এমন বাঁধের জেরেই আত্রেয়ী শুকিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। ছবিটি তুলেছেন অমিত মোহান্ত।
নদীর উত্স মুখে আড়াআড়ি ভাবে কংক্রিটের সেচবাঁধ দিয়ে আটকে দেওয়ায় আত্রেয়ী দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শীর্ণ আত্রেয়ীকে বাঁচাতে আন্দোলনে নামতে চলেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট।
রবিবার উপগ্রহ থেকে আত্রেয়ীর ছবি দেখে ওই সন্দেহ জোরালো হয়েছে বলে স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী সংস্থার কর্মকর্তাদের অভিযোগ। আত্রেয়ীকে বাঁচাতে কুমারগঞ্জের সমজিয়া সীমান্তের ও পারে আত্রেয়ী নদীর উপর আড়াআড়ি সেচবাঁধের ওই ছবি ডাউনলোড করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন দিশারী সংকল্প নামে বালুরঘাটের পরিবেশ সংস্থার সম্পাদক তুহিনশুভ্র মণ্ডল। রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ দিন টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
বাংলাদেশের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকেও এ দিন ওই ছবি-সহ বিষয়টি দেখতে অনুরোধ জানিয়ে মেলবার্তা পাঠিয়েছেন তুহিনশুভ্রবাবু। তিনি বলেন, “আত্রেয়ী দু’দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত। বিষয়টি আন্তর্জাতিক বলে দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে বিপন্নতার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। দু’দেশের তরফে বিষয়টি দেখা না হলে বিপন্ন হয়ে পড়বে একটি জনপদ।”
ক্রমান্বয়ে নদী দূষণ এবং কম বৃষ্টিপাতের কারণে আত্রেয়ী নাব্যতা হারিয়েছে। তার উপর গরমের শুরুতেই দ্রুত আত্রেয়ীর জল শুকোতে শুরু করায় চিন্তায় পড়েছেন বাসিন্দারা। নাগরিকেরা আত্রেয়ী সত্যাগ্রহ মুভমেন্ট কমিটি গড়ে বালুরঘাটে মানববন্ধনের মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করতে চলেছেন। কমিটির কনভেনার সুমিত দত্ত বলেন, “শহরবাসীর মধ্যে সচেতনতার প্রচার চলছে। এর পর নদী পুজো করে আগামী ২১ এপ্রিল আত্রেয়ী বরাবর মানবশৃঙ্খল গড়ে নদী রক্ষার ডাক দিয়ে আন্দোলন শুরু হবে।”
নদী অববাহিকা অঞ্চলে বসসবাসকারী কৃষক ও মত্স্যজীবী এবং কুমারগঞ্জের সমজিয়া এলাকার চাষিদের অভিযোগ, এই এলাকা থেকে ১৪০০ মিটার দূরে নদীর উপরে কংক্রিটের সেচবাঁধ দেওয়ার ফলে জলসংকট দেখা দিয়েছে।
এ দিন উপগ্রহের ছবি থেকে দেখা গিয়েছে, আত্রেয়ীর উত্পত্তি স্থল থেকে প্রয়োজন মতো জল নদীতে আসছে না। এক দিকে চর পড়ে যাওয়া অংশ ঘিরে ‘কাঁঠা’ দিয়ে মাছ এবং সব্জি চাষের ফলে গতিপথ বাধা পেয়ে কেবল আত্রেয়ীই নয়, এই জেলার আরও দু’টি বড় নদী গঙ্গারামপুরে পুনর্ভবা এবং বংশীহারিতে টাঙন শীর্ণ হয়ে পড়েছে। নদী সেচ প্রকল্পগুলির অধিকাংশ অকেজো হয়ে গিয়েছে।
আত্রেয়ীই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার দীর্ঘতম নদী উত্তরে কুমারগঞ্জ সীমান্ত থেকে দক্ষিণে বালুরঘাটের ডাঙ্গি সীমান্ত পর্যন্ত এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৮ কিলোমিটার। বর্তমানে আত্রেয়ী বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ দিক থেকে এই জেলার কুমারগঞ্জের সমজিয়া দিয়ে বালুরঘাটের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার ‘চলনবিল’ হয়ে করতোয়ার সঙ্গে মিলিত হয়ে পদ্মা নদীতে মিশেছে। একদা তিস্তা নদী দার্জিলিং পাহাড় থেকে নেমে আসার পর জলপাইগুড়ি জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় তিস্তা নদীর দক্ষিণ দিক থেকে তিনটি শাখা নদী বেরিয়ে আসে। এর মধ্য ভাগের শাখাটি হল আত্রেয়ী নদীর উত্স্য। পরবর্তী কালে এক বিধ্বংসী বন্যায় বিরাট ধসে তিস্তার গতিপথ বদলে যায়। তিস্তার সঙ্গে আত্রেয়ীর বিচ্ছেদ ঘটে। ফলে আত্রেয়ী নদী তার প্রধান জলধারা থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতীম কর্মকারের কথায়, “প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ এবং মানুষের সচেতনতাই উত্তরবঙ্গে আত্রেয়ীর মত সমস্ত নদীর হারিয়ে যাওয়া জলধারা ফেরাতে পারে। তার জন্য চাই পৃথক নদী দফতর। আন্দোলনটা বালুরঘাট থেকেই শুরু হতে চলেছে।”