নিগ্রহ: দার্জিলিঙে গিয়ে হেনস্থার মুখে পড়লেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র
সবে দেওয়ালির ‘বুকিং’ শুরু হয়েছিল। তারকা হোটেল হোক কিংবা অখ্যাত কিন্তু ছবির মতো গ্রামের ‘হোম স্টে’ মালিকরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মরসুমের শেষ ক’দিনের জন্য। তাঁরা ফের হতাশ হয়ে পড়েছেন।
বুধবার কালিম্পঙে বিজেপি নেতাদের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ, কালো পতাকা দেখানো হলেও রক্তারক্তি না ঘটায় স্বস্তি পেয়েছিলেন তাঁরা। আশা করেছিলেন, পাহাড়ে অবরোধ, মারধরের পরম্পরার দিন ফুরিয়েছে। কিন্তু, বৃহস্পতিবার কাউকে ছাতাপেটা, কাউকে লাথি মারা, বিজেপির রাজ্যের সভাপতি দিলীপ ঘোষের মাথার টুপি লাঠি দিয়ে খুলে নেওয়ার চেষ্টা—এ সব ‘ভিডিও ফুটেজ’ দেখে ফের উদ্বিগ্ন দার্জিলিং।
যেমন, দার্জিলিঙের ম্যাল লাগোয়া তারকা হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে গাড়ি চালক রিধান লেপচা, দীনেশ লামারা বললেন, ‘‘সবে পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছেন। দেওয়ালির আগে ও পরে গাড়ি বুকিংয়ের বরাতও পেয়েছি। কিন্তু আজ, গোলমালের ছবি টিভিতে দেখে কলকাতার ২টি পরিবার তা বাতিল করে দিয়েছেন।’’
পাশে দাঁড়িয়ে তারকা হোটেলের অফিসকর্মী বললেন, ‘‘আমাদের হোটেলের রাঁধুনিরা সবে এ দিনই পৌঁছেছেন। কারণ, বিদেশের একটি পর্যটক দল অক্টোবরের শেষেই আসতে চাইছেন। মারপিট না কমলে তাঁরা আর আসবেন বলে মনে হয় না।’’ তবে ট্যুর অপারেটর সম্রাট সান্যাল জানান, পাহাড়ে নতুন করে বন্ধ না হলে পর্যটকদের ভিড় ক্রমশ বাড়বে। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন, জিটিএ-র কেয়ারটেকার বোর্ড শক্ত হাতে হাল ধরছে বুঝলে পাহাড়ে ফের পর্যটকের অভাব হওয়ার কথা নয়।’’
বিজেপি নেতাদের সফর ঘিরে পাহাড়ে অশান্তি হলেও পর্যটকদের ভয়ের কোনও কারণ নেই বলে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবেরও দাবি। তিনি বলেন, ‘‘পাহাড়ে কেউ গোলমাল পাকাতে যাওয়াটা এক ধরনের বিষয়। আর নিছক বেড়াতে গেলে পাহাড়বাসীরা সকলকেই স্বাগত জানান। কাজেই পর্যটকদের নিরাপত্তা পুরোপুরি নিশ্চিত।’’
জিটিএ-এর কেয়ারটেকার চেয়ারম্যান বিনয় তামাঙ্গও পর্যটকদের অভয় দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘পর্যটকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। আমরা তাঁদের পাশে আছি।’’
কালিম্পঙের কাছে আলগাড়ায় হোম স্টে চালান এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। দশমীর পরদিন সেখানে নাগপুর থেকে ১২ জনের একটি পর্যটক-দল পৌঁছেছেন। ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবারই ওই দলটি দার্জিলিঙে গিয়েছে। সেখানে দুদিন থাকার কথা। দুপুরে তাঁরা গ্লেনারিজে বসে খাওয়ার সময়ে খবর পান, গোলমাল হচ্ছে। তাঁরা রাতেই কালিম্পঙে ফিরেছেন। তাঁরা দার্জিলিং পাহাড় ছেড়ে সিকিমে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, হোম স্টে কর্ণধার নবীন প্রধান বোঝানোয় দলটি থাকতে রাজি হয়েছে।
পাহাড়ে গোলমাল পুরোপুরি বন্ধ না হলে পর্যটন ব্যবসা করা মুশকিল। নবীন প্রধানদের মতো প্রবীণরা তা-ই মনে করেন। তাঁদের কথায়, ‘‘বেড়ানোটা একটা স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপার। লোকজনকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কি আর পর্যটন ব্যবসা হয়! সব দলের নেতাদেরই এটা বুঝতে হবে।’’