সোমবারেও ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা উত্তরবঙ্গে। — ফাইল চিত্র।
ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। রবিবার আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার— এই দুই জেলায় হয়েছে অতি প্রবল বৃষ্টি। তার জেরে বিপর্যস্ত জনজীবন। প্রাণহানি হয়েছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গে এখনই থামছে না দুর্যোগ। আলিপুর আবহাওয়া দফতর বলছে, সোমবারেও ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তরবঙ্গের আট জেলায়। সেখানে জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা। আট জেলার মধ্যে আলিপুরদুয়ারে হতে পারে ভারী বর্ষণ। মঙ্গলবার থেকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে কমবে বৃষ্টি। তবে পুরোপুরি থামবে না।
হাওয়া অফিস বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করে জানিয়েছে, সাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ এখন বিহার এবং সংলগ্ন এলাকার উপরে রয়েছে। অনেকটাই শক্তি হারিয়েছে সে। তার সংলগ্ন ঘূর্ণাবর্ত এখন অবস্থান করছে উত্তর-পূর্ব বিহারে। এই আবহে রবিবার উত্তরবঙ্গের আটটির মধ্যে সাতটি জেলার বেশির ভাগ অঞ্চলে হয়েছে ভারী বৃষ্টি। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পঙে ভারী থেকে অতি ভারী (৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার) বৃষ্টির জন্য জারি ছিল কমলা সতর্কতা। আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে অতি প্রবল (২০ সেন্টিমিটারের বেশি) বৃষ্টির জন্য জারি ছিল লাল সতর্কতা। উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে ভারী (৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার) বৃষ্টির জন্য জারি রয়েছে হলুদ সতর্কতা। মালদহেও চলেছে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টির পাশাপাশি ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতে ঝড়ের পূর্বাভাস ছিল। এই বৃষ্টির জেরে পাহাড়ে ধস নেমেছে। উত্তরবঙ্গের সব নদীতে জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে ডুয়ার্স-সহ সমতল ভেসেছে। বহু পর্যটক আটকে পড়েছেন। হাওয়া অফিস বলছে, উত্তরে ঝড়বৃষ্টি এখনই থামছে না।
সোমবারও উত্তরবঙ্গের আট জেলায় ঝড়বৃষ্টির জন্য হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পাশাপাশি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে ঝোড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। তবে জেলার সব জায়গায় ঝড়বৃষ্টি হবে না, সেটুকুই যা স্বস্তির। উত্তরের আট জেলার মধ্যে সোমবার আলিপুরদুয়ারে হতে পারে ভারী বৃষ্টি। মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টি কমবে উত্তরবঙ্গে। ওই দিন এক মাত্র দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পাশাপাশি ঝোড়ো হাওয়ার জন্য হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বাকি জেলায় সতর্কতা জারি করার মতো পরিস্থিতি না থাকলেও সেখানে বিক্ষিপ্ত হালকা বৃষ্টি হতে পারে। আগামী শনিবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের আট জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। তবে জেলার সব জায়গায় ঝড়বৃষ্টি হবে না। ঝড়বৃষ্টির জন্য সতর্কতা জারি করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি সিকিম, অসম, মেঘালয়েও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে দার্জিলিং-সহ পার্বত্য এলাকায় আরও ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে। হাওয়া অফিস সতর্ক করে জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গের নদীগুলির জলস্তর কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে আরও কিছু এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
উত্তরবঙ্গে বিপর্যস্তদের সাহায্যের জন্য হেল্পলাইন নম্বর। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ইতিমধ্যে রাতভর ভারী বৃষ্টির কারণে বিপর্যস্ত দার্জিলিং, কালিম্পং। প্রভাব পড়েছে ডুয়ার্স-সহ উত্তরবঙ্গের সমতল এলাকায়। পাহাড়ের বহু জায়গায় ধস নেমে রাস্তা বন্ধ। তিস্তার জল উঠে এসেছে জাতীয় সড়কের উপর। এখনও পর্যন্ত মোট ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকে। আটকে পড়েছেন বহু পর্যটক। পাহাড়ের জল এ বার নামছে সমতলেও। আর তাতেই বিপর্যস্ত হচ্ছে উত্তরবঙ্গের সমতল এলাকা। ফুলেফেঁপে উঠেছে তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা, জলঢাকা-সহ উত্তরবঙ্গের নদীগুলি। শনিবার রাতে মহানন্দা নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে পড়েছে শিলিগুড়ির পোড়াঝাড় এলাকায়। ধসে গিয়েছে বেশ কিছু বাড়ি। বহু মানুষ ঘরছাড়া। জলদাপাড়ায় হলং নদীর উপরে সেতু ভেঙে টুরিস্ট লজে আটকে পড়েছেন বহু পর্যটক। গোটা কোচবিহার জলমগ্ন। শহরের ২০টি ওয়ার্ডে হাঁটু জল, কোথাও কোমর পর্যন্ত জল। উদ্ধারকাজে নেমেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। মঙ্গলবার থেকে উত্তরে বৃষ্টি কমলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু তার আগে সোমবার যদি রবিবারের মতোই দুর্যোগ চলে, তা হলে আরও বিপাকে পড়তে পারেন স্থানীয় মানুষজন থেকে প্রশাসন।