স্কুলের ছোঁয়ায় গ্রামই বিদ্যালয়

বালুরঘাট থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে তপনের আদিবাসী অধ্যুষিত চেঁচাই গ্রামে মাত্র ৭২টি গরিব কৃষিজীবী পরিবারের বাস।

Advertisement

অনুপরতন মোহান্ত

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:১৯
Share:

আদর্শ: পড়ুয়াদের শিক্ষা দিতে এ ভাবে সিঁড়িতেই মাসের নাম লেখা হয়েছে চেঁচাই প্রাথমিক স্কুলে। ছবি: অমিত মোহান্ত

সোমরা বান্ডো, নিমাই টিগ্গা, অমল তপ্নোদের সঙ্গে সুমতি বান্ডো, চন্দ্রা ওঁরাওরা পালা করে রোজ সকালে স্কুলের কিচেনগার্ডেনে মাটি কুপিয়ে মিড ডে মিলের আনাজপাতি ঝিঙে লাউ কুমড়ো ফলান। আবার গ্রাম জুড়ে ফ্রি ওয়াই ফাইয়ের দৌলতে মোবাইলে গোটা জগতের হালহকিকত জেনে নেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের প্রত্যন্ত এক আদিবাসী অধ্যুষিত অখ্যাত চেঁচাই গ্রাম আজ এলাকার প্রাথমিক স্কুলের ছোঁয়ায় গোটা ‘গ্রামটাই যেন স্কুল’ হয়ে উঠেছে।

Advertisement

শুধু কচিকাঁচাই নয়, এলাকার অভিভাবকদের শিক্ষা ও পরিবেশ সচেতন করে আদর্শ স্কুলের খেতাব অর্জন করেছে চেঁচাই প্রাথমিক স্কুল। মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসে দিল্লিতে ওই প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক পবিত্র মোহান্তকে জাতীয় শিক্ষকের মর্যাদা দিয়ে পুরস্কার তুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। গত ১ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক থেকে চেঁচাই প্রাথমিক স্কুল পেয়েছে গোটা ভারতবর্ষের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা স্বচ্ছ বিদ্যালয়ের পুরস্কার।

বালুরঘাট থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে তপনের আদিবাসী অধ্যুষিত চেঁচাই গ্রামে মাত্র ৭২টি গরিব কৃষিজীবী পরিবারের বাস। বালুরঘাট-তপন রাজ্য সড়কে বালাপুরের কাছে ডান দিকে সরু রাস্তা ধরে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকের অজপাড়া গাঁয়ে ৭-৮ বছর আগেও স্কুলটিতে ছিল হাতেগোনা ৫-৬ জন পড়ুয়া। একটি ঘরে কোনওমতে চলত স্কুল। এরপর পবিত্রবাবু প্রধান শিক্ষক হয়ে যাওয়ার পর থেকে অবস্থার বদল হতে থাকে। নিয়মিত গ্রামবাসীদের নিয়ে সভা, সমাজ সচেতনতা নিয়ে আলোচনায় সাড়া মেলে গত ২০১৩ সালে। সে সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে অভিভাবকেরা পাকা শৌচালয় ব্যবহার শুরু করে দেন। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। এখন তো ডেনমার্কের সরকারি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে এই স্কুলের পড়ুয়াদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিয়মিত সংস্কৃতির বিনিময় চলে।

Advertisement

বর্তমানে স্কুলটির পড়ুয়া সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৭ জন। ব্লক থেকে জেলা প্রশাসন, অবর স্কুল পরিদর্শকের সহায়তা এবং প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগে স্কুলের সঙ্গে প্রতিটি গ্রামবাসীর যোগাযোগের জন্য প্রতিটি পাড়ায় সাউন্ড বক্স বসানো হয়েছে। স্কুলের দোতলা ভবনে সাধারণ এবং প্রতিবন্ধী খুদে পড়ুয়াদের টাইল্স ও মার্বেলে সুসজ্জিত বিধিসম্মত শৌচাগার। প্রতিটি শ্রেণিতে কম্পিউটার। প্রাক প্রাথমিক পড়ুয়াদের টিভির মাধ্যমে শিক্ষাদান। নিজস্ব পাঠাগারের পাশাপাশি স্কুলের উদ্যোগে গ্রামীণ গ্রন্থাগার, ই গ্রন্থাগার, সকলের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবার ব্যবস্থা রয়েছে। স্কুল এলাকায় সিসিটিভি, সাইরেন, ফায়ার অ্যালার্ম।

আর রয়েছে ‘আমার দোকান’। পড়ুয়ারা খাতা পেন সহ যাবতীয় শিক্ষা সরঞ্জাম স্কুলের ওই দোকান থেকে কিনে নির্ধারিত দামের টাকা বাক্সে ফেলে দেয়। কিচেন গার্ডেনে জৈবসার ও বৃষ্টির জল ব্যবহার করে বাগান ও আনাজ চাষের কৌশল চাক্ষুষ দেখে গিয়েছেন ইউনিসেফ এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন