দুই শহরের ফল নিয়ে উদ্বেগ

চাপ বাড়ছে পড়ুয়াদের

উচ্চমাধ্যমিকেও মেধা তালিকার ধারেকাছে নেই জলপাইগুড়ি শহরের পরীক্ষার্থীরা। চলতি বছরে নয়, গত তিন বছরেই জলপাইগুড়ি শহরের পড়ুয়ারা মেধা তালিকায় থাকতে পারেনি। এই তথ্যেই উদ্বিগ্ন শহরের শিক্ষাবিদেরা। তবে কী কোনও কারণে পিছিয়ে পড়ছে শহরের স্কুলপড়ুয়ারা? গত তিন বছরের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে অন্তত নম্বরের নিরিখে তেমনই ইঙ্গিত মিলছে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০২:৪২
Share:

উচ্চমাধ্যমিকেও মেধা তালিকার ধারেকাছে নেই জলপাইগুড়ি শহরের পরীক্ষার্থীরা। চলতি বছরে নয়, গত তিন বছরেই জলপাইগুড়ি শহরের পড়ুয়ারা মেধা তালিকায় থাকতে পারেনি। এই তথ্যেই উদ্বিগ্ন শহরের শিক্ষাবিদেরা। তবে কী কোনও কারণে পিছিয়ে পড়ছে শহরের স্কুলপড়ুয়ারা? গত তিন বছরের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে অন্তত নম্বরের নিরিখে তেমনই ইঙ্গিত মিলছে।

Advertisement

অতিরিক্ত চাপের কারণেই শহরের পড়ুয়াদের নম্বর কমছে বলে দাবি করেছেন একাংশ শিক্ষাবিদ। অধিকাংশ স্কুলের প্রথম এবং দ্বিতীয় সারির ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকাংশেরই প্রতি বিষয়ে গৃহশিক্ষক রয়েছে। কোনও কোনও বিষয়ে আবার দু’জন করে গৃহশিক্ষকও রয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যে পরপর প্রাইভেট টিউশনে গিয়ে, নোট মুখস্থ করে পড়ুয়ারা আদৌও পাঠ্যবই পড়ার সময়ই পায় না বলে দাবি করেছেন শিক্ষকদের অনেকেই। সেই সঙ্গে ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্প, আঁকার ক্লাস, সাঁতারের মতো কোচিংও রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন চাপ ক্রমশ বেড়েই চলেছে পড়ুয়াদের উপরে। তার জেরেই খুঁটিয়ে পড়ার সুযোগ বা মানসিক ইচ্ছে পড়ুয়াদের না হওয়াটাই স্বাভবিক বলে মনে করেন জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধীরাজমোহন ঘোষ।

ধীরাজবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পুরোটা কিন্তু বদলায়নি, কিন্তু বর্তমানে পড়াশোনার ধরন একেবারে বদলে গিয়েছে। প্রতি বিষয়ে এক জন এমনকী দু-জন করে গৃহশিক্ষক রাখলে নিশ্চিন্ত হন। তার সঙ্গে আবার নানা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার কোচিংও এখন একাদশ শ্রেণিতে থেকে শুরু হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এত চাপ একজন পড়ুয়া নেবে কী করে, তাই কোচিং হচ্ছে। কিন্তু পাঠ্যবইয়ের অনেক কিছুই পড়ুয়াদের অজানা থেকে যাচ্ছে। নম্বরও কমছে।’’

Advertisement

এই শহুরে চাপ না থাকাতেই গ্রামের স্কুলের পড়ুয়ারা টেক্কা দিতে শুরু করেছে বলে দাবি। এ বারের পরীক্ষায় শহর লাগোয়া ঘুঘুডাঙা হাইস্কুলের পড়ুয়া তাপস দাস পেয়েছে ৪৬৩, মণ্ডলঘাটের স্কুল ছাত্র ভাস্কর দাস পেয়েছে ৪৬০, হলদিবাড়ির প্রত্যন্ত গ্রাম হেমকুমারীর ছাত্র ডন সরকার পেয়েছে ৪৩৮। জলপাইগুড়ি শহরের সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে জেলা স্কুলের ছাত্র সৌম্যদীপ বসু ৪৬৯। শহরের অন্য স্কুলের নম্বরও তুলনামূলক কময়। তার থেকে এগিয়ে রয়েছে লাগোয়া গ্রামের স্কুলগুলি।

চাপের সঙ্গে এখনকার শহরের স্কুলের পঠনপাঠন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন শিক্ষকরা। ফণীন্দ্রদেব ইন্সটিটিউশনের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুজন সোমরায় বলেন, ‘‘এখন স্কুলগুলিতে কতটা নিবিড় ভাবে পড়ুয়াদের দিকে নজর দেওয়া হয় সেটাও প্রশ্ন। শিক্ষকদের দায়বদ্ধতায় কোন ঘাটতি থাকা বাঞ্ছনীয় নয়।’’ স্কুলের দায়বদ্ধতা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তপন মিত্রের ব্যাখ্যা, ‘‘এখন অভিভাবকদের অনেকেই মনে করে প্রাইভেট কোচিঙের পড়াই মূল, তাই স্কুলে আদৌও ক্লাস হচ্ছে কি না, তার খেয়াল কেউ রাখে না। আগে অভিভাবকরা সচেতন ছিল বলে স্কুল কর্তৃপক্ষের ওপরে একটা চাপও থাকত।’’ সদর গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অর্পণা বাগচি অবশ্য দায়বদ্ধতায় ঘাটতির কথা মানতে চাননি। তাঁর পাল্টা যুক্তি, ‘‘এখন স্কুলের ওপরে অভিভাবকদের অনেকেই ভরসা রাখতে রাজি নন। তাঁরা যত পারেন ছেলে-মেয়েদের কোচিঙে পাঠাচ্ছেন। সেখানে শুধু নোট মুখস্থ হচ্ছে। কিন্তু পুরো পাঠ্যবই না পড়লে উচ্চমাধ্যমিক তো বটেই মাধ্যমিকেও ভাল নম্বর সম্ভব নয়।’’

শিক্ষাবিদদের ব্যাখ্যায় বারবার ঘুরে আসছে পড়ুয়াদের ওপরে অতিরিক্ত চাপের তত্ত্ব। যাকে অনেকে শহুরে চাপ বলে দাবি করেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আশিস সরকার। তিনি বলেন, ‘‘অতিরিক্ত চাপে পড়ুয়াদের মন যন্ত্রের মতো আচরণ করতে শুরু করে। মনের মধ্যে এক ধরনের ক্লান্তি-আলস্যের জন্ম হয়। সেটাও ভেবে দেখা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন