birpara

ডলোমাইটের গুঁড়োয় ‘দূষণ’, শ্বাসকষ্টে সমস্যা

অভিযোগ, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলা এই গোটা প্রক্রিয়ায় বাতাসে উড়তে থাকে ডলোমাইটের গুঁড়ো। যা ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। আর কখনও হাওয়া বইলে তো কথাই নেই।

Advertisement

সুমন দাস

বীরপাড়া শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৩৬
Share:

ডলোমাইট থেকে ধুলোয় ছড়াচ্ছে দূষণ। বীরপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে ডলোমাইটের গুঁড়ো। যা ছড়িয়ে পড়ছে গোটা এলাকায়। এক দিন-দু’দিন নয়, বছরের পরে বছর ধরে আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ায় এই সমস্যা চলছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, ডলোমাইট ‘দূষণে’ এলাকাবাসী শুধু অতিষ্ঠই নন, তাদের একটা অংশ ভুগছেন শ্বাসকষ্টের সমস্যাতেও। নষ্ট হচ্ছে প্রচুর গাছ। ডলোমাইটের উপস্থিতিতে চা পাতার গুণমানও নষ্ট হয় বলে নানা সময়ে অভিযোগ তোলেন বাগান কর্তৃপক্ষ। তার পরেও এই দূষণ প্রতিরোধে এত দিনেও কোনও ব্যবস্থা না হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই এলাকায় বাড়ছে ক্ষোভ। প্রশাসনের অবশ্য দাবি, এলাকায় দূষণ নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।

Advertisement

প্রতিদিনই সকাল হতে না হতেই ভুটান পাহাড় থেকে ডলোমাইট বোঝাই গাড়ি পৌঁছতে শুরু করে বীরপাড়ার দলগাঁও রেল স্টেশনে। রেল সূত্রের খবর, রাত পর্যন্ত ডলোমাইট বোঝাই এমন কয়েকশো গাড়ি আসে দলগাঁওয়ে। সেখান থেকে মালবাহী ট্রেনে সেই ডলোমাইট চলে যায় দেশের নানা প্রান্তে। অভিযোগ, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলা এই গোটা প্রক্রিয়ায় বাতাসে উড়তে থাকে ডলোমাইটের গুঁড়ো। যা ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। আর কখনও হাওয়া বইলে তো কথাই নেই।

মাদারিহাট বীরপাড়া ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শরীরে ডলোমাইটের ধুলো প্রবেশ করলে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের সৃষ্টি হয়, যা সারে না। একে সিলিকোসিস বলে। দীর্ঘদিন ধুলোর পরিবেশে থাকলে এই রোগ হতে পারে। এতে ফুসফুসে ধুলো জমে যায়। চর্মরোগ, চোখের সমস্যা হতে পারে।’’ প্রতিকার হিসেবে জানান, এ সব অঞ্চলে মাস্ক, ফুলহাতা জামা পরা জরুরি।

Advertisement

বীরপাড়ায় ডলোমাইটের দূষণ প্রতিরোধে বিভিন্ন সময় আন্দোলনে নামতে দেখা গিয়েছে শাসক-বিরোধী সব পক্ষকেই। এমনকি, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও দলগাঁও স্টেশন থেকে ডলোমাইট লোডিং বন্ধের দাবিতে একাধিক বার সরব হয়েছে বিজেপি। দলের মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ টিগ্গা বলেন, “দলগাঁও স্টেশনে ডলোমাইটের লোডিং-আনলোডিং বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে আমরা আন্দোলন করছি। আমাদের আন্দোলনের জেরে রেল এই লোডিং-আনলোডিং মুজনাই স্টেশনে সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু এ জন্য প্রয়োজনীয় জমির ব্যবস্থা রাজ্যকে করতে হবে।” তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান মৃদুল গোস্বামী বলেন, “বীরপাড়ায় ডলোমাইট সমস্যা নিয়ে বিজেপি নয়, তৃণমূলই প্রথম থেকে সরব ছিল। এই সমস্যা মেটাতে জমির কোনও সমস্যা হবে না। তবে রেলকে আগে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

রেলের আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম দিলীপকুমার সিংহ অবশ্য বলেন, “ডলোমাইট নিয়ে অভিযোগ ওঠার পরে রেলের তরফে দলগাঁও স্টেশনের পাশে এয়ার পলিউশন ইন্ডিকেটর লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টা সেই ইন্ডিকেটরে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এবং তাতে দেখা যাচ্ছে, এলাকায় কোনও দূষণ নেই।” তবে রেল-কর্তারা জানিয়েছেন, দলগাঁও লাগোয়া এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় মুজনাই স্টেশনকেও এ কাজে সংযোজন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মাদারিহাটের বিডিও শ্যারম তামাং বলেন, “বীরপাড়ায় দূষণ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন