কলকাতায় পড়া নিয়ে সংশয়েই রয়েছে দীপঙ্কর

বাবা রাজমিস্ত্রি। দাদা দিনমজুরের কাজ করেন। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে আর্থিক অনটন নিত্যসঙ্গী। টাকার অভাবে টিউশনও নিতে পারেননি। প্রতিকূল এই পরিস্থিতিতেও লড়াই চালিয়ে এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রায় ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে সফল হয়ে সবাইকে অবাক করেছেন রায়গঞ্জের শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ বিদ্যাভবনের ছাত্র দীপঙ্কর শীল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০২:০২
Share:

রায়গঞ্জের শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ বিদ্যাভবনের প্রধানশিক্ষক নীলমাধব নন্দীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন দীপঙ্কর শীল। ছবি:গৌর আচার্য

বাবা রাজমিস্ত্রি। দাদা দিনমজুরের কাজ করেন। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে আর্থিক অনটন নিত্যসঙ্গী। টাকার অভাবে টিউশনও নিতে পারেননি। প্রতিকূল এই পরিস্থিতিতেও লড়াই চালিয়ে এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রায় ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে সফল হয়ে সবাইকে অবাক করেছেন রায়গঞ্জের শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ বিদ্যাভবনের ছাত্র দীপঙ্কর শীল। তবে সেই খুশির রেশ ছুঁতে পারেনি দীপঙ্কর ও তাঁর পরিবারের লোকেদের। এখন স্নাতক স্তরে পড়াশোনার খরচ কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

রায়গঞ্জের বরুয়া পঞ্চায়েতের রাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা দীপঙ্কর উচ্চমাধ্যমিকে কলাবিভাগে ৪৪৬ নম্বর পেয়েছেন। স্কুলে সর্বোচ্চ নম্বর তাঁরই। প্রতিবন্ধকতা জয় করে দীপঙ্করের নজরকাড়া ফলে স্কুলে খুশির হাওয়া ছড়িয়েছে। তবে এর পর অর্থ সাহায্য না পেলে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা করছেন দীপঙ্কর। মঙ্গলবার স্কুলের প্রধানশিক্ষক নীলমাধব নন্দীর সঙ্গে দেখা করে তিনি সেই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

নীলমাধববাবুর দাবি, অভাবের সঙ্গে লড়াই চালিয়েও দীপঙ্করের মার্কশিট দেখে স্কুলের শিক্ষকেরা হতবাক। স্কুলের ইতিহাসে দীপঙ্কর নজির সৃষ্টি করলেন। তাঁর কথায়, ‘‘স্নাতক স্তরে পড়াশোনার জন্য দীপঙ্করকে আমরা স্কুলের তরফে সাধ্য মতো আর্থিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। তবে কোনও সংগঠন, সংস্থা বা সহৃদয় ব্যক্তি ওকে ধারাবাহিক ভাবে সহযোগিতা করলে ও কলকাতার কোনও কলেজে পড়ে ভবিষ্যতে সফল হওয়ার সুযোগ পেতে পারে।’’

Advertisement

দীপঙ্কর জানিয়েছেন, বাবা মুকুন্দবাবু ও দাদা গোপালবাবুর সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ দিনের বেশি কাজ মেলে না। বৃষ্টির সময়ে কাজ না থাকায় তাঁদের বাড়িতে বসেই কাটাতে হয়। মা প্রমীলাদেবীও শারীরিক দুর্বলতার কারণে বাইরে কাজ করতে পারেন না। দীপঙ্করের দাবি, বাবা ও দাদা নিয়মিত কাজ না পেলে আধপেটা খেয়ে থাকতে হয়। বলেন, ‘‘পরীক্ষার আগে দিনের পর দিন আধপেটা খেয়ে পড়াশোনা করেছি।’’ স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ চৌধুরী-সহ আরও দুই শিক্ষক ভক্তিভূষণ মণ্ডল ও সুধীন দাস তাঁকে বিনা পারিশ্রমিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ও ভূগোল পড়িয়েছেন। তা ছাড়াও স্কুলের শিক্ষকেরা আমাকে নিয়মিত বই, খাতা, কলম ও বিভিন্ন বিষয়ের রেফারেন্স বই দিয়েও সহযোগিতা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ির আশপাশে একাধিক দোকান, বাজার ও রাস্তা থাকায় হই হট্টোগোলে দিনের বেলায় পড়াশোনা করতে পারতাম না। তাই রাত জেগেই গড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা পড়াশোনা করেছি।’’

দীপঙ্কর বাংলায় ৭৩, ভুগোলে ৯৫, দর্শনে ৯৭, সংস্কৃতে ৮৩ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৯৮ ও ইংরেজিতে ৬০ নম্বর পেয়েছেন। তবে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের নিয়ম অনুযায়ী সেরা পাঁচটি বিষয়ের তাঁর প্রাপ্ত নম্বরের যোগফল ৪৪৬। সেই নিয়মেই তাঁর ইংরেজি বিষয়ের নম্বর মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে বাদ গিয়েছে।

দীপঙ্কর জানান, আপাতত ভূগোলে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা শেষ করে স্নাতকোত্তর হতে চান। ভবিষ্যতে শিক্ষক হয়ে তাঁর মতো গরিব পড়ুয়াদের বিনে পয়সায় পড়ানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি। কলকাতার কলেজে স্নাতক পড়তে চান তিনি। কিন্তু তাঁর বাবা ও দাদার পক্ষে পড়ানোর খরচ জোগানো সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্যের আশ্বাসে ভর দিয়ে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছাড়া অন্য রাস্তা খোলা নেই আমার। কোনও সংগঠন, সংস্থা বা সহৃদয় ব্যক্তি পাশে না দাঁড়ালে কলকাতার ভাল কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন হয়তো অধরাই থেকে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন