যেন বরফের তির পড়ছে

আবহাওয়া দফতরের পরিভাষায়, শীতের সময়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ৫ ডিগ্রির থেকে কমে গেলেই শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে বলে ধরা হয়। বালুরঘাট হোক বা শামুকতলা দুপুরের পর থেকে বইতে শুরু করছে কনকনে হাওয়া। চলছে ভোর পর্যন্ত। রেহাই শুধু দুপুরের কয়েক ঘণ্টা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৮
Share:

টিটু দুপুরের কয়েক ঘণ্টাই কেবল রেহাই। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত প্রচণ্ড ঠান্ডায় কাঁপছে উত্তর। সন্ধের পর ভরসা আগুন। নিজস্ব চিত্র

উত্তরে এখন মেঘের অপেক্ষা চলছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘ এখন আকাশে ছিঁটেফোটাও মেঘ না থাকায় দিনের বেলায় রোদের তাপে বেশ গরম অনুভূত হচ্ছে। তবে দুপুরের পর থেকেই মাটি থেকে সব উত্তাপ বিকিরিত হয়ে যাচ্ছে এবং তাপমাত্রা কমছে। মেঘ থাকলে মাটির তাপ সহজে বের হতে পারবে না।’’ সেই মেঘ চায় উত্তর। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এল লাফে কোথাও ৫ কোথাও বা ৬ ডিগ্রি নেমে গিয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পরিভাষায়, শীতের সময়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ৫ ডিগ্রির থেকে কমে গেলেই শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে বলে ধরা হয়। বালুরঘাট হোক বা শামুকতলা দুপুরের পর থেকে বইতে শুরু করছে কনকনে হাওয়া। চলছে ভোর পর্যন্ত। রেহাই শুধু দুপুরের কয়েক ঘণ্টা। গোপীনাথবাবু বলেন, ‘‘নতুন কোনও ঝঞ্ঝা এলে তবেই আকাশে মেঘ আসবে।’’ কিন্তু তা যতক্ষণ না হচ্ছে, কী করবেন?

Advertisement

জানালা আঁটুন

শিলিগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ির যাত্রীদের কাছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ‘লো ফ্লোর’ বাসের এক নিত্যযাত্রী মঙ্গলবার দুপুরে হাজির নিগমের জলপাইগুড়ির ডিপোতে। আবেদন, ‘‘দয়া করে জানলার কাচগুলো পুরো বন্ধ করার ব্যবস্থা করুন। ঠান্ডা হাওয়ায় তো চামড়া খসে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে।’’ আরও বেশ কয়েকজন যাত্রী এগিয়ে গিয়ে সহমত জানান। ডিপো সূত্রে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, বাসগুলোর সব জানলা পরীক্ষা করা হবে। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘গত কুড়ি বছর ধরে ব্যবসার কাজে নিয়মিত শিলিগুড়ি যাতায়াত করি। জানালার ফাঁক দিয়ে আসা হাওয়ার এমন ঠান্ডা কোনও দিন বুঝিনি মশাই। মনে হয় কেউ যেন বরফের তির ছুড়ে মারছে। দুপুরের হাওয়াও এত ঠান্ডা হতে পারে আগে জানতাম না।’’

Advertisement

আগুনে মৃত্যু

রেকর্ড ভেঙে সোমবার বালুরঘাটে তাপমাত্রা প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস নেমে আসে। স্থানীয় মাঝিয়ান কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের আবহাওয়া বিভাগ সূত্রের খবর বুধবার বালুরঘাটে তাপমাত্রা ছিল ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন কনকনে ঠান্ডায় আগুন পোহাতে গিয়ে বালুরঘাট শহরের টাউনক্লাবপাড়া এলাকায় গীতারানি বসু (৮৬) নামে এক বৃদ্ধার অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা ও শৈত্যপ্রবাহের জেরে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়ে পড়েছে। প্রাথমিক স্কুল গুলিতে শিশুদের উপস্থিতির হার কমে গিয়েছে। বালুরঘাট শহরে রাস্তায় ভবঘুরেদের দেখা নেই। স্বল্পবাস দুই ভবঘুরেকে বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। হরিরামপুর থানার পুলিশের উদ্যোগে রাস্তার মোড়ে সন্ধ্যা থেকে স্থানীয় পথচলতি মানুষের জন্য আগুন পোহানো ও চা পানের ব্যবস্থা করা হয়।

