নাটাবাড়ি হাই স্কুলে পড়ুয়াদের আম গাছের চারা দিচ্ছেন বিধায়ক। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
স্কুল পড়ুয়াদের হাতে চারাগাছ তুলে দিলেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। বিরোধীদের দাবি, এ ভাবেই অভিভাবকদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারে নেমেছেন বিধায়ক।
বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত রবীন্দ্রনাথবাবু সোমবার নিজের বিধানসভা এলাকার তিনটি হাই স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যে চারাগাছ বিলি করেন। দলীয় সূত্রের খবর, ওই স্কুলগুলির দশম-দ্বাদশ শ্রেণির এক হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রীর হাতে মালদহ থেকে আনা আম্রপালি প্রজাতির আম গাছের চারা বিলি করেছেন তিনি। অগস্ট মাসের মধ্যে বিধানসভা এলাকার সমস্ত হাই স্কুল, মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের হাতে একই ভাবে চারাগাছ তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। এ জন্য রকমারি চারা জোগাড়ের চেষ্টাও হচ্ছে।
এ দিন প্রথমে নাটাবাড়ি হাই স্কুলে ওই চারাগাছ বিলির অনুষ্ঠানে যোগ দেন তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান। সেখান থেকে রবীন্দ্রনাথবাবু যান বলরামপুর হাই স্কুল ও ধুমপুর হাই স্কুলে। আজ মঙ্গলবার দেওচড়াই হাই স্কুল-সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চারাগাছ বিলি করবেন তিনি। প্রতিটি স্কুলে ‘কৌশলে’ উন্নয়নের তালিকাও তুলে ধরেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তিনি বলেন, “সবুজায়ন, বিকল্প আয়ের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার ভাবনা নিয়ে আগামী প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সচেতনতা বাড়াতেই চারাগাছ বিলির কাজ হচ্ছে। গত বছরও ওই বিধানসভার বিভিন্ন স্কুলে নারকেলের চারা বিলি করা হয়েছে। এটা ফি বছরের রুটিন। ভোটের সঙ্গে চারা বিলির সম্পর্কই নেই।’’
দলের অন্দরের খবর, নাটাবাড়ি বিধানসভা এলাকায় মোট ৩২টি হাই স্কুল ও মাদ্রাসা রয়েছে। গড়ে এক একটি প্রতিষ্ঠানে দেড় হাজারের বেশি পড়ুয়া রয়েছে। সব মিলিয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ হাজার। তাদের মধ্যে অগস্টে প্রথম দফায় ওই বিধানসভা এলাকায় ২০ হাজার আম গাছের চারা বিলি করা হবে। দশম-দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ওই চারা দেওয়া হবে। পুজোর আগে পঞ্চম-নবম শ্রেণির ৩০ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রীকে রকমারি ফল গাছের চারা দেওয়া হবে। এ জন্য লেবু, বাতাবি, পেয়ারা, কামরাঙা চারা জোগাড়ের চেষ্টাও শুরু হয়েছে।
দলের এক নেতার কথায়, উন্নত প্রজাতির ফলের চারার প্রতি বাসিন্দাদের সবারই কমবেশি টান রয়েছে। বাড়ির পড়ুয়াদের মাধ্যমে ওই চারা গাছ আখেরে অভিভাবকদের মুখে হাসি ফোটাবে। মূলত ওই ভাবনা মাথায় রেখেই এ বার চারাগাছ বিলির ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তা ছাড়া গাছ বিলির অছিলায় প্রতিটি স্কুলে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দলমত নির্বিশেষে উপস্থিত অভিবাবকদের কাছেও বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ হচ্ছে। এলাকার সমস্যা নিয়েও কথা বলছেন অনেকে। ফলে স্থানীয় মানুষের চাহিদা, প্রত্যাশা পূরণ, ক্ষোভ বিষয়ে জানা সহজ হচ্ছে।
চারাগাছ বিলির অছিলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট রাজনীতির অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী তথা সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনন্ত রায় বলেন, “রাজ্যজুড়ে সবুজ ধ্বংসের প্রতিযোগিতা চলছে। সরকারি উদ্যোগ নেই। কিছু চারাগাছ বিলি করে ওই ব্যর্থতা আড়াল করা যাবে না। পড়ুয়াদের ব্যবহার করে বিধানসভার আগে মানুষের নজর ঘোরানোর চেষ্টা করেও আখেরে লাভ হবে না।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিল দে বলেন, “স্কুলে স্কুলে প্রচুর শিক্ষক পদ শূন্য। কোথাও পর্যাপ্ত ক্লাস নেই। সে সব পরিকাঠামো তৈরির দিকে শাসকদলের লোকেরা নজর দিলে ভাল হতো। কিন্তু বিধানসভার আগে চমক তৈরি করতে জেলায় সবুজায়নের মোড়কেও আসলে তৃণমূল রাজনীতি করছে।” ধুমপুর হাই স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা আহ্বায়ক পার্থপ্রতিম রায় ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। ওই প্রসঙ্গে পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, “চারাগাছ বিলির মত সামাজিক উদ্যোগেও যাঁরা রাজনীতি দেখেন মানুষই তাঁদের যোগ্য জবাব দেবেন।’’