টানা বৃষ্টি, জল বাড়ছে নদীতেও

রাজার শহরের রাজপথ যেন নদী হয়ে গিয়েছে। রাজবাড়ির সামনের কেশব রোড দিয়ে বয়ে যাচ্ছে জলের স্রোত। শহরের লাইফ লাইন সুনীতি রোডেও এক হাঁটু জল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৭:৪৭
Share:

রাজার শহরের রাজপথ যেন নদী হয়ে গিয়েছে। রাজবাড়ির সামনের কেশব রোড দিয়ে বয়ে যাচ্ছে জলের স্রোত। শহরের লাইফ লাইন সুনীতি রোডেও এক হাঁটু জল। ব্যাঙচাতড়া রোড, কালিকা দাস রোড, আরএন রোড, বিশ্বসিংহ রোড থেকে শুরু করে দিনহাটা-কোচবিহার প্রধান সড়কও জলের তলায়। জল বাড়ছে তোর্সা, মানসাই ও রায়ডাক নদীর।

Advertisement

সকালের দিকে বহু এলাকাতেই কোথায় রাস্তার শুরু আর কোথায় শেষ তা বোঝার উপায় ছিল না। ফলে রাস্তায় নেমে রীতিমতো নাকাল হন মানুষজন। অনেকেই অভিযোগ করেন, নিকাশি ব্যবস্থা না থাকাতে বর্ষা এলেই দুর্ভোগের শিকার হন সাধারণ মানুষ। অবশ্য পুরসভার বক্তব্য, ব্যাপক বৃষ্টির জন্য কিছু সময়ের জন্য জল দাঁড়িয়ে যায়। পরে তা নেমে গিয়েছে। কোচবিহার পুরসভার চেয়ারপার্সেন রেবা কুণ্ডু বলেন, “নিকাশি ঠিক রয়েছে বলেই অল্প সময়ের মধ্যে জল নেমে গিয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ায় কিছু এলাকায় জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে তা নেমে যায়।”

বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, বর্ষা নামলেই কোচবিহার শহরের ভোগান্তি যেন বাধা। শুধু শহর নয়, লাগোয়া গ্রামগুলিরও একই অবস্থা। একদিন বৃষ্টি হলে গোটা এলাকা জলে ডুবে যায়। এ দিন সেখানে কোচবিহার সদরে ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ বছরে এ দিনই রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে কোচবিহারে। তাতে অবস্থা পুরোপুরি আয়ত্ত্বের বাইরে চলে যায়। কম বেশি সমস্ত ওয়ার্ড জলবন্দি হয়ে পড়ে। ঘরে ভিতরে জল ঢুকে যাওয়ায় অসুবিধের মধ্যে পড়তে হয় বাসিন্দাদের। রতন দাস, অনিমেষ চক্রবর্তীরা অভিযোগ করেন, ‘‘নিকাশির নোংরা সব রাস্তায় ভাসতে থাকে। তার উপর দিয়েই আমাদের চলাচল করতে হয়। কলাবাগানের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, তাঁদের ওই এলাকা থেকে জল নামছেই না। ফলে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। মহিলারাও বাড়ি থেকে বেরোতে পাচ্ছেন না। ওই এলাকার এক বাসিন্দা মঞ্জরুল হক বলেন, “আমাদের রোজার মাস চলছে। প্রার্থনার জন্য মসজিদে যেতে হয়। সেখানেও জল ঢুকে গিয়েছে। সর্বত্র জল। এই অবস্থায় খুব অসুবিধের মধ্যে পড়তে হয়েছে।”

Advertisement

স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের হাজিরাও সংখ্যা ছিল কম। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষিকা অঞ্জনা বিশ্বাস বলেন, “ এতটা বৃষ্টি হয়েছে যে জল প্রায় ঘর ছুইছুই। খুব অসুবিধের পড়তে হয়।” সুনীতি অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষিকা মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস বলেন, “দু’দিন ধরেই স্কুলে ছাত্রীর সংখ্যা কম। প্রচণ্ড বৃষ্টির জন্য রাস্তা তো বটেই স্কুলের সামনেও জল জমে গিয়েছে।” ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পুরসভার বিরোধী দলনেতা মহানন্দ সাহা অভিযোগ করেন, ‘‘নিকাশি বেহাল। পরিকল্পনা করে কিছু তৈরি হয়নি। সে জন্য রাজবাড়ির সামনের রাস্তায় অল্প বৃষ্টিতে জল জমে যায়।’’

শুধু কোচবিহার শহর নয়, দিনহাটা, মাথাভাঙা, তুফানগঞ্জ এবং মেখলিগঞ্জেও প্রবল বর্ষণ হয়েছে। কাঁচা রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বহু জায়গায় বেহাল হয়ে পড়েছে পাকা রাস্তাগুলিও। কোচবিহারে সবমিলিয়ে ৫৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে তুফানগঞ্জে ১৫১, মাথাভাঙা ১১৯ এবং দিনহাটায় ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। নদীগুলির জল বাড়ায় নজরদারি চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন