উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক সুভাষচন্দ্র রায়। নিজস্ব চিত্র।
উত্তর দিনাজপুরের সুগন্ধি তুলাইপাঞ্জি ধানের ফলন ও মানোন্নয়ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণা করে তাক লাগিয়ে দিলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক সুভাষচন্দ্র রায়। উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই তুলাইপাঞ্জির সঙ্গে আত্মিক যোগ তাঁর। দিনাজপুরের এই সুগন্ধি চাল যাতে বিশ্ববাজারে জায়গা করে নেয় ও ফলন বাড়ে, সেই লক্ষ্যে দিনরাত এক করে গবেষণা চালাচ্ছেন তিনি।
রায়গঞ্জ শহরের সুদর্শনপুরে নিজের বাড়ির ছাদে ও কালিয়াগঞ্জের বালাস গ্রামের পৈতৃক গ্রামের বাড়িতে ২ বিঘা জমিতে চলছে তাঁর গবেষণা। ২০১১-এ ফিলিপিন্সের ম্যানিলাতে ইরি গবেষণা কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁর পথচলা৷ ইরিতে শেখা ধানের প্রজনন বিদ্যার মাধ্যমে আইআর-৬৪, বাসমতির সঙ্গে তুলাইপাঞ্জি ধানকে একত্রিত করে উচ্চমানের ফলন ও সুগন্ধিযুক্ত নতুন ধানের বীজ তৈরিতে সাফল্য পেয়েছেন বলে তাঁর দাবি। শুধু তাই নয়, এই নয়া বীজকে ‘তুলাইমতি’ নাম দিয়েছেন ওই গবেষক। তাঁর দাবি, এই ধানে বাসমতির পুষ্টি ও তুলাইপাঞ্জির সুগন্ধ মিলেমিশে রয়েছে। এমনকি এর ফলন হবে আইআর-৬৪ এর মতো বিপুলহারে।
২০১৭-য় ২২জুন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে উত্তর দিনাজপুরের এই সুগন্ধি ধান জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) নথিভুক্ত হয়েছে। তবে এই বিশেষ ধান শুধুমাত্র উত্তর দিনাজপুরেই নয়। বরং উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, মালদহ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরেও চাষ হয়। কিন্তু উত্তর দিনাজপুরে উৎপাদিত তুলাই সুগন্ধির জন্য বিখ্যাত। আর উত্তর দিনাজপুরের মূলত রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ ও ইটাহার ব্লকেই এর চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় এর ফলন অনেকটাই কম। সুভাষ এ ব্যাপারে বলেছেন, “তুলাইপাঞ্জির ফলন কী ভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়েই আমার গবেষণা। গবেষণা প্রায় শেষ মুহূর্তে রয়েছে। ভারত সরকারের কৃষি মন্ত্রকের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এখন শুধু অনুমোদনের অপেক্ষা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি আশাবাদী, নতুন এই ধান প্রচুর ফলনশীল এবং স্বাদে, গন্ধে, আকারে ও পুষ্টিগুনে ভরপুর হবে। পাশাপাশি এই ধান চাষ করে কৃষক বেশি দামে দেশে ও বিদেশে বিক্রি করতে পারবেন।”