শুধু প্রকৃতির টানে মালদহের কাজলদিঘির পাশে জমিয়ে বসেছে পিকনিকের আসর। এই মরসুমে আরও ভিড় হবে বলে আশা। নিজস্ব চিত্র
শীত পড়লেই বড়দিনের হাতছানি। বর্ষশেষ থেকে বর্ষবরণ, নানা উৎসবও। অনেক জায়গায় সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় পিকনিক। বালুরঘাটের আরণ্যক থেকে শিলিগুড়ির উপকণ্ঠের আমবাড়ি ব্যারেজ, বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চল অথবা জলপাইগুড়ির তিস্তাপাড় হয়ে ওঠে জমজমাট। যাঁরা নিয়মিত পিকনিকে যান, তাঁদের দাবি, পুলিশি নজরদারি থেকে শৌচাগার, পানীয় জল পর্যন্ত পরিষেবার ব্যবস্থা করা হোক, বদলে নেওয়া হোক ফি। উত্তরবঙ্গের নানা জায়গার কয়েকটি ‘পিকনিক স্পট’ কী অবস্থায় রয়েছে তা দেখে নেওয়া যাক একনজরে:
• দার্জিলিং
সুকনায় পিকনিক বন্ধ অনেকদিন। সেবকে গত বছর থেকে পিকনিক বন্ধ হয়েছে। সেই থেকে তুড়িবাড়ি এলাকায় পিকনিক করতে ভিড় জমছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে সাহায্য করে থাকেন। এমনকী পিকনিক করতে অনেকে আসছেন দেখে ডাবগ্রাম-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে মহিলাদের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে পিকনিক স্পট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। তারা শৌচাগার, পানীয় জলের মতো পরিষেবা দিয়ে থাকেন। সেই মতো পিকনিকের দলগুলো থেকে ফি নেন। রোহিণী এখন পিকনিকের নতুন ঠিকানা। জলের সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি। সে জন্য পর্যাপ্ত জল সঙ্গে রাখা জরুরি।
• দঃ দিনাজপুর
দোগাছি ফরেস্টের এ বছর বেহাল অবস্থা। ভেঙে পড়েছে বসার চেয়ার, শৌচালয়ও ব্যবহারের অযোগ্য। পানীয় জলের দু’টি নলকূপ অকেজো। অথচ ফরেস্টের চার দিকে আত্রেয়ী খাঁড়ির পরিখা দিয়ে ঘেরা মনোরম পরিবেশ। এন্ট্রি ফি লাগে না। পুলিশের নজরদারি থাকে। ডাঙা এলাকায় পঞ্চায়েতের তৈরি আরণ্যক পিকনিক স্পট গতবছর নতুন করে সাজানো হয়েছে। এন্ট্রি ফি আছে। তিওড় কালীবাড়ি কিছুটা পেরিয়ে ডানদিকে জগজীবনপুর এলাকার সরু ভাঙাচোড়া পিঐচ রাস্তা ধরে পৌঁছনো যাবে শারণবাড়ি ফরেস্ট। হিলি পঞ্চায়েত সমিতির যত্ন রয়েছে। মাথা পিছু ফি দিতে হয়।
• জলপাইগুড়ি
তিস্তা পাড়েই অন্যতম আকর্ষণ। তা সে গজলডোবা হোক কিংবা জলপাইগুড়ি শহরের কাছাকাছি এলাকা। রয়েছে রামসাইয়ের কয়েকটি এলাকা। লাটাগুড়িও পাল্লা দিচ্ছে। জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত জেলাশাসক অম্লানজ্যোতি সাহা জানান, এ বারও ৪১টি পিকনিক স্পটের দিকে নজরদারি রাখা হবে। কোনও পিকনিক স্পট ব্যবহারে কী পরিমাণ টাকা দিতে হবে সেটা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে প্রশাসন। বিডিও অফিসে সেই তালিকা রয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাছ থেকে থার্মোকল ও প্লাস্টিকের থালা, গ্লাসের বদলে শালপাতার থালা ও মাটির গ্লাস মিলবে।
• উত্তর দিনাজপুর
কুলিকে পক্ষিনিবাসের অসংরক্ষিত এলাকার ২৫ বিঘা জমিতে পিকনিক স্পট। কিন্তু চারিদিকে আগাছার জঙ্গল। গরু, ছাগল, কুকুর ঘুরে বেড়ায়। শৌচাগার বেহাল। পানীয় জলের কল বেহাল। রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিক দ্বিপর্ণ দত্তের দাবি, সার্বিক পরিকাঠামোর উন্নয়নের কাজ হবে। ইসলামপুরের সাপনিকলা, হাপতিয়াগছে পিকনিক হয়। অনেকে আবার বাইক কিংবা গাড়ি নিয়েই বাইরে যান। সেখানেও ব্যবস্থা সব সময় ভাল নয়।
• আলিপুরদুয়ার
পিকনিক স্পট রয়েছে দক্ষিণ পোর, উত্তোর পোর, সিকিয়া ঝোড়া, রাজাভাত খাওয়া জয়গাঁ এলাকায়। অধিকাংশ জায়গায় চলে অবাধে মদ্যপান। পিকনিক শেষে মদ্যপ অবস্থায় বাইক চালান হয়। গাড়ি মাথায় উঠে নাচের দৃশ্য দেখা যায়। তাতে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ। দূষণ রুখতে থার্মকলের থালা প্লাস্টিকের গ্লাস বন্ধ করা হোক। টোটোপাড়ায় হাউরিতেও অনেকে যান।
• কোচবিহার
রসিকবিল বনভোজনকারীদের অনেকেরই অন্যতম পছন্দের পিকনিক স্পট। মিনি জু’তে চিতাবাঘ, ঘড়িয়াল, হরিণ দেখার হাতছানিও রয়েছে। অভিযোগ, পানীয় জল, শৌচাগারের সুব্যবস্থা নেই। বনভোজনকারীদের একাংশের ক্ষোভ রয়েছে। শহর লাগোয়া এলাকায় শালবাগানে সমস্যা পানীয় জলেরও। কোচবিহারের রসমতিতে এক সময় নৌকাবিহার, রান্না থেকে বসবার, বিশ্রাম করার সুন্দর পরিকাঠামোর টানে ভিড় জমত। অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে সে সব ঠিকঠাক ভাবে সংস্কার হয়নি। মাথাভাঙার দমদমা ঝিল ও গোসানিমারির শালবাগান, রাজপাট, গড়কে কেন্দ্র করেও পিকনিক জমে।