালাজ করেছেন। ব্যাঙ্কের চিফ ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তরুণ সাহার দাবি, ‘‘কাউকে আটকানো হয়নি, গ্রেফতারের হুমকিও দেওয়া হয়নি। সামান্য মতবিরোধ হয়েছিল। তা আলোচনায় মিটে গিয়েছে।’’ গ্রাহকদের অবশ্য দাবি, প্রথমে কয়েক জনকে ভিতরে আটকে গ্রেফতারের হুমকি দেওয়ার পরে বাইরে ক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও চলে আসেন। পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে আশঙ্কা করেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পিছু হঠেন। গ্রাহকদের হুমকি দেওয়ার খবর শুনে তৃণমূলের শিলিগুড়ির নেতারাও শাখায় আসেন। শিলিগুড়ি পুরসভার বিরোধী দলনেতা রঞ্জন সরকার বলেন, ‘‘টাকা না পেয়ে অনেক বাড়িতেই রান্নাবান্না বন্ধ হতে বসেছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে আরও সহিষ্ণু হতে হবে। ব্যাঙ্কের শাখায় এর পরেও গাফিলতির অভিযোগ শুনলে আন্দোলন হবে।’’

Advertisement

চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই এসবিআইয়ের কোর্ট মোড় শাখায় অব্যবস্থা চলছে বলে গ্রাহকদের অভিযোগ। গত মঙ্গলবার সকলকে চার হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এ দিন কোনও কারণ না জানিয়েই, ২ হাজার টাকার বেশি কাউকে দেওয়া হবে না বলে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেন। তাতেই মাথায় হাত পড়ে গ্রাহকদের অনেকের। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী নীতি পাল বলেন, ‘‘ছেলে বাইরে থাকে। আমার পেনশনেই সংসার চলে। এ দিন বলা হয় ২ হাজারের বেশি দেওয়া হবে না। পর দিন টাকা তুলতে পারব কিনা জানতে চাইলে নানা হুমকি দেওয়া হয়।’’ মঙ্গলবার ৪ হাজার টাকা তুলেছিলেন বিদেশ দত্ত। সব টাকা ওষুধের বিল মেটাতেই খরচ হয়ে যায় বলে জানিয়ে বিদেশবাবু বলেন, ‘‘এ দিন ব্যাঙ্কে ঢুকতেই বলা হয়, পরপর দু’দিন টাকা দেওয়া হবে না। গেট আটকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।’’ প্রাক্তন রেল কর্মী সনৎ মোহান্ত বলেন, ‘‘নোট বাতিলের দুর্ভোগের উপরে নিজের অ্যাকাউন্টের টাকা তুলতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। কার কাছে অভিযোগ জানাব জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন