রাতের বেলা ঠাকুর দেখা

জলপাইগুড়ি শহরের বাসিন্দাদের একটু বেশি রাতে ঠকুর দেখতে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। সন্ধেটা আড্ডা মেরে কাটিয়ে রাতে রিকশা এবং গাড়ি ভাড়া করে ঠাকুর দেখতে যাওয়াটাই এখন সবার পছন্দ। এই সুযোগে একটু বেশি রোজগারের আশা দেখছেন রিকশাচালক এবং চার চাকার গাড়ির চালকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৫৬
Share:

জলপাইগুড়ি শহরের বাসিন্দাদের একটু বেশি রাতে ঠকুর দেখতে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। সন্ধেটা আড্ডা মেরে কাটিয়ে রাতে রিকশা এবং গাড়ি ভাড়া করে ঠাকুর দেখতে যাওয়াটাই এখন সবার পছন্দ।

Advertisement

এই সুযোগে একটু বেশি রোজগারের আশা দেখছেন রিকশাচালক এবং চার চাকার গাড়ির চালকেরা। দুর্গাপুজোয় বৃষ্টির জন্য এ বছর বিশেষ রোজগার হয়নি। কালীপুজোয় আবহাওয়া ভাল। তাই বাসিন্দাদের ঘুরিয়ে কিছু রোজগারের করতে চাইছেন রিকশা এবং গাড়ির চালকেরা। এদের সওয়ারি হয়ে শহরে মণ্ডপে ঘুরে পুজোর আনন্দ নিচ্ছেন বাসিন্দারা।

জলপাইগুড়ি শহরের পুরানো বাসিন্দারা জানিয়েছেন যে আগে জলপাইগুড়ি শহরে বাসিন্দারা সন্ধ্যা হতেই পায়ে হেঁটে ঠাকুর দেখতে যেতেন। যারা বয়স্ক তাঁরাই একমাত্র রিকশা ভাড়া করতেন পুজো দেখার জন্য। তখন শহরের পরিসরও ছিল ছোট। ফলে পায়ে হেঁটে ঘুরতে কোনও অসুবিধাই হতো না বলে জানাচ্ছেন এক বাসিন্দা। এখন দিনকাল পাল্টেছে। শহরের পরিধিও বেড়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যাও। পাল্টে গিয়েছে বাসিন্দাদের রুচিও।

Advertisement

সেনপাড়ার বাসিন্দা বিমা কোম্পানির এজেন্ট বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী এবং তাঁর স্ত্রী পাপিয়া চক্রবর্তী রবিবার রাত এগারোটার পর রিক্সায় করে শহরের নানা মণ্ডপে ঘুরতে যাবেন বলে ঠিক করেছেন। তাঁরা বলেন, “সন্ধ্যে বেলায় এই সময় বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা মেরে কাটিয়ে রাতে সবাই মিলে কয়েকটি রিক্সা ভাড়া করে ঠাকুর দেখব।’’ আড্ডাও এবং ঠাকুর দেখা দুটোর মজাই হাতছাড়া হবে না বলেই এই ভাবনা। এখন ছুটির মরসুম। পরদিন একটু বেলা করে উঠলেও কোন ক্ষতি নেই বললেন বিশ্বজিৎবাবু।

শুধু বিশ্বজিৎ এবং পাপিয়াই নন। জলপাইগুড়ি শহরের এটাই এখন রেওয়াজ। যাঁদের গাড়ি আছে তাঁরা নিজেদের গাড়িতে করে বেশি রাতে ঠাকুর দেখতে যান। যাঁদের গাড়ি নেই ঠাকুর দেখতে তাদের কাছে ভরসা হয়ে ওঠে রিকশা বা ভাড়ার গাড়ি। ফলে যত দিন যাচ্ছে চাহিদা বাড়ছে রিকশা এবং গাড়ির। জলপাইগুড়ি শহরে টোটো বিকেল চারটে থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত বন্ধ। জলপাইগুড়ির ওসি (ট্র্যাফিক) সৈকত ভদ্র বলেন, “ভিড় থাকলে টোটো নিয়ন্ত্রণের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হবে।”

জলপাইগুড়ি শহরে রাতে মণ্ডপে ঘোরানোর জন্য রিকশাভাড়া প্রতি ঘণ্টায় দু’শো টাকা। শহরের প্রধান মণ্ডপগুলি ঘুরে দেখানোর জন্য চার চাকার ছোট গাড়ির ভাড়া অন্তত ১২০০ টাকা। বড় গাড়ি অর্থাৎ চালক-সহ পাঁচ জনের বেশি যাত্রীবহনকারী গাড়ির ভাড়া শুরু ১৫০০ টাকা থেকে। গাড়ি ভাড়া যে চাহিদা অনুযায়ী বাড়তে পারে তা জানিয়েছেন গাড়ির চালকরা।

দুর্গাপুজোর সময় আবহাওয়া খারাপ ছিল। বাসিন্দারা কেউ তেমন করে ঘুরতে পারেননি। রিকশা এবং গাড়ির চালকেরা ঘোরাতেও পারেননি। কালীপুজোয় আবহাওয়া ভাল। কালীপুজোয় ও দীপাবলীতে ঘুরে সবাই সেটা পুষিয়ে নিতে চান। রিকশাচালক এবং গাড়ির চালকেরাও এই সুযোগে তাঁদের ক্ষতি পূরণ করে নিতে চান। সিঙ্গিমারির বাসিন্দা রিকশাচালক নিমাই মাঝি, সেনপাড়ার প্রতুল সরকার, গাড়ি চালক সুশান্ত দে বলেন, ‘‘প্রতি বছর দুর্গাপুজোর সময় যাত্রীদের নিয়ে পুজো দেখিয়ে বাধা রোজগার থাকে। এবার বৃষ্টির জন্য তা হয়নি। কালী পুজোয় আবহাওয়া ভাল। আশাকরি সেই ক্ষতি পূরণ করা যাবে।” দুর্গাপুজোয় না ঘুরতে পারার সমস্ত দুঃখ পুষিয়ে নিতে চাইছেন শহরের বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন