মরণফাঁদঃ হিমঘরে গ্যাসে অসুস্থ ৯

সূত্রের খবর, বছর দু’য়েক আগে পরোরপাড় গ্রামে এই হিমঘরটি গড়ে ওঠে। আলিপুরদুয়ার শহরের কাছে হিমঘরটির আশেপাশে গ্রামের ঘরবাড়ি রয়েছে। এই মুহূর্তে হিমঘরে কৃষকদের প্রচুর আলু মজুদ রয়েছে। ফলে প্রতি দিনই দিনে-রাতে বিভিন্ন শিফটে সেখানে কাজ করছেন কর্মীরা।

Advertisement

পার্থ চক্রবর্তী

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:২০
Share:

রক্তাক্ত: হিমঘরে অ্যামোনিয়া গ্যাস ছড়িয়ে পড়ায় মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে গিয়েছে এক যুবকের। ছবি: নারায়ণ দে।

হিমঘর থেকে অ্যামোনিয়া গ্যাস লিক করে অসুস্থ হয়ে পড়লেন দুই মহিলা সহ ন’জন। তাঁদের মধ্যে আট জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বৃহস্পতিবার দুপুরে আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া পরোরপার গ্রামের একটি হিমঘরে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনায় অসুস্থদের মধ্যে দু’জনকে শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে আরও তিন জনকে সেখানে রেফার করেছেন আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

সূত্রের খবর, বছর দু’য়েক আগে পরোরপাড় গ্রামে এই হিমঘরটি গড়ে ওঠে। আলিপুরদুয়ার শহরের কাছে হিমঘরটির আশেপাশে গ্রামের ঘরবাড়ি রয়েছে। এই মুহূর্তে হিমঘরে কৃষকদের প্রচুর আলু মজুদ রয়েছে। ফলে প্রতি দিনই দিনে-রাতে বিভিন্ন শিফটে সেখানে কাজ করছেন কর্মীরা। যাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন মেশিনম্যান রয়েছেন। মূলত হিমঘরের মেশিন রুমেই তাদের ডিউটি। এ দিন ঘটনার সময় সেখানে আট জন কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

হিমঘর কর্তৃপক্ষের দাবি, চেম্বার থেকে পাইপলাইনের সাহায্যে অ্যামোনিয়া গ্যাস ঠান্ডা করার প্রক্রিয়া চলার সময় একটি ভাল্ভ থেকে গ্যাস লিক করে। যার জেরে মেশিন রুমের ডিউটিতে থাকা সাত জন ও পাশেই থাকা কোয়ার্টারে দুই মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মেশিন রুমে থাকা আরেক কর্মীও ওই গ্যাসে অসুস্থ হন।

Advertisement

ওই হিমঘরের কর্মী সোমনাথ প্রামাণিক বলেন, ‘‘একটু দূরেই আমরা কয়েক জন দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম। আচমকাই অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার ফেটে যাওয়ার মতো বিকট একটা শব্দ শুনতে পাই। তার পরেই চারদিকে গ্যাস ছড়িয়ে পড়া শুরু হয়। আমরা যে যে-দিকে পারি ছুটে পালাই। খানিকক্ষণ পর সেখানে ফিরে এসে দেখি অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছেন। অনেকের চোখের উপর সহ মুখের নানা জায়গা থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল।’’

দমকলের দু’টি ইঞ্জিন আলিপুরদুয়ার থেকে পরোরপাড়ে ছুটে যায়। তার আগেই অবশ্য অসুস্থ ন’জনকে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। যাঁদের মধ্যে এক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সুপার চিন্ময় বর্মণ বলেন, ‘‘আট জনের মধ্যে পাঁচ জনকে শিলিগুড়িতে রেফার করা হয়েছে। বাকি তিন জনকে আইসিইউ-তে রেখে চিকিৎসা চলছে।’’ হিমঘরের অন্যতম অংশীদার মনোজ দে বলেন, ‘‘অ্যামোনিয়া গ্যাসের চেম্বার ফেটে যাওয়ার কোনও ঘটনা ঘটেনি। ভাল্ভ লিক থেকেই এটা হয়েছে। জখমদের চিকিৎসার ভার হিমঘর কর্তৃপক্ষ নিয়েছেন।’’

এ দিকে, হিমঘরের এই দুর্ঘটনায় আশপাশের েলাকালয়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে অনেকে নিজেরাই নিরাপদ দূরত্বে চলে যায়। দমকল কর্মীরা আসপাশের এলাকার বাকি বাসিন্দাদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান। এরপর অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রতিরোধের যন্ত্রপাতির সাহায্যে পরিস্থিতি সামলান তাঁরা। ‘‘কেন এই ঘটনা ঘটল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে’’ বলে জানান আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীও।

গত বছর সেপ্টেম্বরে জলপাইগুড়ির কাছে রানিনগরেও হিমঘর থেকে গ্যাস ছড়ায়। তাতে বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন