দুই শহরে তরজার কেন্দ্রে পার্টি অফিস, বিরক্ত পুলিশও

কিছু নেতার কাজে ক্ষোভ

এনজেপি নিয়ে দিন কয়েকের চাঞ্চল্যের পরেই এই বিতর্ক শুরু হয়। এনজেপিতে ব্যক্তিগত জমিতে তৈরি বিজেপির পার্টি অফিস ভাঙার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৯ ০২:৩০
Share:

বিক্ষোভ: পার্টি অফিস ভাঙচুরের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার এনজেপি এলাকায় বিজেপির মিছিল। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

তৃণমূলের কিছু ছোট নেতার আচরণ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে পুলিশের একাংশের মধ্যে। পুলিশকর্তাদের একাংশের দাবি, লোকসভা ভোটের পরে নানা এলাকায় স্থানীয় স্তরের ওই তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রকাশ্যে চলে আসছে। আর তার আঁচ গিয়ে পড়ছে পুলিশের উপরেই। পুলিশকেই গিয়ে গন্ডগোল মেটাতে হচ্ছে। তাই এই পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, তৃণমূলের জেলা নেতাদের উচিত, স্থানীয় স্তরের ওই নেতাদের সংযত আচরণ করার জন্য সতর্ক করা।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে এলাকার বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌতম দেবের বক্তব্য, ‘‘পুলিশ প্রশাসনকে বলেছি, যে কোনও ঘটনায় আইন মেনে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিতে হবে।’’ যা শুনে অনেকেই বলছেন, গৌতমবাবু সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনায় খুবই বিরক্ত, তাই ব্যবস্থা হোক, চান তিনি।

এনজেপি নিয়ে দিন কয়েকের চাঞ্চল্যের পরেই এই বিতর্ক শুরু হয়। এনজেপিতে ব্যক্তিগত জমিতে তৈরি বিজেপির পার্টি অফিস ভাঙার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপি সমর্থকদের একাধিক হোটেলে হামলার অভিযোগও উঠেছে ডাবগ্রাম ফুলবাড়িতে ব্লকের একাংশ তৃণমূল নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে। এমনই অভিযোগকে ঘিরে কার্যত অসন্তুষ্ট পুলিশ ও প্রশাসনিক মহলে।

Advertisement

তৃণমূলের অন্দরেরও খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ফুলবাড়ি ১ এবং ২ এলাকায় স্থানীয় স্তরে দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে বেরিয়ে পড়ে। তার পরে টাউন কমিটির দীর্ঘ দিনের বিরোধ নতুন করে শুরু হয়। দুই পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা হয়েছিল কোনওমতে। কিন্তু লোকসভা ভোটে এই বিধানসভায় ৮০ হাজারের বেশি ভোটে জেতে বিজেপি। তার পরেই রাজনৈতিক ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা না করে মারামারি, হুমকি, ভাঙচুর বা হামলার রাজনীতি শুরু হয়। আর তাতেই সমস্যায় পড়েছেন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা।

দু’দিন আগেই একাংশ নেতাদের কাজকর্ম নিয়ে পুলিশের তরফে দলের নেতৃত্বকে বিস্তারিত জানানো হয়। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পরেই এলাকার এক বড় নেতাকে ডেকে পাঠিয়ে ‘সংযত’ হতে বলা হয়েছে শিলিগুড়ি পুলিশের তরফে। আগামীতে তা না হলে পুলিশকে শাসক দলের কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হতে পারে বলে ওই নেতাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তৃণমূলের জেলা নেতারাও জানাচ্ছেন, স্থানীয় স্তরের নেতারা ভুল করছেন। রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলার বদলে আক্রমণ, হামলার অভিযোগ হলেই এলাকায় বিজেপি আরও সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে জমায়েত শুধু নয়, টানা কয়েক দিন ধরে প্রতিবাদ মিছিল, সভা করে মানুষের সহানুভূতি কুড়োনোর চেষ্টা করছে গেরুয়া শিবির। তাই বিজেপির কোনও পদক্ষেপের বিরোধিতা করতে গেলে মিছিল মিটিং করে প্রতিবাদ কর্মসূচি করতে হবে। তাতেই ঘাঁটি মজুবত থাকবে। অনেক নেতাই বলছেন, তা না করে সংঘাতের রাস্তায় গেলে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উল্টো ফল হতে পারে।

বিধানসভার অধিবেশন চলছে বলে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির বিধায়ক গৌতমবাবু কলকাতায়। তিনি শিলিগুড়ি ফিরে এসে ব্লকের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসতে পারেন। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘সব খবরই পাচ্ছি। বিজেপি সর্বত্র প্ররোচনা, গোলমাল অশান্তি তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই ফাঁদে পা দিলে চলবে না। ফিরে নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসব।’’

তৃণমূলের একটি সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, তৃণমূল নেত্রী শিখা চট্টোপাধ্যায় দল ছেড়েছেন। এনজেপি এলাকার এক প্রাক্তন কাউন্সিলর এবং এক যুব নেতাও বিজেপি’র দিকে পা বাড়িয়ে রেখেছেন। কিছু ট্রাক মালিক এবং ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে গেরুয়া শিবিরে গিয়েছেন। এখন তৃণমূল কী পদক্ষেপ করবে, তা নিয়ে দলে দু’রকম মত রয়েছে। কারও মত, কোনও স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিলে তিনি গেরুয়া শিবিরের দিকে ঝুঁকতে পারেন। আর এক পক্ষের মত, বিজেপিতে কেউ চলে যেতে পারেন, সেই ভয়ে চুপ করে থাকাও চলে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন