ভাল কাজ করলে লাল। ফাঁকি দিলে সবুজ। প্রকল্প রূপায়ণে ‘ঘুঘু’ তাড়াতে আপাতত এমন কায়দাই বেছে নিচ্ছে মহকুমা পরিষদ।
টাকার অভাব নেই। নির্মাণকারী সংস্থা হাতের কাছে মজুত। সরকারি অনুমোদনও রয়েছে। কিন্তু শিলিগুড়ি মহকুমার গ্রামে নতুন শৌচালয়ের সংখ্যা কিছুতেই বাড়ছে না। কারণ খুঁজতে শুরু করে সরকারি কমিটি। কমিটি দাবি করে, উপরি-র দাবি মেটাতেই শ্লথ হয়ে গিয়েছে প্রকল্প। এবার, শৌচালয় প্রকল্প থেকে ‘ঘুঘুর বাসা’ উপরে ফেলতে লাল-সবুজ ব্যবস্থা চালু করল শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ। দেরি হলে লাল দাগ ও শাস্তি, ভাল কাজ করলে সবুজ দাগ ও শংসাপত্র।
স্বচ্ছ ভারত এবং মিশন নির্মল বাংলা দুই প্রকল্পেই প্রতি বাড়িতে শৌচালয় তৈরির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে একটি শৌচালয় তৈরি করতে সরকার থেকে দশ হাজার টাকা দেওয়া হয়, প্রাপককে দিতে হয় মাত্র নশো টাকা। ভর্তুকির তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ থাকলেও, মহকুমার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে কেন শৌচাগারের সংখ্যা বাড়ছে না, জানতে রাজ্য এবং কেন্দ্র প্রতিদিন চাপ বাড়াচ্ছে মহকুমা প্রশাসনের ওপরে। অভিযোগ, বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে কাজ শেষের শংসাপত্র দিতেই মাসখানেকের বেশি লাগিয়ে দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট নির্মাণকারী সংস্থাকে বরাদ্দ দিতেও সময় লাগছে আরও বেশি। উপরি তথা কমিশন না দিলে টেবিল থেকে টেবিলে ফাইলই এগোয় না বলে অভিযোগ।
একটি শৌচালয় তৈরির জন্য পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি হয়ে মহকুমা পরিষদ তিনস্তর থেকেই শংসাপত্র প্রয়োজন হয়। চলতি মাসে পরিষদের আধিকারিকরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কাজ শেষ হওয়ার পরে মোট ২২ দিনের মধ্যে শংসাপত্র দিতে হবে। নতুন নির্দেশে কাজ শেষ হওয়ার দশ দিনের মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতকে রিপোর্ট দিতে হবে। পঞ্চায়েত সমিতিকে ৭ দিন মহকুমা পরিষদ ৫ দিনে রিপোর্ট দেবে। দেরি হলেই লাল দাগ পড়বে প্রকল্পের নামে। শো-কজ করা হবে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের। এই ব্যবস্থার তালিকায় থাকবে নির্মাণকারী সংস্থাও। নির্মাণে দেরি অথবা নিম্নমানের কাজ হলে তাদেরও লাল দাগ পড়বে। সেক্ষেত্রে শাস্তি বরখাস্ত।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি তাপস সরকার বলেন, ‘‘বছরে যত শৌচালয় তৈরি হওয়ার কথা তার থেকে শিলিগুড়িতে কিছুটা কম হয়েছে। নির্মাণে গতি আনার চেষ্টা হচ্ছে। বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’ তবে নতুন নির্দেশিকায় শাস্তির সঙ্গে পুরস্কারও রয়েছে। সব নিয়ম মানলে দেওয়া হবে সবুজ চিহ্ন। মিলবে যথাযথ কাজের সরকারি শংসাপত্র। কাজে গতি আনতে এ ভাবেই ফুটবল মাঠের নিয়মে ভরসা রাখছে মহকুমা পরিষদ।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের আওতায় ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। পরিষদের এলাকায় ৪২ হাজার পরিবার রয়েছে, যাদের কোনও শৌচাগার নেই। এই সংখ্যাই চোখ কপালে তুলে দিয়েছে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের আধিকারিকদের। ২০১২ সালে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল শৌচালয় নেই এমন পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৭৪ হাজার। গত ৪ বছরে তৈরি হয়েছে ৩২ হাজার শৌচালয়। অর্থাৎ গড়ে বছরে ৮ হাজার। অন্য জেলায় যেখানে গড়ে ১০ থেকে ২০ হাজার পর্যন্ত শৌচালয় তৈরি হয়েছে, সেখানে শিলিগুড়িতে এত কম সংখ্যা কেন তা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। যে দেড় বছর মহকুমা পরিষদ এবং গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে প্রশাসক বসেছিল সে সময়ে শৌচালয় তৈরির গড় ৩ থেকে ৪ হাজারে নেমে গিয়েছিল। নজরদারির অভাবে অনিয়ম জাকিয়ে বসে বলে অভিযোগ।
একটি শৌচাগারের জন্য অন্তত দশটি টেবিলে টাকা পৌঁছে দিতে হয় বলে দাবি নির্মাণকারী সংস্থাগুলির। তাতেই উৎসাহ হারিয়ে পেলে নির্মাণকারী সংস্থাগুলি। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে নির্মাণকারী সংস্থা কাজ করবে না বলে জানিয়ে দেয়।