হেলমেট না থাকলে পাম্প থেকে পেট্রোল মিলবে না এমন নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু সেই পেট্রলই যদি মুরগির মাংসের দোকানে পাওয়া যায় তাহলে আর পেট্রল পেতে বাধা কোথায়! ফল, চা, পান-বিড়ির দোকান বা মুদিখানাতেই যদি মেলে তবে আর হেলমেটের দরকার কী। সমস্ত বিধি-নিষেধকে এ ভাবেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে মালদহের গোটা কালিয়াচক জুড়েই এ ভাবে নানা দোকানে খালি জলের বোতল ও জারিক্যানে করে রমরমা কারবার চলছে পেট্রোলের। পুলিশ ও প্রশাসনের চোখের সামনে এ ভাবে পেট্রোল বিক্রি হলেও কারও কোনও হেলদোল নেই।
কালিয়াচকের তিনটি ব্লকে খান দশেক পেট্রল পাম্প রয়েছে। তবে সেগুলি বেশিরভাগই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে। চারটি পাম্প রয়েছে কালিয়াচক-মোথাবাড়ির রাস্তায়। কিন্তু জাতীয় সড়কের দুপাশে তিনটি ব্লকের যে বিস্তীর্ণ গ্রামগুলি ছড়িয়ে রয়েছে সেখানে কোনও পেট্রল পাম্প না থাকায় ভরসা এই সব দোকানই। তাই ‘নো হেলমেট নো পেট্রল’-এর বার্তা তাই আমল পায় না সেখানে।
কালিয়াচক চৌপথী থেকে বালিয়াডাঙা মোড় হয়ে ১২ কিলোমিটার দূরে রয়েছে কালিয়াচক ৩ ব্লকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম পঞ্চায়েত গোলাপগঞ্জ। সেখানেই এমন একটি পানের দোকানের সামনেই কাঠের টুলে রাখা আছে বোতল ও জারিক্যান ভরতি পেট্রল। রয়েছে কেরোসিনও। পাম্পে এখন এক লিটার পেট্রোলের দাম ৭২ টাকা ৭৯ পয়সা হলেও সেখানে তা ৮৫ টাকা। রাতের দিকে সেটাই হয়ে যায় ৯০ টাকা। দোকানি বলছেন, ‘‘কাছাকাছি পাম্প বলতে রয়েছে ১৪ কিলোমিটার দূরে কালিয়াচকের সুলতানগঞ্জে। তাই হঠাৎ প্রয়োজনে বাইক চালকদের ভরসা আমরাই।’’ ওই দোকান থেকে আর একটু এগোলেই রয়েছে একটি ফলের দোকান। সেখানেও একইভাবে বাইরে জারিক্যানে রাখা আছে পেট্রল।
শুধু এই এলাকাতেই নয়, গোলাপগঞ্জ থেকে মোজমপুর, ১৬ মাইল থেকে বৈষ্ণবনগর বাজার, ১৮ মাইল থেকে বীরনগরের রাস্তার দুপাশে একই ছবি। তা বদলায়না বাখরাবাদ, আকন্দবাড়িয়া, বেদরাবাদ, কুম্ভীরা, পারদেওনাপুর-শোভাপুর, শাহবাজপুর, পঞ্চানন্দপুর, হামিদপুর, বামনগ্রাম-মোসিমপুরে গেলেও। ওই সব এলাকায় বাস চলে হাতেগোনা। যাতায়াতে ভরসা বাইকই। এক বাইক চালক সাফ বললেন, ‘‘পাম্পে গেলে হেলমেট লাগছে। তাছাড়া পাম্প রয়েছে ১৪ কিলোমিটার দূরে। সেখানে তেল ভরতে গেলে খাজনার থেকে বাজনাই বেশি।’’
যত্রতত্র পেট্রোলের এই ব্যবসায় প্রশ্ন উঠেছে, এই কারবারিরা তেল কোথা থেকে পাচ্ছেন। পাম্প ছাড়া তো পেট্রল মেলার কথা নয়! নর্থ বেঙ্গল পেট্রোল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের মালদহ জেলা শাখার সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরীর প্রশ্ন, ‘‘পাম্প মালিকেরা ব্যবসা করতে বসেছে। কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। তেল কাউকে না দিলে যদি অন্য কোনও ঘটনা ঘটে তার দায় কে নেবে?’’ উত্তরবঙ্গ পুলিশের এডিজি নটরাজন রমেশবাবু বলেন, ‘‘দোকানে তো পেট্রল বিক্রির কথা নয়। খবর নিয়ে দেখছি।’’