কলমে, তুলিতে দুই বাজিমাত

এক জন চার সন্তানের মা রতুয়ার তারা রবিদাস। অন্য জন, দুই ছেলেমেয়ের জননী গাজোলের শেফালি রাজবংশি। দু’জনের জন্যই গর্বিত মালদহ জেলা। দু’জনেই নিরক্ষর ছিলেন। দু’জনেই স্থানীয় এলাকার বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে প্রায় এক বছর লেখাপড়া করেছেন। চলতি বছরের মার্চ মাসে হওয়া মূল্যায়নের মাধ্যমে সাক্ষরও হয়েছেন।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:২১
Share:

তারা রবিদাস ও (ডান দিকে) শেফালি রাজবংশি। — নিজস্ব চিত্র

এক জন চার সন্তানের মা রতুয়ার তারা রবিদাস।

Advertisement

অন্য জন, দুই ছেলেমেয়ের জননী গাজোলের শেফালি রাজবংশি।

দু’জনের জন্যই গর্বিত মালদহ জেলা। দু’জনেই নিরক্ষর ছিলেন। দু’জনেই স্থানীয় এলাকার বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে প্রায় এক বছর লেখাপড়া করেছেন। চলতি বছরের মার্চ মাসে হওয়া মূল্যায়নের মাধ্যমে সাক্ষরও হয়েছেন। নবসাক্ষর হওয়ার পাঁচ মাসের মধ্যেই বাজিমাত করলেন তাঁরা। ২৭ অগস্ট রাজ্যের নবসাক্ষরদের মধ্যে যে চিঠি লেখা ও বসে আঁকা প্রতিযোগিতা হয়েছিল, তাতে তারাদেবী চিঠি লেখাতে ও শেফালিদেবী আঁকা প্রতিযোগিতাতে রাজ্যে প্রথম হয়েছেন। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের দিনে তাঁরা দু’জন কলকাতার রবীন্দ্রসদনে সাক্ষরতা দিবসের রাজ্য স্তরের মূল অনুষ্ঠানে গিয়ে পুরস্কারও পাবেন। তাতে খুশির হাওয়া ছড়িয়েছে জেলা জুড়েই। উচ্ছ্বসিত দুই নবসাক্ষর পড়ুয়াও। সাক্ষরতা দফতরের জেলা আধিকারিক সুমন পোদ্দার বলেন, ‘‘দু’জনের জন্যই গর্বিত, আনন্দিত।’’

Advertisement

মালদহ, দুই দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া সহ ৯টি জেলায় সাক্ষর ভারত কর্মসূচি চলছে। গত বছর রাজ্যে ১১ লক্ষ ১১ হাজার ৫০৬ জন পড়ুয়া নবসাক্ষর হয়েছেন। ২৭ অগস্ট নবসাক্ষরদের চিঠি লেখা প্রতিযোগিতায় বিষয় ছিল ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে দরখাস্ত করা। বসে আঁকার বিষয় ছিল, আদর্শ লোকশিক্ষা কেন্দ্র।

তারাদেবীর বাড়ি রতুয়া ১ ব্লকের বৈকুন্ঠপুরে। তাঁর স্বামী নবম শ্রেণি পাশ তারাপদ রবিদাস দিনমজুরের কাজ করেন। তারাদেবী নিজে এত দিন নিরক্ষর ছিলেন, কিন্তু ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তিনি এখন কলেজে পড়ছেন। বড় ছেলে কলেজের প্রথম বর্ষে পড়ছেন, মেজ ছেলে দশম শ্রেণিতে ও ছোট ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তারাদেবী বলেন, ‘‘অভাব থাকায় লেখাপড়া হয়নি। স্বামীও পড়াতে পারেননি। কিন্তু লেখাপড়া শেখার খুব ইচ্ছে ছিল। তাই এই বয়সেও এলাকার বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে পড়া শুরু করি।’’ শিক্ষাকেন্দ্র থেকেই তাঁকে প্রতিযোগিতায় বসতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল। তাই অংশ নিয়েছিলেন। হেসে ফেলে বলেন, ‘‘কলকাতায় গিয়ে যে পুরস্কার নিতে পারব, তা স্বপ্নেও ভাবিনি।’’

আঁকায় প্রথম ২৮ বছরের শেফালির বাড়ি গাজোল ব্লকের রানিপুর গ্রামে। তিনি ও তার স্বামী পিন্টু রাজবংশি দু’জনেই দিনমজুরি করে সংসার চালান। বড় মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ও ৫ বছরের ছেলে স্থানীয় স্কুলে নার্সারিতে পড়ে। শেফালিও বলেন, ‘‘অর্থের টানাটানিতে পড়া হয়ে ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত পাড়ারই বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে পড়ে নবসাক্ষর হয়েছি মার্চ মাসে।’’ সেখানে আঁকাও শিখেছিলেন, তাই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তাঁর কথায়, ‘‘কিন্তু রাজ্যে যে প্রথম হব তা স্বপ্নেও ভাবিনি।’’

দু’জনেই কলকাতা রওনা হয়েছেন বুধবার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement