শীতের পোশাকের বাজার সুনসান শিলিগু়ড়িতে। — নিজস্ব চিত্র
নোটের আকালের বাজারেও আয়োজনের ত্রুটি নেই। শপিং মল, দোকানে সাজানো ক্রিসমাস ট্রি। চার্চে ক্যারলের মহড়া সকাল-সন্ধ্যা। ভুটিয়া মার্কেটে ঝুলছে হাল ফ্যাশনের জ্যাকেট, সোয়েটার। সোস্যাল সাইটে ভেসে বেড়াচ্ছে বর্ষশেষের পার্টি কেমন হবে, তা নিয়ে উষ্ণ আলোচনা। কিন্তু, হঠাৎই মুখ লুকিয়েছে শীত! কারণ, ফি বছর যার হাত ধরে উত্তরবঙ্গে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ে, সেই পশ্চিমী ঝঞ্ঝারই যে দেখা নেই এ বার।
তাই ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহেও দার্জিলিং পাহাড় বাদে উত্তরবঙ্গের বাকি সব শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গড়ে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘটনাচক্রে এখন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও একই। সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় তো মালদহ, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, কোচবিহার ছাপিয়েই গিয়েছে রাজ্যের রাজধানী শহরকে। একমাত্র শিলিগুড়িতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।
অথচ ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতেই বেশ জমিয়ে শীত পড়েছিল উত্তরবঙ্গে। তাই শীতবস্ত্রও বেরিয়ে পড়েছিল সব বাড়িতে। কিন্তু দু’দিনের মধ্যে ফিরে এসেছে গরম। এখন তো দিনের রোদ গায়ে লাগছে। তখন হাফ সোয়েটার গায়ে দিলেও ঘাম হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ সুবীর সরকার জানান, বড়দিনের এক সপ্তাহ আগে উত্তরবঙ্গে সাধারণত জমাটি শীত পড়ে। কারণ, ফি বছর ভূমধ্যসাগর এলাকায় তৈরি হওয়া পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ডিসেম্বরের গোড়ায় ইরান, আফগানিস্থান, পাকিস্তান হয়ে উত্তর ভারতে ঢুকে পড়ে। সেখান থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে যাত্রা শুরু হয় তার। সেই ঝোড়ো হাওয়া হিমালয় হয়ে আসায় সেখানে যেমন তুষারপাত হয়, তেমনই সেই ঠান্ডা ঢুকে পড়ে অসম ও লাগোয়া এলাকাতেও। সুবীরবাবু বলেন, ‘‘একাধিক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ফি বছর অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢোকে। এ বার একটা ঝঞ্ঝা উত্তর ভারত ও পাকিস্তানের পার্বত্য এলাকায় রয়েছে। সব ঠিক থাকলে আর এক সপ্তাহের মধ্যে তা উত্তরবঙ্গে ঢোকার কথা। তখন ঘন কুয়াশা তো বটেই, ঝাঁকিয়ে শীত পড়ার কথা।’’
তাই আশায় বুক বাঁধছেন উত্তরের প্রায় সকলেই। শীত না পড়ায় উদ্বেগে রয়েছে পর্যটন মহল। ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্রুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বললেন, ‘‘বড়দিনের আগে জমিয়ে শীত না পড়লে উত্তরবঙ্গের ঘুরতে পর্যটকেরা হতাশ হবেন। অনেকে তুষারপাতের আশায় এই সময়ে দল বেঁধে এখানে আসেন। তাঁরা মুখ ঘুরিয়ে নেবেন। একে নোট বাতিলের জেরে মন্দা চলছে। তার উপরে প্রকৃতি বিমুখ হলে ক্ষতির বহর বাড়বে।’’
বস্তুত, পাহাড় বা ডুয়ার্সে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অনেকেই বিস্মিত। যেমন, অনুসূয়া মজুমদারেরা নদিয়া থেকে ২০ জন জয়ন্তী ও লাগোয়া এলাকায় ঘুরছেন। দিনের বেলায় প্রায় ২৬ ডিগ্রি গরম, রাতেও কম্বল গায়ে রাখা যাচ্ছে না দেখে সকলেই বিরক্ত। বেসরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক অফিসার অনুসুয়া বললেন, ‘‘দিনের বেলায় তো গায়ে সোয়েটার রাখা যাচ্ছে না। একেবারে কলকাতার মতোই। এমন হলে শীতে ডুয়ার্সে বেড়ানোর মজাটাই মাটি।’’ কালিম্পঙের লাভায় তবু ঠান্ডা আছে। কিন্তু, সদর শহরে দিনের বেলা একটা সার্ট গায়ে থাকলেই চলছে। কালিম্পঙের ‘গাইড’ ফুদং লেপচা জানান, দিনের বেলায় তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি হলেও মনে হচ্ছে আরও বেশি গরম।