ইদ, রথের উৎসবে জোয়ার উত্তর জুড়ে

সকালে কড়া রোদ থাকলেও দুপুরে সামান্য ভার হয়েছিল আকাশের মুখ। যদিও বৃষ্টি তেমন ব্যাঘাত না ঘটানোয় নির্বিঘ্নে জমজমাট ইদ পালন চলে উত্তরবঙ্গে। বিকেল হতেই রথের দড়ি টানারও হিড়িক পড়ে যায় সমস্ত এলাকা জুড়েই। শিলিগুড়ি থেকে মালদহ সর্বত্রই জোড়া উৎসবের আনন্দে, মেলায়, পাঁপড় আর ফিরনিতে সামিল হন মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৫ ০২:০২
Share:

মালদহের হায়দারপুরে ইদের নমাজ পাঠ মহিলাদের। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

সকালে কড়া রোদ থাকলেও দুপুরে সামান্য ভার হয়েছিল আকাশের মুখ। যদিও বৃষ্টি তেমন ব্যাঘাত না ঘটানোয় নির্বিঘ্নে জমজমাট ইদ পালন চলে উত্তরবঙ্গে। বিকেল হতেই রথের দড়ি টানারও হিড়িক পড়ে যায় সমস্ত এলাকা জুড়েই। শিলিগুড়ি থেকে মালদহ সর্বত্রই জোড়া উৎসবের আনন্দে, মেলায়, পাঁপড় আর ফিরনিতে সামিল হন মানুষ।

Advertisement

জেলার বিভিন্ন ইদগাহ ময়দানে নমাজ পাঠ করেন বাসিন্দারা। ইংরেজবাজার শহরের সুভাষপল্লি ইদগাহ্ মাঠে এক সঙ্গে হাজার দশেক বাসিন্দা নমাজ পড়েছেন। সেখানে ছিলেন রাজ্যের উদ্যান পালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী। শহরের পেঁয়াজি মোড়ে প্রায় দেড় দশক থেকে মহিলারা নমাজ পড়ছেন। এ দিনও সেখানে হাজার খানেক মহিলা সামিল হয়েছিলেন। সেখানে প্রতিবারের মতো এবারও যোগ দেন রাজ্যের আরেক মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। কালিয়াচকের সুজাপুর ইদগাহ মাঠে আটটি অঞ্চলের প্রায় এক লক্ষ মানুষ নমাজ পড়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। ঘণ্টাখানেকের জন্য জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে রাখা হয়। মানিকচক, পুরাতন মালদহ, গাজল প্রভূতি ব্লকে ঘটা করে পালিত হয়েছে ইদ। জেলার পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।’’

অন্য দিকে, সন্ধে নামতেই পাড়ায় পাড়ায় রথের মেলায় গা ভাসান বাসিন্দারা। শিলিগুড়ি শহরের অন্যতম প্রাচীন রথের মেলা হয় রথখোলায়। এ ছাড়া বিধান মার্কেটের মেলা, আশ্রমপাড়ার পাকুড়তলা মোড় এলাকায় নতুন একটি মেলা আয়োজন হচ্ছে। ভক্তিনগর এলাকার হায়দরপাড়ায় ইসকন মন্দিরের বিশাল রথের মেলা সামলাতে প্রতিবারই হিমশিম অবস্থা হয়, মেলার পাশাপাশি মন্দির ও বিগ্রহ দর্শনে বাড়তি উৎসাহ থাকে মানুষের মধ্যে। রাত ১০টা পর্যন্ত ভিড় সামলাতে হয়েছে পুলিশকে।

Advertisement

নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ি এলাকার শক্তিগড়ে শহরের সবচেয়ে বড় রথের মেলা আয়োজন হয় গৌড়ীয় মঠে। এই এলাকায় রথ হয় তিনবাত্তি ওভারব্রিজ ও গেটবাজার এলাকাতেও। তবে তা আকারে এতটা বড় নয়। শিলিগুড়ির শিবমন্দির, বাগডোগরা, মাটিগাড়ার খাপরাইল মোড় এলাকাতেও একাধিক রথের আয়োজন হয়েছিল। রথযাত্রা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার জন্য শহরবাসীকে ধন্যবাদ জানান ইসকনের সেবায়েত নামকৃষ্ণ দাস।

