সফল সাফিক, খুশিতে রতুয়া

চেষ্টা থাকলে প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও যে সাফল্য সম্ভব তা দেখিয়ে দিল সাফিক হায়দার। মালদহের রতুয়ার প্রত্যন্ত এলাকা রানিনগর হাই মাদ্রাসার ছাত্র সাফিক শুধু জেলায় প্রথম হয়েছে তাই নয়। রাজ্যের মেধা তালিকাতেও ঠাঁই হয়েছে তার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাঁচল শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৬ ০২:৫২
Share:

রানিনগর হাই মাদ্রাসা থেকে সম্ভাব্য সপ্তম সাফিককে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন পরিজনেরা। ছবি: বাপি মজুমদার।

চেষ্টা থাকলে প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও যে সাফল্য সম্ভব তা দেখিয়ে দিল সাফিক হায়দার।

Advertisement

মালদহের রতুয়ার প্রত্যন্ত এলাকা রানিনগর হাই মাদ্রাসার ছাত্র সাফিক শুধু জেলায় প্রথম হয়েছে তাই নয়। রাজ্যের মেধা তালিকাতেও ঠাঁই হয়েছে তার। ৭৩৩ নম্বর পেয়ে যুগ্মভাবে সম্ভাব্য সপ্তম হয়েছে সে। সাফিকের ফলাফলে এলাকাজুড়েই খুশির আবহ তৈরি হয়েছে। মাধ্যমিকেও এ বার মেধা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চাঁচল সিদ্ধেশ্বরীর ছাত্র সুবর্ণ মণ্ডল। তারপর মহকুমার আরও এক ছাত্র মাদ্রাসা পরীক্ষাতেও ভালো ফল করায় খুশি মহকুমার শিক্ষামহল।

মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক তোসাদ্দক হোসেন বলেন, ‘‘সাফিকের জন্য মাদ্রাসার মুখ উজ্জ্বল হয়েছে। ও বরাবরের মেধাবী। মেধা তালিকায় ঠাঁই পাওয়াটা বাড়তি পাওনা।’’

Advertisement

রতুয়ার রানিনগর হাই মাদ্রাসায় পড়াশুনা করলেও তার বাড়ি অবশ্য মহানন্দা নদীর ওপারে গাজলের দেওয়ানি এলাকায়। বাবা মহম্মদ আতাউর রহমান ওই মাদ্রাসারই বিজ্ঞানের শিক্ষক। ইংরেজি ছাড়া অবশ্য আর কোনও বিষয়ে টিউশন নিতে হয়নি সাফিককে। বাবাই তাঁকে পড়িয়েছেন।

সাফিকেরা দুই ভাই এক বোন। তার দাদা শামিম আহসানও মেধাবী। সেও ওই মাদ্রাসা থেকে ৬৮৭ পেয়ে পাশ করে এখন চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পড়ছে। আশা ছিল বড় ছেলেও মেধা তালিকায় ঠাঁই পেতে পারে। কিন্তু তা হয়নি। বাবা-মায়ের সেই আক্ষেপ দূর করে দিয়েছে সাফিক। প্রতিদিন গড়ে পাঁচঘন্টা পড়াশুনা করত সে। অবসর সময়ে টেলিভিশনে কার্টুন দেখা ছাড়া অন্য কোনও শখ ছিল না। প্রত্যন্ত গ্রামে থেকে ভালো ফল করতে হবে বলে ছোট থেকেই একটা জেদ ছিল ওর। কেননা গ্রামের স্কুলে ভর্তি করায় বাবা-মাকে অনেকেই দু কথা শোনাতে ছাড়েননি। সেই জেদে সফল সাফিক।

ভবিষ্যতে চিকিত্সক হতে চায় সাফিক। প্রত্যন্ত রানিনগর, নিজের গ্রাম দেওয়ানির মানুষের দুর্দশা নিজের চোখে দেখে ভবিষ্যতে চিকিত্সক হয়ে ওই গ্রামে ফিরেই মানুষের সেবা করতে চায় সে। আল আমিন মিশনের খলতপুরে বিজ্ঞান নিয়ে এরমধ্যেই ভর্তি হয়ে গিয়েছে।

খুশির হাওয়া জেলার চাঁচলেও। মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার বোর্ডের পরীক্ষার পাশাপাশি আলিম ও ফাজিল পরীক্ষাতেও সাফল্যের ধারা অব্যাহত মালদহের চাঁচল মহকুমায়।

শুক্রবার মাদ্রাসা বোর্ডের পাশাপাশি মাধ্যমিক সমতুল আলিম ও উচ্চমাধ্যমিক সমতুল ফাজিল পরীক্ষারও ফল প্রকাশিত হয়েছে। ওই দুই পরীক্ষাতেও রাজ্যের মেধা তালিকায় ঠাঁই হয়েছে মহকুমার দুই ছাত্রের। রতুয়ার হরিপুর কেও সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র মহম্মদ সোহাইব আলিমে মেধা তালিকায় সম্ভাব্য পঞ্চম হয়েছে। আর চাঁচলের জালালপুর সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র মামুনুর রশিদ ফাজিল পরীক্ষায় সম্ভাব্য সপ্তম হয়েছে। দুই ছাত্র মেধা তালিকায় ঠাঁই পাওয়ায় দুটি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক তো বটেই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যেও খুশির আবহ তৈরি হয়েছে।

সোহাইবের বাড়ি হরিপুর লাগোয়া ইসলামপুরে। তিন ভাইবোনের মধ্যে বড় সে। বাবা আবু তাহের হরিপুর সিনিয়র মাদ্রাসার থিয়োলজির শিক্ষক। দিনে আটঘণ্টা করে পড়াশুনা করত সোহাইব।

তার ফলাফলে খুশি মাদ্রাসার শিক্ষকরাও। উচ্ছ্বসিত মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেন্ডেন্ট আবু তাহের বলেন, ‘‘ও আমাদের প্রতিষ্ঠানের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এখান থেকে অনেকেই ভালো ফল করলেও কেউ মেধা তালিকায় ঠাঁই পায়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন