প্ল্যাটফর্মে পরিবার

পাহাডের পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে রাজ্যের তরফে বিশেষ ট্রেন চালানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে রেলকে। আজ, শনিবার কলকাতা পর্যন্ত দু’টি স্পেশাল ট্রেন চলতে পারে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

অনির্বাণ রায় ও অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ০২:১৯
Share:

পথশয্যা: অপেক্ষা করতে শেষ পর্যন্ত প্ল্যাটফর্মেই শুয়ে পড়লেন যাত্রীরা। ছবি: সন্দীপ পাল।

তস্য পাতলা পলিথিনের শিট। সাধারণত দাম নেওয়া হয় ২০ টাকা। শুক্রবার ৫০ টাকার দামে তা মিলছে না। টিকিট পাওয়া যাবে কিনা, কবেকার টিকিট মিলবে তার নিশ্চয়তা নেই তাই আগেভাগে এসে চড়া দামের পলিথিন শিট সংগ্রহ করছেন পর্যটকেরা। ভিড় বাড়লে এই ফিনফিনে প্লাস্টিকের চাদরও বাড়ন্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা নৃপেন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ধুলো মাখা প্ল্যাটফর্মে বসে অপেক্ষা করা তো সম্ভব নয়। তাই জেনেবুঝেই বেশি দাম দিয়ে প্লাস্টিকের চাদর কিনেছি।’’ শুক্রবার সকালে এমনই ছিল নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশনের চিত্র। প্ল্যাটফর্ম, উড়ালপুল তো বটেই স্টেশনে ঢোকার রাস্তাতেও প্লাস্টিক বিছিয়ে শুয়ে-বসে অপেক্ষা করে চলেছেন পর্যটকেরা। দার্জিলিং বা পাহাড় থেকে নেমে আসা পর্যটকরা শুধু নয়, পাহাড়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যে পর্যটকরা এ দিন ট্রেন থেকে নেমেছেন তারাও গাড়ি না পেয়ে প্লাস্টিক বিছিয়েই বসতে বাধ্য হয়েছেন।

Advertisement

পাহাডের পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে রাজ্যের তরফে বিশেষ ট্রেন চালানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে রেলকে। আজ, শনিবার কলকাতা পর্যন্ত দু’টি স্পেশাল ট্রেন চলতে পারে বলে জানা গিয়েছে। তবে চাপ যে বাড়ছে তা বেশ ভালই টের পেয়েছিলেন রেল কর্তারা। পাহাড়ে ১২ ঘণ্টার বনধ ডাকা হয়েছে শুনেই সহায়তা কেন্দ্র খোলার নির্দেশ দেয় রেল। এনজেপির স্টেশন ডিরেক্টর পার্থসারথি শীল শুক্রবার সকালে বলেন, ‘‘রেলের তরফে দু’টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। অতিরিক্ত কামরা আমাদের কাছে রয়েছে। যখন যেমন প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করা হবে। প্ল্যাটফর্মে যাতে পরিষেবার কোনও সমস্যা না হয় তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’’

রেলের সহায়তা কেন্দ্র ছাড়াও পর্যটন দফতর, পুলিশ এবং তৃণমূলের সহায়তা কেন্দ্র ছিল। সহায়তা কেন্দ্র থেকে যাত্রীদের জল-বিস্কুটও দেওয়া হয়েছে। তাতেও ভোগান্তি কমেনি বলেই দাবি যাত্রীদের। গুজরাত থেকে ১৫ জনের দল নিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি এসেছেন স্বাতী মাকোড়ে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘গ্যাংটকে যাব। কিন্তু এক একজনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা চাইছে। সহায়তা কেন্দ্রে গিয়েও কোনও লাভ হল না।’’ এ দিনও বেশ কিছু পর্যটক নেমে পাহাড়ে যেতে চেয়েছেন। এনজেপির পর্যটন সহয়তা কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়েই ঝাড়খন্ডের বিনোদ কুমার অভিযোগ করেছেন, ‘‘দার্জিলিং যেতে চাইলাম কিন্তু পর্যটন দফতর থেকে বলে দিল ঝুকি নিতে পারবে না। এরপরে আর সাহস পাই কী করে।’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার পাহাড়ে পৌঁছেই বনঝের গেরোয়া পাহাড় ছাড়তে হয়েছে বাগুইহাটির চৈতালি সরকারকে। তিনি বলেন, ‘‘এই ঝক্কির পর ফিরে যাব বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু কোনও ট্রেনে টিকিট নেই। তিন দিন প্ল্যাটফর্মেই কাটাতে হবে।’’ শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জল-বিস্কুট-আশ্বাসেই সন্তুষ্ট থাকতে হল পর্যটকদের। কবে কোন ট্রেনের টিকিট মিলবে তার উত্তর পেলেন না পর্যটকদের অনেকেই।

রেল কর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে ট্রেনে তেমন ভিড় না থাকলেও বৃহস্পতিবারে কলকাতামুখী ট্রেনে মারাত্মক ভিড় ছিল। এই ভিড় থাকবে কমপক্ষে আরও দিন তিনেক।

গত এক মাস ধরে পাহাড়ে হাজারে হাজারে পর্যটক গিয়েছেন বেড়াতে। রেলের হিসাবে, গত সপ্তাহে শুধু উত্তরবঙ্গের এক একটি ট্রেনে আসন সংরক্ষণের অপেক্ষমান তালিকা ক্রমিক নম্বর গড়িয়েছিল দু’শোরও বেশি। রেলের হিসাবে গত সপ্তাহে দার্জিলিং ও সিকিম মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার যাত্রী গিয়েছেন উত্তরবঙ্গে। কিছু আবার গিয়েছেন ডুয়ার্সের দিকেও।

উত্তর-পূর্ব রেল সূত্রের খবর, বুধবারের ওই গোলমালের পরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের সব ট্রেন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। লোকাল ট্রেন থেকে পর্যটকদের জন্য বিশেষ ট্রেন ‘জয় রাইড’। কবে আবার চলবে ওই সব ট্রেন সেটাও তাঁরা এ দিন পরিস্কার করে বলতে পারেননি।

বুধবার রাতে কলকাতা উত্তরবঙ্গের ট্রেনে বেশ কিছু টিকিট বাতিল হয়েছিল। এ দিনের ট্রেনেরও বেশ কিছু টিকিট বাতিল হয়েছে। তবে সংখ্যায় তেমন একটা বেশি নয়।

পর্যটকদের সুবিধায়

বাগডোগরা বিমানবন্দর

• শুক্রবার চলাচল করে ২৩টি বিমান।

• যাত্রী সংখ্যা ৩৯০০ জন

• শনিবার শিলিগুড়ি-কলকাতা দু’টি বাড়তি উড়ান

• এয়ার ইন্ডিয়া ৩.৪০, স্পাইসজেট-৬.৩৫

• শনিবার উড়বে ২৪টি বিমান।

তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস

• এনবিএসটিসির অতিরিক্ত ৫০টি বাস।

• শিলিগুড়ি-কলকাতা ১৬টি বাস।

• ৩টি বাস শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।

• শিলিগুড়ি-দার্জিলিং চলাচল করে ২০টি বাস।

• বাস চালু ভোর ৬টা থেকে।

• টিকিট শুক্রবার ও শনিবার, পর্যটকদের জন্য বিনামূল্যে।

• সিকিম পরিবহণ নিগম সকালে বন্ধ ছিল।

• বেলা বাড়তে সিকিম জুড়ে ১৪টি বাস চলল।

এনজেপি স্টেশন

• আরপিএফ ও রেলের যাত্রী সহায়তা কেন্দ্র চালু।

• অতিরিক্ত ট্রেনের জন্য রাজ্যের আবেদন।

• শুক্রবার রাতে কলকাতার বিশেষ ট্রেন।

• মজুত রাখা হয়েছে অতিরিক্ত কামরা।

• প্রতিটি ট্রেন যাত্রী বোঝাই।

• পাহাড়গামী টয়ট্রেন বাতিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন