গীতালদহে দিনমজুরি পাচ্ছেন না অক্ষয়রা

কেউ পাঁচশো টাকার নোট বন্ধক রেখে সব্জি কিনেছেন। কেউ আবার ঋণ করে সংসার চালাচ্ছেন। টাকার জন্য দিনভর হাপিত্যেশ করে ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে গিয়েছেন অনেকেই। হাতে গোনা দুটো এটিএম কাউন্টার ছিল বন্ধ।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৪
Share:

কেউ পাঁচশো টাকার নোট বন্ধক রেখে সব্জি কিনেছেন। কেউ আবার ঋণ করে সংসার চালাচ্ছেন। টাকার জন্য দিনভর হাপিত্যেশ করে ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে গিয়েছেন অনেকেই। হাতে গোনা দুটো এটিএম কাউন্টার ছিল বন্ধ। বার বার তার সামনে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে অনেককেই। কোচবিহার জেলার বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন প্রত্যন্ত গ্রাম গীতালদহে সাধারণ মানুষের যেন দুর্ভোগের শেষ নেই। এলাকার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত মইনুল হক বলেন, “এখানকার অধিকাংশ মানুষ গরিব। দিনের কাজ বন্ধ করে ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে দিনভর দাঁড়িয়ে থাকছেন তাঁরা। তার পরেও অনেকে টাকা পাচ্ছেন না। ফলে সংসারের খরচ চালাতে চরম কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে অনেককে।”

Advertisement

কোচবিহার শহর থেকে কম করে হলেও চল্লিশ কিলোমিটার দূরে গীতালদহ। দিনহাটা শহর থেকে দূরত্ব পনেরো কিলোমিটারের কম নয়। এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়াও কেউ দিনমজুরি করেন, কেউ আবার গাড়ি চালান। অল্প সংখ্যক মানুষই সেখানে সবচ্ছল বলা চলে। দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত মিলিয়ে ওই এলাকা। পুরো এলাকায় সীমান্ত। দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা বিএসএফের পাহারা থাকে সেখানে। ওই এলাকায় দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা রয়েছে। রয়েছে দুটি এটিএম কাউন্টার। বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, ব্যাঙ্কে তাঁদের অ্যাকাউন্ট একশ দিনের জন্যই খোলা হয়েছে। সেই অ্যাকাউন্টের উপরেই এখন ভরসা করে চলছেন তাঁরা। এলাকার বাসিন্দা ইছা মিয়াঁ জানান, তিনি একটি ছোট গাড়ির চালকের কাজ করেন। একটি ব্যাঙ্কে একশ দিনের কাজের সূত্রেই তাঁর অ্যাকাউন্ট রয়েছে। গাড়ি চালিয়ে বর্তমানে তাঁর কাছে একটি পাঁচশ টাকার নোট রয়েছে। ব্যাঙ্কের লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়েও তিনি টাকা বদল করতে পাননি। তিনি বলেন, “কাজ সেরে গিয়ে লাইনে দাঁড়াই। তিনটের পরে আর স্লিপ দেওয়া হয়নি। তাই আমি টাকা বদল করতে পারিনি। এদিকে ঘরে সব্জি নেই। কেউ টাকা বদল করে দেয়নি। পরে এক দোকানি ওই টাকা বন্ধক রেখে আমাকে সব্জি দিয়েছে। পরে সেটি ছাড়িয়ে এনে বদল করতে হবে।”

গীতালদহেরই দোলগোবিন্দ এলাকার এক বাসিন্দা অক্ষয় বর্মন পেশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তিনি জানান, পাঁচশ, হাজার টাকার নোট বাজারে অচল হওয়ার পর থেকে কেউই আর তাঁকে মজুরি দেয়নি। তিনি বলেন, “সবাই পরে মজুরি দেবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা দিন আনি দিন খাই। দোকানিদের কাছে হাত পাততে হয়েছে। ঋণ করে এখন সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু কাজ না পেলে শোধ করব কী করে?”

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন