ধূপগুড়িতে বন্ধ লগ্নি সংস্থার এজেন্ট আলু চাষির মৃত্যু

সারদা কাণ্ডের পরে রাতারাতি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল একটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা। বিপাকে পড়েছিলেন সংস্থার এজেন্ট ধূপগুড়ির আলুচাষি নিত্যগোপাল বর্মন। তাঁর হাত দিয়েই যে গ্রামের বহু মানুষ তখন বেশি সুদের আশায় প্রায় দেড় লক্ষ টাকা জমা করে ফেলেছেন ওই সংস্থায়। টাকা ফেরতের জন্য চাপ বাড়ছিল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০৪:৫৬
Share:

আত্মঘাতী আলুচাষি নিত্যগোপাল বর্মনের (ইনসেটে) দেহ ঘিরে গ্রামবাসীদের ভিড়। ছবি: রাজকুমার মোদক।

সারদা কাণ্ডের পরে রাতারাতি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল একটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা। বিপাকে পড়েছিলেন সংস্থার এজেন্ট ধূপগুড়ির আলুচাষি নিত্যগোপাল বর্মন। তাঁর হাত দিয়েই যে গ্রামের বহু মানুষ তখন বেশি সুদের আশায় প্রায় দেড় লক্ষ টাকা জমা করে ফেলেছেন ওই সংস্থায়। টাকা ফেরতের জন্য চাপ বাড়ছিল। গত বছর নিজের ৫ বিঘা জমিতে আলু ফলিয়ে কিছু টাকা শোধও করেছিলেন। অপমান থেকে বাঁচতে এ বার আরও ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আলু ফলিয়েছিলেন। ৩ লক্ষাধিক টাকা ঋণও নেন। কিন্তু আলুর দাম না মেলায় ভেঙে পড়েন। মঙ্গলবার গভীর রাতে ধূপগুড়ি ব্লকের শালবাড়ি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ফটকটারি গ্রামে বাড়ি লাগোয়া আলু খেতের পাশের একটি গাছ থেকে নিত্যগোপালবাবুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে আছে। রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা ও এক দাদাও। দাদা দিনমজুর। ঋণের বোঝা ক্রমশ বাড়ছিল। মাঝে মধ্যেই আত্মহত্যার হুমকিও দিচ্ছিলেন তিনি। তাঁর বাড়ির লোকজন জানান, এর আগে তিন বার রাতে ঘর থেকে দড়ি নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। স্ত্রী ও তাঁর কিশোরী মেয়ে দেখে ফেলায় সে যাত্রায় তাঁকে ঠেকানো যায়। তাঁর স্ত্রী দিনবালা জানান, তাঁর স্বামীর সংস্থায় যাঁরা লগ্নি করেছিলেন, তাঁরা টাকা ফেরতের জন্য চাপ দিতেন। গত বার আলু চাষে ভাল লাভ হয়েছিল। তাই ঝুঁকি নিয়েই এ বার আবার ঋণ নিয়ে আলু চাষ করতে গিয়েছিলেন। দিনবালা বলেন, “কিন্তু এমন পরিস্থিতি হল, নিজেকেই শেষ করে দিলেন।” নিত্যগোপালবাবু তিনটি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। তার মধ্যে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে নিয়েছিলেন ৮৫ হাজার টাকা। ওই ব্যাঙ্কের ভাইস চেয়ারম্যান কমল রায় বলেন, “এটি একটি বিশেষ ঘটনা বলে ধরে নিয়ে আমরা নিত্যগোপালবাবুর ঋণ মকুব করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়ের অবশ্য দাবি, “কোনও চাষিই চাষাবাদজনিত কারণে আত্মঘাতী হননি। সব ক’টি মৃত্যুর ক্ষেত্রে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার তদন্ত করে আমাদের রিপোর্ট দিয়েছেন। তবে সব মৃত্যুই দুঃখজনক।” নিত্যগোপালবাবুর মৃত্যুর ক্ষেত্রেও জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। অরূপবাবুর দাবি, বামেদের সময় অনেক বার জলের দরে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন কৃষকরা। তাঁর দাবি, তাঁদের সরকার চাষিদের প্রতি সংবেদনশীল।

Advertisement

তবে এ দিন আলু চাষিদের সঙ্কট নিয়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর দ্বারস্থ হল বামফ্রন্টের পরিষদীয় দল। সিপিএমের আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে বাম বিধায়কদের প্রতিনিধি দল আত্মঘাতী চাষির বাড়িতে গিয়েছিলেন। বুধবার তাঁরা রাজ্যপালের কাছে যান। পরে আনিসুর বলেন, “আলু চাষিদের আত্মহত্যা সম্পর্কে নানা কথা শোনা যাচ্ছিল। রাজ্যপালকে বলেছি, আমরা দেখে এসেছি কী অবস্থায় তাঁরা আছেন। চাষের খরচটা পর্যন্ত তাঁরা এ বার তুলতে পারেননি। তাই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন।” রাজ্যপাল বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন বলে আনিসুরের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন