চব্বিশ ঘণ্টার বেশি সময় এক আইনজীবীকে জেরার নামে থানায় বসিয়ে রাখার অভিযোগ উঠল ভক্তিনগর থানার বিরুদ্ধে। আরও অভিযোগ, তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। এমনকী, আদালতেও তোলা হয়নি। এই নিয়ে শনিবার আইনজীবীরা ওই থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান। শেষে প্রবল চাপের মুখে শনিবার রাতে ওই আইনজীবীকে ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার। নথি জাল করে হলফনামা তৈরির অভিযোগে সে দিন শিলিগুড়ির এক আইনজীবীকে বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে আসা হয়। ওই আইনজীবীর পরিবারের দাবি, সেই সময় যে পুলিশের একাংশ তাঁদের জানায়, আইনজীবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও, রাতভর তাঁকে সরকারি ভাবে গ্রেফতার দেখানো হয়নি বলে অভিযোগ। এ দিন তাঁকে আদালতেও তোলা হয়নি। এর পরেই বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা ‘বেআইনি ভাবে আটকের’ অভিযোগ তুলে শনিবার রাতে ভক্তিনগর থানায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। গ্রেফতার না করে চব্বিশ ঘণ্টার বেশি কাউকে থানায় আটকে রাখা যায় না— সাফ জানিয়ে দেন আইনজীবীরা। তাঁদের আরও বক্তব্য, এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। এই অভিযোগে তাঁরা ভক্তিনগর থানার সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের দাবিও তুলেছেন।
আইনজীবীদের অভিযোগ পুলিশের উপর মহলের ভূমিকা নিয়েও। তাঁরা দাবি করেন, বিক্ষোভের সময় শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারকে ফোন করা হলেও কোনও ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এই আন্দোলন বিক্ষোভের সামনে পুলিশ পিছু হটে। শনিবার রাতে ব্যক্তিগত জামিনে ওই আইনজীবীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আইনজীবীরা দাবি করেন, বিক্ষোভের চাপে পুলিশের নথিতে শনিবার রাত আটটা নাগাদ ওই আইনজীবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে উল্লেখ্য করা হয়। ছেড়ে দেয়া হয় তার ঘণ্টাখানেক পরে।
কমিশনার সহ শিলিগুড়ি কমিশনারেটে কর্তারা এ দিন রাতে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কয়েক জন অফিসার ফোন কেটে দিয়েছেন। তবে পুলিশের একটি অংশের দাবি, কেন আইনজীবীকে শুক্রবার রাতে থানায় নিয়ে গিয়েও শনিবার পর্যন্ত গ্রেফতার দেখানো হল না, কেনই বা তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হল না— তা নিয়ে ধন্ধে রয়েছেন পুলিশ কর্তারাও। এক পদস্থ অফিসারের কথায়, ‘‘কী হয়েছে, না জেনে মন্তব্য করব না। থানার কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।’’
শহরের পঞ্জাবি পাড়ার বাসিন্দা আইনজীবী পশুপতি শাহের বিরুদ্ধে একটি জমি সংক্রান্ত মামলায় ভুয়ো হলফনামা তৈরির অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশের দাবি। ওই আইনজীবী নোটারির কাজ করেন। আইনজীবীর পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, গত শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ পশুপতিবাবুকে পুলিশ বাড়ি গিয়ে ধরে নিয়ে যায় থানায়। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবিও করা হয়। পশুপতিবাবুর স্ত্রী মমতা দেবী বলেন, ‘‘একে তো আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছে। তার পরে তাঁকে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবিও করা হয়।’’
আইনজীবীদের দাবি, শনিবার দিনভর থানায় গিয়ে খোঁজখবর করা হলেও কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি। কোন ধারায় গ্রেফতার করা হল, তা-ও জানানো হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী গ্রেফতারির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করাতে হবে অভিযুক্তকে। কিন্তু শনিবার দিনভর তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়নি। তার পরেই আইনজীবীরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, পশুপতিবাবকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশের নথিতেও উল্লেখ নেই।
বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুরেশ মিত্রুকা অভিযোগ করেন, ‘‘একজন আইনজীবীকে যে ভাবে গ্রেফতার না করেও রাতভর থানায় আটকে রাখা হল, তা আইনবিরুদ্ধ।’’ বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সম্পাদক চন্দন দে বলেন, ‘‘আইনজীবীর সঙ্গে এমন ব্যবহার হলে সাধারণ মানুষ কী সুবিচার পায় ভক্তিনগর থানায়, তা পরিষ্কার হয়ে গেল আজ। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব। দোষী অফিসারদের শাস্তি চাই।’’ পুলিশের একটি অংশের দাবি, জমি সংক্রান্ত মামলায় ধৃত এক জনের বয়ানের ভিত্তিতেই ওই আইনজীবীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জেরা করে তথ্য নেওয়ার পরে আইনজীবীকে ব্যক্তিগত জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।