কাল বিশ্ব পরিবেশ দিবস

এক সময়ের জীবনরেখা মৃতপ্রায় দূষণে

কোথাও জলে ভাসছে আবর্জনা। কোথাও নদীর পাড়ে ডাঁই হয়ে রয়েছে নোংরা, প্লাস্টিক। ক্রমশ বেড়ে চলা দূষণের জেরে তুফানগঞ্জের ‘লাইফ লাইন’ বলে পরিচিত রায়ডাক নদীর এখন এমনই হাল। পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের কর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত পুরসভা ভোটেও ওই নদী দূষণের দায় নিয়ে যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলির চাপানউতোর প্রকাশ্যে এসেছে।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

তুফানগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০২:৪৪
Share:

রায়ডাক নদীর পাড়ে ছড়াচ্ছে দূষণ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

কোথাও জলে ভাসছে আবর্জনা। কোথাও নদীর পাড়ে ডাঁই হয়ে রয়েছে নোংরা, প্লাস্টিক। ক্রমশ বেড়ে চলা দূষণের জেরে তুফানগঞ্জের ‘লাইফ লাইন’ বলে পরিচিত রায়ডাক নদীর এখন এমনই হাল। পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের কর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত পুরসভা ভোটেও ওই নদী দূষণের দায় নিয়ে যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলির চাপানউতোর প্রকাশ্যে এসেছে। জনতার রায়ে পুরবোর্ডের ক্ষমতা বদল হয়েছে। তার পরেও অবশ্য রায়ডাক যেমন বিপন্ন ছিল তেমনই রয়েছে। আর দুর্গন্ধে নাকাল বাসিন্দারা নদী লাগোয়া এলাকায় আগের মতই নাকে রুমাল চাপা দিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন।

Advertisement

বাসিন্দারা জানান, কয়েক দশক আগে তুফানগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল অনেকটাই রায়ডাক নির্ভর। স্বাধীনতার আগে তুফানগঞ্জ শহরের গা ঘেঁষে ছিল রায়ডাকের মূল প্রবাহপথ। যা এখন মরা রায়ডাকের খাত নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। ওই জল পথ ব্যবহার করে বাংলাদেশের সঙ্গে নৌবাণিজ্য চলত। খাত বদলেও অবশ্য রায়ডাকের বিস্তীর্ণ প্রবাহ পথ তুফানগঞ্জ শহরের গা ঘেঁষেই রয়েছে। শহরের ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া ওই নদীর পাড়ে বাম আমলে পুরসভার তরফে সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছিল। কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে যা খারাপ হয়ে যায়।

ওই প্রবাহ পথ ধরেই ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক চিরে রায়ডাক এগিয়েছে। এরই লাগোয়া বিবেকানন্দ হাইস্কুল ও শ্মশান এলাকায় পুরসভার কেনা প্রায় ১০ বিঘা জমিতে বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে সংগৃহীত আবর্জনার স্তূপ জমেছে। শহরের মরা রায়ডাকের খাত ও পাড়ে আবর্জনার ডাঁই থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অভিযোগ, বৃষ্টি হলেই দুটি এলাকা থেকে আবর্জনা ভেসে নদীর জলে মিশছে। বাড়ছে দূষণ। দুর্গন্ধে নাকাল হচ্ছেন বাসিন্দারা।

Advertisement

তুফানগঞ্জের বাসিন্দা পরিবেশকর্মী এক বিজ্ঞান শিক্ষক সুপ্রিয় দত্ত বলেন, “রায়ডাকের সঙ্গে তুফানগঞ্জের নাড়ির সম্পর্ক। অথচ সেই নদীর বর্তমান, পুরানো দুটি খাতই আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে।” তুফানগঞ্জের বাসিন্দা আইনজীবী শুভময় সরকার বলেন, ‘‘বাজার লাগোয়া এলাকায় মরা রায়ডাক সংলগ্ন চত্বরে নাকে রুমাল না চেপে যাতায়াত করা যায়না। অথচ কারও কোন হেলদোল আগেও ছিলনা, এখনও দেখছিনা।” চিকিৎসক ঠাকুর দাসপাল বলেন, “ এমন দূষণে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কাও থাকে।” ওই উদ্বেগের যৌক্তিকতা অস্বীকার করতে পারছেন না পরিবেশপ্রেমীরাও।

কোচবিহারের পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাস গ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ জানিয়েছেন, নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের উপস্থিতিতে আগে সংস্থার তরফে রায়ডাক দূষণ নিয়ে প্রাথমিক সমীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে দূষণের জেরে রায়ডাকের অন্যতম সম্পদ ডলফিন কূলের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগের কথাও উঠে এসেছে। ভূটান থেকে নেমে আসা ওই নদী বাঁচাতে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি দূষণ ঠেকাতে পরিকল্পনামাফিক কর্মসূচি নেওয়া দরকার। না হলে সমস্যা বাড়বে।

পুরভোটের মুখে ওই নদী দূষণ নিয়ে চাপানউতরের রেশ অবশ্য এখনও জারি রয়েছে। তুফানগঞ্জের তৃণমূল পুর চেয়ারম্যান অনন্ত বর্মা বলেন, “ বাম আমলে শহরের আবর্জনা ফেলার জন্য পরিকল্পনা করে ডাম্পিং গ্রাউন্ড করা হয়নি । নদীর দূষণ রোখার ব্যাপারেও কোন কাজ হয়নি। আমরা সবে দায়িত্ব নিয়েছি, ওই সমস্যা মেটাতে দ্রুত পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি করে কাজ শুরুর চিন্তাভাবনা চলছে।” বিদায়ী পুরবোর্ডের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান সিপিএমের রমেশ সরকার বলেন, “যা কাজ তা বাম আমলেই হয়েছে। ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির জন্য শ্মশান লাগোয়া এলাকায় ১০ বিঘা জমি আমরা বোর্ডে থাকার সময় কিনেছিলাম। বাজার লাগোয়া এলাকার মরা রায়ডাকে আবর্জনা ফেলার প্রবণতা বন্ধে তারজালির বেড়া বসানো হয়েছিল। সংগৃহীত বর্জ্য থেকে সার তৈরির পরিকল্পনাও ছিল। এখন কোনও কাজই হচ্ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন