মিগ ভাঙতেই ফিরল ভূকম্পের স্মৃতি

ঘড়িতে তখন রাত প্রায় সাড়ে আটটা। কেউ ঘরে বসে টিভি দেখছিলেন। কেউ আবার রান্না ঘরে ব্যস্ত ছিলেন রাতের খাবার তৈরিতে। আচমকাই বিকট শব্দ। তারপরেই কেঁপে ওঠে মাটি। কিছুদিন আগের ভুমিকম্পের স্মৃতি এখনও টাটকা। তাই আতঙ্কে হুড়মুড়িয়ে ঘর ছেড়ে উঠোন বেড়িয়ে পড়েছিলেন দক্ষিণ চ্যাংপাড়া গ্রামে বাসিন্দারা। কিছুক্ষণ পরে অবশ্য তাঁরা লক্ষ্য করেন তাঁদের বাড়ি লাগোয়া ফাঁকা জমিতে ভেঙে পড়েছে একটি বিমান। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে তাতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৫ ০১:২০
Share:

ভেঙে পড়া বিমান দেখতে দিনভর ভিড় লেগে রইল চ্যাংপাড়ায়। ছবি: নারায়ণ দে।

ঘড়িতে তখন রাত প্রায় সাড়ে আটটা। কেউ ঘরে বসে টিভি দেখছিলেন। কেউ আবার রান্না ঘরে ব্যস্ত ছিলেন রাতের খাবার তৈরিতে। আচমকাই বিকট শব্দ। তারপরেই কেঁপে ওঠে মাটি। কিছুদিন আগের ভুমিকম্পের স্মৃতি এখনও টাটকা। তাই আতঙ্কে হুড়মুড়িয়ে ঘর ছেড়ে উঠোন বেড়িয়ে পড়েছিলেন দক্ষিণ চ্যাংপাড়া গ্রামে বাসিন্দারা। কিছুক্ষণ পরে অবশ্য তাঁরা লক্ষ্য করেন তাঁদের বাড়ি লাগোয়া ফাঁকা জমিতে ভেঙে পড়েছে একটি বিমান। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে তাতে। চ্যাংপাড়ার বাসিন্দা আরতি দাসের রান্না ঘর থেকে বড়জোর ৩০ মিটার দূরে আছড়ে পরে ভারতীয় বায়ুসেনার মিগ ২৭ যুদ্ধ বিমান। হাসিমারা ছাউনি থেকে আকাশে উড়েছিল সেটি। ঘটনার পর রাতেই এলাকার দখল নিয়েছে বায়ুসেনার আধিকারিকরা। রয়েছে বায়ুসেনার ডোগরা বাহিনী ও পুলিশ প্রশাসন। ভেঙে পড়া যুদ্ধ বিমান দেখতে আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন এলাকা, কোচবিহারের নাটাবাড়ি, তুফানগঞ্জ, কালচিনি, কুমার গ্রাম এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছেন সেখানে। আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডেভিড ইভান লেপচা বলেন, “শুক্রবার রাতে মিগ ২৭ বিমানটি ভেঙে পড়ার পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন বায়ুসেনার আধিকারিকরা। তদন্ত শুরু করেছেন তাঁরা।” তবে দুর্ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি বায়ুসেনার আধিকারিকরা।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মিগ বিমানটির পাইলট কে ডি সিংহকে নিরাপদেই হাসিমারা সেনা ছাউনিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক সমীরণ মন্ডল বলেন, ভেঙে পড়া বিমানের টুকরো ছিটকে কিছু বাড়ির টিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকার বিডিওকে রিপোর্ট তৈরী করে তা জমা দিতে বলেছি।’’

চাপড়ের পার ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ চ্যাংপাড়া এলাকার সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য আশিস কুমার রায় সরকার বলেন, “ রাতে আচমকাই দেখি আকাশে আগুনের গোলা। পরে বুঝতে পারি একটি বিমান ভাঙছে। সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় যাই। কিছু পরে খবর আসে পাইলট প্যারাসুটে নেমে এলাকায় একটি বাড়িতে রয়েছে। পুলিশকে খবর দিয়ে তাকেঁ হাসিমারায় পাঠানোর ব্যবস্থা করি।’’ শুক্রবার রাতে বিমানটি ভেঙে পড়ার সময় আত‌ঙ্কে জ্ঞান হারিয়েছিলেন দয়মন্তী রায় নামে এক মহিলা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। রাতেই তাঁকে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন তিনি সুস্থ রয়েছেন। শনিবার সকালে জয়মতী রায় নামে গ্রামের আরও এক মহিলা অসুস্থ বোধ করায় তাঁকেও হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

Advertisement

এলাকার বাসিন্দা আরতি দাস বলেন, “রাত সাড়ে আটটার সময় খাবার তৈরির জন্য রান্নাঘরে ছিলাম। সেই সময় বিকট শব্দ হল। তারপর পায়ের তলায় মাটি ভুমিকম্পের সময় যেরকম হয়েছিল তেমন করে কাঁপতে লাগল। ভয়ে ঘরের সবাইকে নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে পরি। রান্না ঘরের চালে ধাতুর টুকরো ছিটকে আসছিল। তাতে চাল ফুটো হয়ে যায়।’’ আরতিদেবী জানান, বাড়ির পাশে ক্ষেতে আমন ধান লাগিয়েছিলেন। লোকের ভিড়ে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিমানের বিকট আওয়াজে তাঁর ছ’মাসের নাতি দেবপ্রিয় অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হয় তাকে। এলাকার আর এক বাসিন্দা অমল দত্ত জানান, যেই জমিতে বিমানটি পড়ে বড় গর্ত হয়েছে সেই জমি তাঁর জ্যাঠা মশাই মনোরঞ্জন দত্তের। পাশেই অমল বাবুদের ক্ষেতে পাট লাগানো হয়েছিল। ভেঙে পড়া বিমান দেখতে আসা উৎসাহী মানুষের পায়ের চাপে সমস্ত পাটের চারা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন