লেবেল লাগান মদের বাক্সে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এল কোচবিহার বিটি অ্যান্ড ইভিনিং কলেজে। বৃহস্পতিবার ছিল স্নাতকস্তরের প্রথম বর্ষের দর্শনের পরীক্ষা। প্রশ্নপত্র গুলি ছোট প্যাকেটে ভরে ওই বাক্সে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ আগে কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপকরা সিল করা ওই বাক্স খুলতে গিয়ে বিষয়টি দেখে হকচকিয়ে যান। কী করে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি কলেজে এমন ভাবে প্রশ্নপত্র পাঠানো হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকী বিটি অ্যান্ড ইভিনিং কলেজের এক অধ্যাপক মদের লেবেল লাগানো বোতল ভরার বাক্সে এভাবে প্রশ্নপত্র পাঠানোর স্লিপ সাঁটা ছবিও ফেসবুকে পোস্ট করেন। তা নিয়েই হইচই শুরু হয়।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘ বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ামক বিভাগের তরফেই দেখা হয়। ঠিক কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বিভাগের নিয়ামক সুশান্ত দাস জানান, প্রশ্নপত্র যেখানে ছাপা হয় সেখান থেকেই প্যাকিং করে কলেজে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, ‘‘তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিয়ম মতো ছোট প্যাকেটে প্রশ্নপত্র ভরে বাক্সে রাখা হয়। সেই বাক্স প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো থাকে। তার উপর চটের ব্যাগ দিয়ে সিল করা হয়। ওই বাক্স কোথা থেকে এল তা স্পষ্ট হচ্ছে না।’’ তা ছাড়া পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি বা কলেজের অধ্যক্ষ বিকেল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কিছু জানায়নি বলে সুশান্তবাবু দাবি করেন।
এদিকে ফেসবুকে ওই বাক্সের যে ছবি দেওয়া হয়েছে এ দিন বিকেলের মধ্যেই তা ৪৩ জন ‘লাইক’ করেন। ‘কমেন্ট’ দেন ২৬জন। তাঁদের বেশিরভাগ ওই ঘটনার কড়া সমালোচনা করে মন্তব্য লিখেছেন। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের একজন লিখেছেন, “এ দুরবস্থা” । অন্য একজনের মন্তব্য, “অফিসাররা এ প্রশ্নগুলো পছন্দ করেছেন।” অন্য একজনের কটাক্ষ, “এটা সত্যিই অফিসারদের পছন্দ।” এক ছাত্রী আবার লিখেছেন, “বা! বিশ্ববিদ্যালয় এখন হুইস্কি বিলোচ্ছে, দারুণ ব্যাপার।” কোচবিহার বিটি অ্যান্ড ইভনিং কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চঞ্চল মন্ডল বলেন, “ওই ভাবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের প্যাকেট পাঠানর ঘটনা শোভনীয় মনে হয়নি। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।”
ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন বাম ও তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন নেতৃত্বও। ওয়েবকুটার কোচবিহার জেলা সম্পাদক জয়দীপ সরকার বলেন, “মদের লেবেল ছাপান বাক্সে প্রশ্নপত্র পাঠানোর ঘটনায় পরীক্ষা সংক্রান্ত ব্যাপারে কোন সমস্যা হয়নি। তবে পুরো বিষয়টি অশোভন ও দৃষ্টিকটু লেগেছে। আগে কোনও পরীক্ষার ক্ষেত্রে এমন অভিজ্ঞতা হয়নি। সাংগঠনিকভাবেও ওই বিষয়টি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে আনছি।” গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূল প্রভাবিত ওয়েস্টবেঙ্গল কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি প্রফেসার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের কোচবিহার জেলা সভাপতি হরিগোপাল মল্লিক বলেন, “এমন ঘটনা হয়ে থাকলে তা অত্যন্ত অনভিপ্রেত। কাদের গাফিলতিতে এমন ঘটনা ঘটল সেটা তদন্ত করে দেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানাব।”
কলেজ সূত্রেই জানা গিয়েছে, ৬ এপ্রিল থেকে স্নাতক স্তরের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে দর্শন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিটি ইভনিং কলেজে পৌঁছোয়। এতদিন তা কলেজের ভল্টে রাখা ছিল। এদিন পরীক্ষা শুরুর আধ ঘন্টা আগে ওই প্রশ্নপত্র বের করা হতেই শোরগোল পড়ে যায়। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ কটাক্ষের সুরে বলেন, “ যারা ওই কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের কাছে মদের বাক্স এত বেশী জমে গিয়েছিল যে তার সদ্বব্যবহার করেছেন মনে হচ্ছে!” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “ আমি এমন কোনও ঘটনার কোথা জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।”