রাখি বেঁধে মুখে হাসি চোখে জল

দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির পক্ষে জানানো হল, আর পাঁচটা সমস্যার চেয়েও বেশি ভুগতে হচ্ছে চিকিৎসা নিয়ে। ওষুধ-পথ্যের বড়ই অভাব। সরাসরি হাসপাতালে যেতে পারেন না অনেকেই।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৭ ০২:৩৪
Share:

বন্ধন: রাখি পরিয়ে দিচ্ছেন যৌনপল্লির তরুণীরা। নিজস্ব চিত্র

রাখি পরাতে গিয়ে বারেবারেই হাত কেঁপে যাচ্ছিল কারও। কেউ রাখি পরানোর সময়ে আনমনা হয়ে ফিতের ফাঁস পরাতে গোলমাল করে ফেলছিল। কেউ রাখি পরিয়ে ওড়নায় চোখের জন আড়াল করতে ব্যস্ত। সোমবার দুপুরে রাখিবন্ধনে যোগ দিতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন শিলিগুড়ির সহকারী পুলিশ কমিশনার থেনড্রুপ শেরপা, ইন্সপেক্টর ইনচার্জ দেবাশিস বসু, ওসি মৃন্ময় ঘোষের মতো অফিসারেরা। তাঁদের রাখি পরালেন শিলিগুড়ির যৌনপল্লির একদল তরুণী। কয়েক জন তরুণী বললেন, ‘‘অনেক পুরনো কথা মনে পড়ে গেল। তাই চোখে জল এসে গেল।’’ পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে বললেন, ‘‘না, না, আমরা এতটুকুও কষ্টে নেই। ভালই আছি।’’

Advertisement

কিন্তু, সমাজে অন্ধকার দুনিয়া হিসেবে যা পরিচিত সেই যৌনপল্লিতে ‘ভাল থাকা’টা যে সহজ নয়, তা অবশ্য খোলাখুলি বলেই দিলেন কয়েক জন। তবে সরাসরি কোউ ক্ষোভ উগড়ে দেননি। আড়ালে-আবডাল খুঁজে কেউ বলেছেন, রাত-বিরেতে পুলিশ নজরদারি বাড়ানো দরকার। কেউ আবার যৌনপল্লির শিশুদের পড়াশোনার জন্য আরও একটু উন্নত মানের স্কুল করা যায় কি না, সে জন্য আর্জি জানিয়েছেন। আবার বয়স্কা, অশক্ত হয়ে পড়া মহিলারা যাতে পুনর্বাসন পান, সে জন্যও একান্তে অনুরোধ গিয়েছে পুলিশকর্তার কাছে। আবার কেউ বলেছেন, মশা নিয়ন্ত্রণের কাজটা ওই এলাকায় ভাল হয় না। পানীয় জলের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। এলাকায় জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ নিয়মিত না হওয়ায় দুর্গন্ধ থাকে প্রায় সারা বছর। ফি বর্ষায় সমস্যা তীব্র হয়ে ওঠে বলে জানান তাঁরা।

দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির পক্ষে জানানো হল, আর পাঁচটা সমস্যার চেয়েও বেশি ভুগতে হচ্ছে চিকিৎসা নিয়ে। ওষুধ-পথ্যের বড়ই অভাব। সরাসরি হাসপাতালে যেতে পারেন না অনেকেই। এলাকায় এক জন চিকিৎসক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিয়মিত বসেন। কিন্তু পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকায় রোগিণী ও তাঁদের স্বজনদের বেশি দিন ভুগতে হয় বলে চিকিৎসক কৌশিক সরকারও জানান। চিকিৎসক বলেন, ‘‘যাঁরা চিকিৎসা করাতে আসেন, তাঁদের একাংশের ঠিক মতো খাবার জোটাই মুশকিল। বাইরে থেকে ওষুধ কিনবে কী ভাবে! এটা সমাজের দায়িত্বশীলদের দেখতে হবে।’’

Advertisement

দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি ও উত্তরবঙ্গের হিন্দিভাষী সমাজের পক্ষ থেকে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। হিন্দিভাষী সমাজের সভাপতি সঞ্জয় টিব্রেয়াল জানান, তাঁরা যৌনপল্লির পড়ুয়াদের পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় বই-খাতা-পেন-পেনসিল সরবরাহ করার দায়িত্ব নেবেন। রাখি পরানোর পরে মিষ্টিমুখও হল। অনুষ্ঠানের পরে এসিপি বললেন, ‘‘একটা নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা হল। সব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন