rescue

Civic Volunteer: হোমে ঠাঁই, এক যুগ পর সেখানেই নিরাপত্তা কর্মী

সারাদিন হোমের দরজা আগলে বসে থাকেন। হোমের যদি থানা-পুলিশের প্রয়োজন হয়, সদ্য চাকরি পাওয়া সিভিক ভলান্টিয়ারকেই জানান কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২১ ০৭:১৩
Share:

পাহারায়: হোমে রাখী ঘোষ।

বারো বছর আগের কথা। পুলিশের হাত ঘুরে হোমে ঠাঁই হয়েছিল বছর সাতেকের মেয়েটির। নাম বলতে পেরেছিল, তবে ঠিকানা বলতে পারেনি। তাই হোমের চার দেওয়ালেই কেটে গিয়েছে বারোটি বছর। সেই মেয়েই এখন চাকরি পেয়েছেন থানায়। থানা থেকেই সেই মেয়ের হাতে দেওয়া হয়েছে হোমের নিরাপত্তার ভার।

Advertisement

সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি পেয়েছেন মেয়েটি। সারাদিন হোমের দরজা আগলে বসে থাকেন। হোমের যদি থানা-পুলিশের প্রয়োজন হয়, সদ্য চাকরি পাওয়া সিভিক ভলান্টিয়ারকেই জানান কর্তৃপক্ষ। হোমের এক কর্মীর কথায়, “আমাদের মেয়েটাই তো এখন পুলিশে। তাই আমরা কত দিকে নিশ্চিন্ত।”

মেয়েটির নাম রাখী ঘোষ। বাড়ির কথা এখন আর মনে নেই উনিশ বছরের মেয়েটির। বাড়িতে কে কে ছিল, তাও ভুলে গিয়েছে। ২০০৯ সালে পুলিশ রাখীকে ভক্তিনগর থেকে উদ্ধার করে জলপাইগুড়ির অনুভব হোমে পাঠিয়েছিল। সেই মেয়ে এখন নিজেই আধা-পুলিশ। পুলিশের মতোই কাজ করতে হয় তাঁকে।

Advertisement

বারো বছর আগে হোমে আসার পরে রাখীকে ভর্তি করানো হয় শহরের একটি স্কুলে। পড়াশোনার সঙ্গে তাইকন্ডো খেলা শুরু করেন রাখী। তাইকন্ডোতে জাতীয় স্তরে পুরস্কারে সোনা পান। জাতীয়, আন্তঃরাজ্য নানা প্রতিযোগিতায় ত্রিশটিরও বেশি সোনা জিতেছেন রাখী। তাঁর কথায়, “হিমালয়-তরাই উৎসবে সোনা জিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে ল্যাপটপ পেয়েছি। আমার বয়স কম ছিল বলে তখন স্কুটি দেয়নি।”

চাকরিও খেলার সুবাদে। তাইকন্ডো খেলোয়াড়দের নিয়োগে বিশেষ সুযোগ দিচ্ছে শুনে হোমের তরফে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মাস ছয়েক আগের কথা। রাখীর বয়স লেখা ছিল ১৭ বছরের কিছু বেশি। পুলিশের নিয়োগ বোর্ড
রাখীর পরীক্ষায় খুশি হয়। এবং মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়ে জানা যায়, সরকারি ভাবে ১৭ লেখা হলেও রাখীর বয়স ১৯। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে কাগজপত্র সংশোধন করে রাখীকে সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজে নিয়োগ করা হয়। প্রথমে কিছুদিন কোতোয়ালি থানায় ডিউটি করেছেন রাখী। তার পর থেকেই এই হোমের দায়িত্বে।

হোমের কর্ণধার দীপশ্রী রায় বলেন, “আমাদের হোমে পুলিশ পোস্টিং থাকে পাহারার জন্য। এখন দু’মাস ধরে আমাদের মেয়ে রাখীকেই পুলিশ প্রশাসন হোমের নিরাপত্তায় পোস্টিং করেছে। হোমে আশ্রয় পাওয়া মেয়েটাই এখন হোমের পাহারাদার।”

সিভিক ভলান্টিয়ারের উর্দি পরা, চুল পিছনে টেনে বাঁধা রাখীর মুখে পুলিশসুলভ গাম্ভীর্য নেই। বরং কথায় কথায় লাজুক হাসেন। মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করে কনস্টেবলের পরীক্ষা দেবেন বলে জানালেন। তবে হোমে অপরিচিত কেউ ঢুকতে গেলে মুখে কাঠিন্য এনে নানা জেরা করেন, হোমের আবাসিকেরা বাইরে বেরোতে গেলে তাদেরও নানা প্রশ্ন করেন, ঠিক পেশাদার পুলিশকর্মীর মতো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন