কাঁটাতার ভুলে দুই বাংলার মাটিতে একুশের উদ্‌যাপন

এ দিন হিলি সীমান্তের চেকপোস্টের জিরো পয়েন্টের ওপারে বাংলাদেশের মাটিতে দুই বাংলার মানুষ পুরনো স্মৃতি ও আবেগের টানে মিলিত হয়ে পালন করলেন ভাষা দিবস। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

হিলি শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:০৫
Share:

অনুষ্ঠান: হিলি সীমান্তে। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি....।’ না, বালুরঘাট ভোলেনি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিনে তাই শিকড়ের টানে ভোর থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রান্তিক শহর বালুরঘাট-হিলি সীমান্তও মুখরিত হয়ে উঠল নানা অনুষ্ঠানে। এ দিন হিলি সীমান্তের চেকপোস্টের জিরো পয়েন্টের ওপারে বাংলাদেশের মাটিতে দুই বাংলার মানুষ পুরনো স্মৃতি ও আবেগের টানে মিলিত হয়ে পালন করলেন ভাষা দিবস।

Advertisement

এ দিন সকালে পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে হিলি চেকপোস্ট দিয়ে এ পারের ২৫ জন ওপারে পা রাখতেই শহিদ মিনারের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান। বালুরঘাটের ‘মেঘালয় তুরা করিডর কমিটি’-র পক্ষে নবকুমার দাস, ‘ছন্দম’-এর পূর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘উত্তরের রোববার’-এর পক্ষে বিশ্বনাথ লাহা, তিওড়ের ‘উজ্জীবন সোসাইটি’র সুরজ দাস প্রমুখ প্রতিনিধিদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের হাকিমপুরের মেয়র জামির হোসেন চলন্ত। ওপার বাংলার সাপ্তাহিক ‘আলোকিত সীমান্ত’-এর সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ড’-এর কর্ণধার লিয়াকত আলি। তাঁদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনাসভা, কবিতাপাঠ, আবৃত্তি, দেশাত্মবোধক গান, হয় নৃত্য পরিবেশন। সব শেষে ছিল সাহিত্যপাঠের আসর। গানে, স্লোগানে দিনটি স্মরণ করা হল বালুরঘাট কলেজ এবং জেলা গ্রন্থালয়েও।

বালুরঘাট শহরের তৃণমূল ছাত্রপরিষদের কলেজ ইউনিটের সভাপতি রোহন চক্রবর্তী, সৌরভ সরকারদের মতো একঝাঁক তরুণ ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করলেন কিছুটা অন্য ভাবে। এ দিন আত্রেয়ীতে তর্পণ করেন তাঁরা। রোহনের কথায়, ‘‘বাংলা ভাষার আন্দোলনের ফলেই ইউনেসকো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে স্বীকৃতি দেয়। আর এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে। যেখানে এখনও আমাদের শিকড় আছে, আমাদের পূর্বপুরুষের চরণধূলি আজও রয়েছে ওপারের পথঘাটে।’’

Advertisement

তাই তো বাংলাদেশের স্বাধীনতার মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ভাবে শামিল হয়েছিলেন এপারের মানুষ। হিলি সীমান্তের ফুটবল মাঠের শহিদবেদী আজও সেই স্মৃতি বহন করছে। আজ দুই বাংলার মাঝে কাঁটাতারের বেড়া পড়লেও এই দিনটিতে মানুষের আবেগের কাছে মুছে যায় তা। মাতৃভাষা দিবস উদ‌্‌যাপনে একসঙ্গে শরিক হন দুই বাংলার মানুষ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছে ১৪৪ ধারা অমান্যের অজুহাতে পুলিশের গুলিতে নিহত বরকত, রফিক, সালাম, জব্বার, শফিক, শফিউরদের স্মৃতিতে চোখের কোণটা তাই চিকচিক করে ওঠে বালুরঘাটের রোহন, বিনয়, সুভাষদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন