ভূমিকম্পের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ছাত্রেরা কিন্তু গুজবে কান দেয়নি। ক্লাস হঠাৎ বন্ধ হওয়ায় খুশি। ছবি: সন্দীপ পাল।
ভূমিকম্পের আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না কিছুতে। সেই সঙ্গে রকমারি গুজবে জেরবার দশা শিশু ও বয়স্কদের। কখনও ক্লাসঘরে মাথার উপরে ঘুরতে থাকা পাখা সামান্য দুলতে দেখে স্কুলের ছাত্ররা আতঙ্কে চিৎকার জুড়ে হুড়মুড়িয়ে মাঠে বেড়িয়ে আসছে।
তাঁদের কান্না থামাতে কালঘাম ছুটছে শিক্ষকদের। অন্যদিকে আতঙ্কে অসুস্থদের ভিড় বেড়ে চলেছে সদর হাসপাতালের আউটডোরে। সমস্যা এড়াতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কাউন্সিলিংয়ের পাশাপাশি শিশুদের বিভিন্ন খেলায় ব্যস্ত রাখা এবং বয়স্কদের প্রিয়জনদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর দাওয়াই দিচ্ছেন।
বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ শহরের ফণীন্দ্রদেব ইন্সটিটিউটের ছাত্ররা আচমকা ক্লাস ছেড়ে পড়িমরি ছুটে মাঠে নেমে আসে। প্রত্যেকের চোখেমুখে আতঙ্কের ছায়া। ষষ্ঠ শ্রেণির কিছু পড়ুয়া একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। হইচই শুনে শিক্ষকরা ছুটে যান। জানতে পারেন মাথার উপরে ঘুরতে থাকা পাখা কাঁপতে দেখে ছেলেরা ভূমিকম্পের আতঙ্কে দিশেহারা হয়েছে। বুঝিয়ে কিছু ছাত্রকে ক্লাসে পাঠানো সম্ভব হলেও কয়েকজন বাড়িতে যাওয়ার জন্য অঝোরে কাঁদতে থাকে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ধীরেন ঝম্পটি বলেন, “অল্প কিছুতেই ছেলেরা ভয় পাচ্ছে। ক্লাস ছেড়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে।”
শুধু ফণীন্দ্রদেব ইন্সটিটিউট নয়। শনিবারের ভূমিকম্পে জেলা স্কুলের হলঘর সহ বিভিন্ন ক্লাসঘরে ফাটল ধরায় আতঙ্কে স্কুলে উপস্থিতির হার উদ্বেগজনক ভাবে কমেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধীরাজ ঘোষ বলেন, “ছেলেদের বেশিরভাগ স্কুলে আসছে না।” একই ছবি ময়নাগুড়ি হাই স্কুল, গার্লস স্কুল, সুভাষ নগর হাই স্কুলেও। শনিবার ভূমিকম্পের পর থেকে জলপাইগুড়ি সদর গার্লস স্কুলেও ছাত্রীদের উপস্থিতির কমেছে। এদিকে নবম ও দশম শ্রেণির পরীক্ষা চলছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অপর্ণা বাগচি জানান, একে উপস্থিতির হার কম সেই সঙ্গে পরীক্ষার জন্য পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছে।
ধূপগুড়ির পূর্ব মল্লিকপাড়া হাই স্কুলের শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের আতঙ্ক কমাতে নিজেরাই কাউন্সিলিং শুরু করেছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত দে বলেন, “ভূমিকম্প কি এবং কেন হয় সেটা ছেলেমেয়েদের বোঝানো হচ্ছে। ভূমিকম্পের সময় কি করা উচিত সেটাও জানানো হচ্ছে। আতঙ্ক অনেকটা কমেছে।”
জেলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আতঙ্কজনিত কারণে মাথা ঘোরা, বুক ধড়ফড় করা, বমি ভাব, ভুলে যাওয়া, অসংলগ্ন কথা বলার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে শিশু এবং বয়স্কদের। গত মঙ্গলবার থেকে অন্তত ২০ জন রোগী ওই সমস্যা নিয়ে আউটডোরে চিকিৎসার জন্য যান। চিকিৎসার পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অসুস্থদের সমস্যার খুঁটিনাটি রেকর্ড করার কাজ শুরু হয়েছে হাসপাতালের তরফে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ স্বস্তিশোভন চৌধুরী বলেন, “মানসিক দিক থেকে দুর্বলদের মধ্যে বেশি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কাউন্সিলিংয়ে ওঁরা সুস্থ হচ্ছেন। প্রত্যেকের কাছে আবেদন রাখা হচ্ছে কেউ আতঙ্কে অসুস্থ হলে উপেক্ষা না করে নিজেরা গল্পের ছলে রোগীর মানসিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করুন।” আতঙ্ক কাটাতে সদর হাসপাতাল সুপার পার্থ দে’র পরামর্শ, ‘‘ঘরে একা বসে না থেকে প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটাতে চেষ্টা করুন। বন্ধুদের সঙ্গে হাল্কা মেজাজে আড্ডা দিতে পারেন। বই পড়ার অভ্যাস থাকলে হাল্কা হাসির গল্পের বই পড়ুন। আত্মীয় এবং বন্ধুদের বাড়িতে বেড়াতে যেতে চেষ্টা করুন। শিশুরা যেন একা ঘরে বসে না থেকে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করে সেদিকে নজর রাখুন।’’