ভোর হতেই আগে লাইন মেয়েদের

মহানন্দা, ফুলহার এবং গঙ্গার জলে ভাসছে মালদহ জেলার একাংশ। বানভাসি হয়ে পড়েছেন প্রায় দশ লক্ষ মানুষ। জেলা প্রশাসনের তরফে ত্রাণ শিবির খোলা হলেও ঠাঁই মেলেনি লক্ষ লক্ষ মানুষের। আর যাঁরা ঠাঁই পেয়েছেন, তাঁদের ভুগতে হচ্ছে একাধিক সমস্যায়।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ১০:০০
Share:

অব্যবস্থা: শৌচাগারের অভাব। দীর্ঘ লাইনে বন্যায় ঘরহারারা। নিজস্ব চিত্র

ভোরের আলো না ফুটতেই মেয়েদের ঘুম থেকে টেনে তুলছেন মায়েরা। পড়তে বসার জন্য বা অন্য কোনও কারণে নয়, লোটা, বালতি নিয়ে শৌচাগারে ছুটতে। কারণ সকাল হলেই সেখানে লাইন পড়ে যাবে পুরুষদের। ত্রাণ শিবিরগুলিতে পর্যাপ্ত শৌচাগার না থাকায় ক্ষোভে ফুঁসছেন বানভাসি পরিবারগুলি। তাঁদের অভিযোগ, কোনও শিবিরে দু’হাজার, আবার কোথাও দেড় হাজার মানুষ রয়েছেন। অথচ, শৌচাগার পাঁচ কিংবা ছ’টি। যদিও সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুরসভা ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা।

Advertisement

মহানন্দা, ফুলহার এবং গঙ্গার জলে ভাসছে মালদহ জেলার একাংশ। বানভাসি হয়ে পড়েছেন প্রায় দশ লক্ষ মানুষ। জেলা প্রশাসনের তরফে ত্রাণ শিবির খোলা হলেও ঠাঁই মেলেনি লক্ষ লক্ষ মানুষের। আর যাঁরা ঠাঁই পেয়েছেন, তাঁদের ভুগতে হচ্ছে একাধিক সমস্যায়। ইংরেজবাজার শহরের চিন্তামণি চমৎকার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন দু’হাজার মানুষ। অথচ এই স্কুলে রয়েছে মাত্র ছ’টি শৌচাগার। এক আশ্রিতা বলেন, ‘‘পুরুষদের সঙ্গে আমরা লাইনে দাঁড়ালেও মেয়েরা লজ্জা পায়। তাই মেয়েদের ভোর বেলাতেই শৌচাগার যওয়ার জন্য তুলে দিতে হচ্ছে।’’ এ দিন সকালে ৩০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ পান ওই ত্রাণ শিবিরেই শরনার্থী স্বপন বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করে থাকার পর শৌচাগারে যাওয়ার সুযোগ পাই। আবার বসতে না বসতেই ঝাঁপে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যাচ্ছে। অনেকে সহ্য করতে না পেড়ে রাস্তার ধারের শৌচাগারে ছুটছেন।’’

হরিভূষণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩০০ জন বানভাসী থাকলেও, তাঁদের ব্যবহারের জন্য রয়েছে মাত্র একটি শৌচাগার।

Advertisement

তবে মঙ্গলবার থেকে জল ঢুকেছে শৌচাগারেও। ফলে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের ছুটতে হচ্ছে অন্যত্র। এ ছাড়া অক্রুরমণি করোনেশন ইনস্টিটিউশনে দেড় হাজার মানুষের জন্য পাঁচটি, বার্লো উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে হাজার মানুষের জন্য চারটি শৌচাগার রয়েছে। শুধু শহর নয়, গ্রামগঞ্জের ত্রাণ শিবিরগুলিতেও শৌচাগার নিয়ে উঠছে বিস্তর অভিযোগ।

শৌচাগারের সংখ্যা কম থাকার পাশাপাশি তা নিয়মিত পরিষ্কার হয় না বলে অভিযোগ। হরিভূষণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শরণার্থী বলেন, ‘‘শৌচাগার পরিষ্কার করার জন্য পাঁচ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। অথচ কাজ কিছুই হয় না।’’ ইংরেজবাজার পুরসভা ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকার বলেন, ‘‘অস্থায়ী শৌচাগার তৈরির বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। শহরের সমস্ত শৌচাগারগুলি যাতে বিনামূল্যে বানভাসিদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়, সেই বিষয়েও চেষ্টা
চালানো হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন