ছেলেধরার ‘গুজব’, ভয় গণপিটুনির

আলিপুরদুয়ারের পাটকাপাড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে, গভীর রাত হলেই বাড়িতে কালো পোশাক পরে বাড়িতে হানা দিচ্ছে কেউ৷ হানা দিয়েই ঘরে থাকা শিশুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ৷

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯ ০৫:০৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

ফের ছেলেধরার আতঙ্ক ছড়াল আলিপুরদুয়ারে। তার সঙ্গেই ছেলেধরার গুজবে গণপিটুনির আশঙ্কাও জোরালো হয়েছে।

Advertisement

আলিপুরদুয়ারের পাটকাপাড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে, গভীর রাত হলেই বাড়িতে কালো পোশাক পরে বাড়িতে হানা দিচ্ছে কেউ৷ হানা দিয়েই ঘরে থাকা শিশুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ৷ অথচ, ধরতে গেলেই না কি উধাও হয়ে যাচ্ছে সে৷ এই গুজব নিয়েই এখন চিন্তায় পুলিশ-প্রশাসন সহ বিভিন্ন মহল৷ কারণ গত বছর এমন ছেলেধরা গুজবের জেরেই উত্তরবঙ্গ-সহ রাজ্য, এমনকি দেশের নানা প্রান্তে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে৷ গিয়েছে বহু প্রাণ। তাই পাটকাপাড়ার ঘটনার জেরেও যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তা নিশ্চিত করতে এখন থেকেই সতর্ক পুলিশ৷

আলিপুরদুয়ার শহর থেকে প্রায় ১২ কিমি দূরের পাটকাপাড়ার বাসিন্দাদের দাবি, প্রায় ১৫দিন ধরে পাটকাপাড়া চা বাগানের বিভিন্ন লাইন-সহ বাগান সংলগ্ন উত্তর কিংবা মধ্য পাটকাপাড়াতেও এই ঘটনা প্রায় প্রতি রাতেই ঘটে চলছে৷ বুধবার বিষয়টি নিয়ে আলিপুরদুয়ার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অজিতচন্দ্র রায় নামে এক বাসিন্দা৷ অজিতের বাড়ি মধ্য পাটকাপাড়ায়৷ অন্য দিনের মত মঙ্গলবার রাতে ঘরের দরজা ভাল করে বন্ধ করে একটি বিছানায় ঘুমিয়েছিলেন তিনি৷ ঘরেরই অন্য একটি বিছানায় ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও সাড়ে তিন বছরের শিশু কন্যা৷

Advertisement

অজিতের অভিযোগ, “রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ আচমকাই সেই ব্যক্তি স্ত্রীর সঙ্গে শুয়ে থাকা আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে৷ আমার স্ত্রীও মেয়েকে ধরে টানাটানি করতে শুরু করে৷ শব্দ পেয়ে আমি উঠে পড়ি৷ ঝাঁপিয়ে পড়ে কোনওমতে সেই ব্যক্তির পা দুটে আটকে রাখি৷ চিৎকার শুনে বাড়ির অন্যরা আমার ঘরের সামনে চলে আসে৷ তাদের কথাতেই ওই ব্যক্তির পা ছেড়ে দরজা খুলি৷ বাকিরা আলো নিয়ে ঘরে ঢোকে৷ ঘরের আলোও জ্বালানো হয়৷ কিন্তু ততক্ষণে বন্ধ ঘর থেকে উধাও হয়ে যায় সেই ব্যক্তি৷” স্থানীয় বাসিন্দা ঋষিকেশ রায়ের অভিযোগ, “প্রায় প্রতিদিনই রাতের অন্ধকারে কোনও না কোনও বাড়িতে এই ঘটনা ঘটছে৷ কোথাও শিশুকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, তো কোথাও দরজা নেড়ে চলে যাচ্ছে৷” এই ঘটনার জেরে সন্ধ্যা হলেই বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ করে দিচ্ছেন বাসিন্দারা৷ রাত হলেই প্রায় দু’শো গ্রামবাসী আলাদা আলাদাভাবে কুড়ি-পঁচিশজনের দল গড়ে বিভিন্ন জায়গায় পাহারায় নামছেন৷

পুলিশের সন্দেহ, কেউ বা কারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছেলেধরা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে৷ আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি৷ এই ঘটনায় পুলিশ যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে৷ যে বা যারা এটা করছে তাদের চিহ্নিত করে ধরতে থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ তবে সাধারণ মানুষের সহযোগিতাও আমাদের প্রয়োজন৷ কেউ যাতে অযথা গুজব না ছড়ান বা গুজবে কান না দেন সে ব্যাপারে এলাকায় প্রচার চালানো হবে৷” সোশ্যাল মিডিয়াতেও গুজব ছড়ানো হচ্ছে কি না তা দেখা হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের তরফেও ইতিমধ্যেই দিনে-রাতে টহল শুরু হয়েছে৷ রাতে এলাকায় সিভিক পুলিশও মোতায়েন করা হচ্ছে৷ এর পাশাপাশি গুজব এড়াতে পুলিশ কর্তারা এলাকায় মাইকিং করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও যাতে বিষয়টি নিয়ে কেউ গুজব না ছড়ান, সেটাই মাইকিং করে বলা হবে বলে জানান পুলিশ কর্তারা৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন