মারধর করে চলন্ত ট্রেন থেকে অসুস্থ যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় তদন্ত শুরুর বদলে রেল কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে তত্পর হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার দুপুরে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের সামসি স্টেশনে ঘটনাটি ঘটে। সোমবার বিকেলে কাটিহারের ডিআরএম জানিয়ে দেন, ওই ঘটনায় তদন্তের কোনও প্রয়োজন নেই। রেল দফতরের কর্তাদের এই মনোভাব বুঝতে পেরেই নিগৃহীত যুবকের অভিযোগ নেওয়াকে ঘিরেও টালবাহানা শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। রবিবার ঘটনার পরেই স্টেশন ম্যানেজারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন ওই যাত্রী। কিন্তু পরে তাকে মালদহ জিআরপিতে গিয়ে অভিযোগ জানানোর কথা বলা হয়। সোমবার প্রহৃত যাত্রীর ভাই মালদহ জিআরপিতে গেলেও অভিযোগ নেওয়া হয়নি। প্রহৃত যাত্রীকে সরাসরি হাজির হতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহারের ডিআরএম উমাশঙ্কর সিংহ যাদব এ দিন দাবি করেন, ‘‘সংরক্ষিত কামরায় উঠে ওই যাত্রী অন্যায় করেছেন। ওকে মারধর করা বা ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হয়নি। ফলে তদন্তের প্রয়োজন নেই।’’ যদিও যেখানে অভিযোগই নেওয় হয়নি সেখানে ডিআরএম কীসের ভিত্তিতে এমন মন্তব্য করছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
যদিও জিআরপির মালদহের আইসি কৃষ্ণগোপাল দত্ত অভিযোগ নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, ‘‘অভিযোগকারীকেই আসতে হবে এমন কথা বলা হয় নি। স্টেশন ম্যানেজারকে করা অভিযোগপত্র নিয়ে এ দিন একজন এসেছিলেন। কিন্তু ওদের রেল পুলিশের নামে নির্দিষ্ট বয়ানে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে আর কেউ আসেননি।
এ দিন ট্রেন থেকে পড়ে গুরুতর আহত ভিনরাজ্যের এক যুবকের শুশ্রূষার ব্যবস্থা করল পুলিশ। হায়দ্রাবাদ থেকে শিলং বেড়াতে যাওয়ার সময় রবিবার সকালে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের কুমেদপুর স্টেশনে লুপ লাইনে ট্রেন থেকে পড়ে যান ওই যুবক। অচৈতন্য অবস্থায় ওই যুবককে উদ্ধার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রেললাইন সংলগ্ন এলাকায় দেহ উদ্ধার থেকে শুরু করে অপরাধমূলক কাজকর্মকে ঘিরে রেল পুলিশ ও থানার পুলিশকর্মীদের মধ্যে হামেশাই আকচা-আকচি লেগে থাকে। ওই যুবক ট্রেন থেকে পড়ে আহত হওয়ায় বিষয়টি দেখার কথা ছিল রেল পুলিশের। কিন্তু প্রাণ সংশয় হতে পারে বলে আশঙ্কা করে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ যেভাবে আহতের শুশ্রূষার উদ্যোগ নেয় তাতে পুলিশের মানবিক মুখটাই ফুটে উঠেছে বলে মনে করছেন এলাকার মানুষ। আহত ওই যুবক আপাতত মালদহ মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। কর্ণাটকে যুবকের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে পুলিশ।
হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি দেবাশিস দাস বলেন, ‘‘দ্রুত চিকিত্সা না করলে ওর প্রাণ সংশয় হতে পারত। রেল কখন কি করবে তা না ভেবে তাই ওকে উদ্ধার করে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে ভর্তি করাই।’’
চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, কর্ণাটকে ওর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ওরা আসছেন। নরেশকে পরিজনদের হাতে তুলে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ওর সঙ্গে রয়েছি।’’
পুলিশ ও আহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, আহত ওই যুবকের নাম নরেশ ডি জীবন! বাড়ি কর্ণাটকের শঙ্করঘাট্টে এলাকায়। পেশায় মেকানিক্যাল ই়়ঞ্জিনিয়র ওই যুবক হায়দ্রাবাদে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। সেখান থেকেই গুয়াহাটি এক্সপ্রেসে শিলং যাচ্ছিলেন তিনি। কাটিহার থেকে নিউ জলপাইগুড়ি যাওয়ার সময় কুমেদপুর লুপ লাইনে ট্রেন কিছুটা ধীরগতিতে চলে। সেখানেই চলন্ত ট্রেন থেকে অসাবধানতায় পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন।
কিন্তু কীভাবে ট্রেন থেকে পড়ে গেলেন নরেশ? তিনি শুধু বলেন, ‘‘অসাবধানতায় হঠাৎ পড়ে যাই। তারপর আর কিছু মনে ছিল না।’’