গ্রেফতার খুনে জড়িত সন্দেহে সকলেই। — নিজস্ব চিত্র
ময়নাগুড়ি জোড়া খুনের কিনারা করল পুলিশ৷ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চক্রের সবাইকেই গ্রেফতার করা হল৷
গত ৩ সেপ্টেম্বর ময়নাগুড়ি বাইপাসে অসম মোড় ও ইন্দিরা মোড়ের মাঝে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে দু’টি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷ মৃত দু’জনের হাতে থাকা ট্যাটুর সূত্র ধরে তদন্ত চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে ওই দু’জনের নাম অজয় সিং ও জয়প্রকাশ সিং ৷ পেশায় লরি চালক। দুজনেরই বাড়ি উত্তর প্রদেশে ৷ তাদের লরিতে থাকা রাবার লুঠের উদ্দেশ্যেই দু’জনকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে৷
জোড়া খুনের ঘটনায় ৯ সেপ্টেম্বর পঙ্কজ জৈন নামে এক ব্যবসায়ীকে সল্টলেক থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ তার ঠিক একদিন পর শিলিগুড়ি থেকে তাপস পাল ও সায়ক দত্ত নামে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার পুলিশ মধ্যমগ্রাম থেকে এই চক্রের আরও চার পান্ডা মফিজ আলি, আবুল কাসেম, মহম্মদ মুস্তাকিন ও আমির হোসেন নামে চার জনকে গ্রেফতার করে ৷ এদের মধ্যে মফিজ ও আবুল লরি চালক ও খালাসিকে শ্বাসরোধ করে খুন করে বলে পুলিশের দাবি৷
পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, লরিতে করে প্রায় ষোলো লক্ষ টাকার রবার নিয়ে অজয় সিং ও জয়প্রকাশ সিং আগরতলা থেকে লুধিয়ানা যাচ্ছিলেন ৷ কোচবিহারের বক্সিরহাট সীমানা দিয়ে এ রাজ্যে ঢোকার আগেই অসমের বাসিন্দা মফিজ ও আবুল তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে লরিতে চেপে যায় ৷ তবে বক্সিরহাট চেকপোস্টে সিসি টিভি থাকায় ওই এলাকাটি তারা বাসে চেপে পাড় হয় ৷ এরপর চ্যাংরাবান্ধা হয়ে ময়নাগুড়িতে এসে মফিজ ও আবুল লরি চালক ও খালাসিকে খুন করে৷
পুলিশ জানিয়েছে, খুনের পর দেহ রাস্তার ধারে ফেলে মফিজ ও আবুল লরি নিয়ে শিলিগুড়ি যায়৷ সেখান থেকে কলকাতায় টেলিফোনে যোগাযাগ করে চোরাই মালের ব্যবসায়ী পঙ্কজের সঙ্গে৷ পঙ্কজ রবার নিতে রাজি হয়৷ পঙ্কজের নির্দেশেই তারপর তাপস ও সায়ক লরি থেকে রবার নামিয়ে প্রথমে একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে রাখে৷ তারপরই লরিটিকে ইসলামপুরের কাছে পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখে আসে মফিজরা৷ এরপর পঙ্কজের কাছে রবার পৌঁছে দিতে শিলিগুড়ি থেকে আরেকটি লরিতে তা তুলে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয় মফিজ ও আবুল৷ ইতিমধ্যেই তাদের সঙ্গে যোগ দেন এই চক্রের আরও দুই পান্ডা করণদিঘির বাসিন্দা মহম্মদ মুস্তাকিম ও আমির হোসেন৷
কিন্তু তারা কলকাতা পৌঁছানোর আগেই পুলিশ পঙ্কজকে ধরে ফেলে৷ এই অবস্থায় রবার নিয়ে কলকাতা সংলগ্ন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকে তারা৷ শেষ পর্যন্ত মধ্যমগ্রাম থেকে চারজনকেই ধরে ফেলে পুলিশ৷ তবে তারা যে লরিতে রবার তুলেছিল, সেই লরিটির হদিশ মেলেনি৷ জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি জানিয়েছেন, হেফাজতে নেওয়ার পর জেরা করে ওই রাবার ভর্তি লরি তারা কোথায় রেখেছে তা জানার চেষ্টা করা হবে।