তাপমাত্রা সর্বনিম্ন

• দার্জিলিং ১

• শিলিগুড়ি ৭

• জলপাইগুড়ি ৬

• কোচবিহার ৫

• আলিপুরদুয়ার ৭

• রায়গঞ্জ ৮

• মালদহ ৮

• বালুরঘাট ৭

বাল্বের উষ্ণতা

বাঁদরের খাঁচার সামনে ঝোলানো হয়েছে বড় বাল্ব। ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছে রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাসের দুই বাঁদর। কিছু দিন আগে তাদের উদ্ধার করে পক্ষিনিবাসেনিয়ে আসা হয়। গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড শীতে বাঁদরগুলি কাবু হয়ে পড়ায় এদিন সেগুলির খাঁচার সামনে একাধিক বৈদ্যুতিক বাল্ব লাগিয়েছে একটি পশুপ্রেমী সংস্থা। তাঁরা আবেদন করেছেন, বাড়ির পোষ্যদেরও এই সময়ে ছত্ন নেওয়া দরকার।

শিশুরা বাড়িতেই

সোমবার রাতে একাই কোচবিহার জেলা বইমেলায় এসেছিলেন দিনহাটার বাসিন্দা, চিকিৎসক উজ্জ্বল আচার্য। পরিচিতেরা অনেকে জিজ্ঞাসা করেন, মেয়েকে সঙ্গে দেখছি না যে। উজ্জ্বলবাবু বলছিলেন, এই ঠান্ডায় মেয়েকে সঙ্গে আনতে ভরসা পাননি। প্রচন্ড ঠান্ডায় বাচ্চাদের জ্বর, সর্দিকাশি, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের সংক্রমণের মতো সমস্যা হতে পারে। তাই টুপি, মোজা, সোয়েটার ,মাস্ক তো বটেই পুরোপুরি শরীর ঢেকে বাচ্চাদের নিয়ে বেরোন উচিত। চিত্রশিল্পী শ্রীহরি দত্তও যেমন বলেই দিচ্ছেন, “ঠান্ডা কমলে ছেলেকে বইমেলা নিয়ে যাব ঠিক করেছি। সেই অপেক্ষাতেই আছি।” ঠান্ডায় জবুথবু অবস্থা বয়স্কদেরও। দিনহাটার বাসিন্দা শিক্ষক শঙ্খনাদ আচার্য বলেন, “বাবার ৭৫ বছর বয়স। ঘরে হিটার জ্বালাতে হচ্ছে। ওঁকে নিয়ে বেরোনর সাহস হচ্ছে না।” কোচবিহার মদনমোহন মন্দিরের সামনে রাত কাটান ভিখারিদের অবস্থা আরও খারাপ।

সোয়েটারের উপরে চাদর

হালকা রোদ উঠেছে ভেবে গাঁয়ে চাদর না জড়িয়ে শুধু একটা পুরো হাতা সোয়েটার পরেই বাড়ির কাছে রথবাড়ি বাজারে গিয়েছিলেন রামকৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা জ্যোতির্ময় দাস। তখন সকাল ন’টা। তখনই তিনি হাওয়ায় টের পান, ঠান্ডা কাকে বলে। রীতিমতো কাঁপতে শুরু করেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে এমনই চিত্র ছিল মালদহেও। বছর পঞ্চাশের জ্যোতির্ময়বাবু বলেই ফেলেন, ‘‘ভাবতেই পারিনি যে রোদ উঠলেও বাইরে এমন জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছে।’’ হালকা রোদ থাকলেও হাওয়া থাকায় এদিন মালদহের বাসিন্দারাই দিনভর কনকনে ঠাণ্ডায় রীতিমতো কেঁপেছেন। যদিও এদিন জেলায় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন