প্রতীকী ছবি।
আরপিএফের তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে ধানের জমিতে পড়ে মৃত্যু হল কলকাতা পুলিশের এক কনস্টেবলের। শনিবার সকালে ধূপগুড়ি স্টেশন সংলগ্ন এলাকার ঘটনা। ধূপগুড়ি থানার পুলিশ জানিয়েছে, মৃত কনস্টেবল দিলীপকুমার রায় (৩৮) ধূপগুড়ির গাদং এলাকার কথাপাড়ার বাসিন্দা। কলকাতার উল্টোডাঙা থানার এক আধিকারিকের দেহরক্ষী ছিলেন।
মৃতের পরিবার জানিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আপ উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস থেকে ধূপগুড়ি স্টেশনে নামেন দিলীপ। প্ল্যাটফর্মে নামার পরেই হঠাৎ তাঁকে ধাওয়া করেন রেল পুলিশের এক কর্মী। দিলীপও তাঁকে দেখেই প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে স্টেশনের উল্টোদিকের রাস্তা ধরে ঊর্ধ্বশ্বাসে সার্ক রোডের দিকে ছুটতে শুরু করেন। হঠাৎই রাস্তায় একটি পাথরে হোঁচট খেয়ে ব্যাগপত্র-সমেত পাশের ধান খেতে মুখ থুবড়ে পড়েন দিলীপ।
সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাঁকে ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। তবে কেন আরপিএফকে দেখে তিনি পালাতে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে কি তিনি বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠেছিলেন এবং ধরা পড়ার ভয়েই পালানোর চেষ্টা করছিলেন? এই সম্ভাবনার বিযয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। রেল পুলিশ গোটা ঘটনায় তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে।
দিলীপের সঙ্গে একই ট্রেনে এসেছিলেন রাজ্য পুলিশের আরেক কনস্টেবল উপেন রায়। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘হাঁটু-সমান কাদায় ডুবে ছিল ওই ধানজমি। দিলীপবাবুকে যখন ওই কাদা থেকে টেনে তুলেই দেখি তাঁর মুখ থেকে রক্ত বেরোচ্ছে।’’ তিনি পুলিশকে জানান, ধূপগুড়ি স্টেশনে গাড়ি থামার পর আচমকাই প্ল্যাটফর্ম থেকে রাস্তার দিকে ছুটতে শুরু করেন দিলীপ।
মৃতের পরিবারের সন্দেহ, মারধরের জেরেই মৃত্যু হয়েছে দিলীপের। পরিবারের দাবি, দুর্ঘটনার আগে রেল পুলিশের সঙ্গে দিলীপের বচসা ও ধস্তাধস্তি হয় বলা তারা জেনেছে। তবে এ ব্যাপারে রাত পর্যন্ত থানায় অভিযোগ করেনি পরিবার। ধূপগুড়ি থানার আইসি সুবীর কর্মকার জানান, দেহটি ময়নাতন্তে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। ময়নাগুড়ি জিআরপি ওসি শুভজিৎ ঝা বলেন, ‘‘রেল পুলিশ নিজেদের মতো করে তদন্ত করছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’’ রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন প্ল্যাটফর্মে ডিউটিতে ছিলেন আরপিএফ জওয়ান কে পি রায়। তবে বিশু সুর নামে আরপিএফের সাদা পোশাকের অন্য এক জওয়ান দিলীপকে প্রথম তাড়া করেন।
ধূপগুড়ির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর কৃষ্ণদেব রায় মৃতের আত্মীয়। তিনি বলেন, ‘‘১৬ বছর ধরে কলকাতায় পুলিশের চাকরি করছে দিলীপ। ট্রেনে যাতায়াতও তার কাছে নতুন কিছু নয়। শুধু সঙ্গে টিকিট নেই বলে এ ভাবে মরণদৌড় দেওয়ার মতো মানুষ সে নয়। এই ঘটনার পিছনে অন্য কারণ রয়েছে।’’ মৃত পুলিশ কনস্টেবল পরিবারে তাঁর স্ত্রী এবং ন’বছরের এক পুত্র রয়েছে।