মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসেও ভয় কাটল না। ফাইল ছবি।
আফরাজুল খানের সঙ্গেই বছর দশেক আগে কাজের খোঁজে রাজস্থানে পাড়ি দিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু সামিউল শেখও। কালিয়াচকের সৈয়দপুরে আফরাজুলের বাড়ির পাশেই তাঁর বাড়ি। রাজস্থানের রাজসামুন্দ জেলার দোয়িন্দা গ্রামে আফরাজুলের ভাড়া বাড়ির কাছেই ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন সামিউল। বন্ধু খুন হওয়ার দু’দিন পরই আতঙ্কিত হয়ে কোনওরকমে ট্রেনের টিকিট জোগাড় করে তিনি কার্যত পালিয়ে এসেছেন।
তিনি একা নন। আফরাজুলকে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে কুপিয়ে খুন করে তার দেহ জ্বালিয়ে দেওয়ার পরে আতঙ্কে সামিউলের মতো সৈয়দপুর গ্রামেরই অন্তত পঞ্চাশ জন যুবক রাজস্থানের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাড়ি ফিরে এসেছেন। অনেকে বাড়ি ফিরে না এলেও অন্য জায়গায় পালিয়েছেন। কেউ চলে গিয়েছেন দিল্লিতে।
মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রবাসীদের ফেরার ডাক দিয়েছেন। সেই ডাক এখনও রাজস্থানে শ্রমিকদের কানে পৌঁছয়নি। কিন্তু ফেরার একেবারে হিড়িক পড়ে গিয়েছে।
সৈয়দপুরের শেখপাড়া গ্রামে বাড়ির দাওয়ায় বসে সামিউল শেখ জানান, আফরাজুল ২০ বছর আগে থেকেই রাজস্থানে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘এলাকায় কাজ নেই। বাড়িতে চার ছেলেমেয়ের সংসার চালাতে যখন হিমসিম খাচ্ছিলাম, তখন বছর দশেক আগে বন্ধুর হাত ধরেই রাজস্থানে গিয়েছিলাম কাজের জন্য। আফরাজুলের কয়েকটা বাড়ি পরের একটি বাড়িতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম। গিয়ে কাজও পেয়ে যাই। সেই টাকা পাঠিয়েই সংসার চলছিল।’’ চার-পাঁচ মাস পরপর বাড়িতে আসতেন সামিউল।
তাঁর কথায়, সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু গত বুধবার আফরাজুলের নৃশংস খুন সব কিছু বদলে দিল। তিনি বলেন, ‘‘দোয়িন্দা গ্রামে আমরা যে কয়েকজন সৈয়দপুরের মানুষ ছিলাম, সকলেই আর ঝুঁকি না নিয়ে ফিরে এলাম।’’
যে কাকরোলি এলাকায় আফরাজুল খুন হয়েছিলেন, সেই কাকরোলিতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন সৈয়দপুর গ্রামের মীর ডালিম, জুয়েল শেখ, আলিউল শেখ, রশিদুল শেখ, রফিকূল শেখ সহ অনেকেই। তাঁরা সেখানে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবেই কাজ করতেন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করলে মজুরি মেলে সাড়ে তিনশো টাকা। কাজ রোজই মেলে। বছর কুড়ির মীর ডালিম বলেন, ‘‘আফরাজুল চাচা এতদিন আছেন। তাঁর এমন হল। আমরা কাকরোলির বাড়ি থেকে বের হতেই ভয় পাচ্ছিলাম। আমাদের এমন কিছু হলে কী হবে? বাঁচানোর কেউ নেই। কাজও বন্ধ যায়। আমরা গ্রামেরই ১৫ জন শুক্রবার বাসে করে আজমেঢ় শরিফে আসি। তারপর ট্রেনে চেপে বাড়িতে।’’
ফিরে এসেছেন জুয়েল শেখ। তিনি বলেন, ‘‘আমার মজুরির তিন হাজার টাকা বকেয়া। অনেকেরই এমন টাকা বাকি। কিন্তু টাকার চেয়ে জীবন আগে, তাই আমরা রাজস্থান থেকে আতঙ্কে পালিয়ে এসেছি।’’ রাজস্থানের ঝলচক্কি, চিতোর, উদয়পুর, যোধপুর, আজমেঢ় শরিফ থেকেও কালিয়াচকের অনেক যুবক চলে এসেছেন।