শিলিগুড়ি শহরের ইদগাহগুলোতে নমাজের জন্য একাধিক জায়গায় মিলন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের ময়দান চত্বরে ইদের নমাজের আয়োজন করা হয়েছিল। এছাড়া হিলকার্ট রোড লাগোয়া এলাকায় কারবালা মসজিদের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় নমাজের। এছাড়া বর্ধমান রোডে বড় মসজিদ, ছোট মসজিদ, কারবালা মসজিদ, জামা মসজিদে ঈদের নমাজের আয়োজন করা হয়েছিল। শহর লাগোয়া বিভিন্ন জায়গাতেও নমাজের আয়োজন করা হয়।

ইসকনের মালদহ শাখার উদ্যোগে ইংরেজবাজারের নেতাজি মোড় থেকে পুরো শহর পরিক্রমা করে রামকৃষ্ণপল্লি ময়দানে এসে শেষ করে। রথের দড়ি ধরার জন্য রাস্তার দুই ধারে প্রচুর মানুষের ভিড় জমে। রথ যাত্রা উৎসবে সামিল হন রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। একই সঙ্গে ইংরেজবাজারের বালুচরে পুরীর আদলে রথ তৈরি করা হয়। দুপুর গড়াতেই চাঁচলে শুরু হয় রথযাত্রার প্রস্তুতি। সন্ধায় চাঁচল রাজবাড়ি লাগোয়া ঠাকুরবাড়ি থেকে রথযাত্রা বের হওয়ার পর তা শহর পরিক্রমা করে। ইসলামপুরেও রথের মেলায় বিকেল থেকে ছিল উপচে পড়া ভিড়. তবে সন্ধ্যায় এক ঘণ্টা টানা বৃষ্টিতে মেলায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে।

ইদের আনন্দে মেতেছে কোচবিহারও। শনিবার সকালে কোচবিহারে পুরাতন মসজিদ, নতুন মসজিদ সহ বিভিন্ন মসজিদের সঙ্গেই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামেও ইদের নমাজ পড়া হয়েছে। সর্বত্রই ছিল উপচে পড়া ভিড়। জেলাজুড়ে বিভিন্ন মসজিদ ও লাগোয়া এলাকা আলোকসজ্জায় সাজান হয়েছে। কোচবিহার নতুন মসজিদের সভাপতি আবদুল জলিল আহমেদ বলেন, “শুধু নতুন মসজিদে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নামাজে অংশ নেন।” ইন্ডোর স্টেডিয়াম চত্বরে আঞ্জুমান-ই-ইসলামিয়া কর্তৃপক্ষের তরফে পোশাক বিতরণ করা হয়। কোচবিহারের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “ইদের উৎসব পুরোপুরি শান্তিপূর্ণভাবে কেটেছে।” এদিন ইসলামপুরের মেলার মাঠে নমাজ পড়েন রাজ্যের জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরী। জলপাইগুড়ি এবং দুই দিনাজপুরেও শান্তুপূর্ণ ভাবে খুশির ইদ পালিত হয়েছে। সন্ধ্যের পরে বিভিন্ন রাস্তাও ছিল জমজমাট।

নিরাপত্তার মধ্যে শান্তিপুর্নভাবে শনিবার সকালে অসমের ধুবুরিতেও ইদ পালিত হয়েছে। শহরের ইদগাহ মাঠে শহরের প্রায় ২০হাজার বাসিন্দা নমাজ পড়েছেন। নামাজের ইমামতি করান ধুবুরির বড় মসজিদের ইমাম মৌলানা বাহাজ উদ্দিন। নামাজের পর অনুষ্ঠিত হয় খোতবাহ। এর পরেই বিশ্ব শান্তি এবং ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলার জন্য সবাই এক সাথে প্রার্থনা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন