অনুষ্ঠান: কিরণময়ী প্রাইমারি স্কুলের শিশুদের পরিবেশনা। —নিজস্ব চিত্র।
গত এক বছরে কেউ একাধিক ছবি এঁকেছে, কেউ পাট ও থার্মোকল দিয়ে তৈরি করেছে পুতুল সহ নানা খেলার সামগ্রী। আবার অনেকে এক বছর ধরে নাচ, গান, আবৃত্তিরও প্রশিক্ষণ নিয়েছে। সবটাই করিয়েছেন স্কুলের শিক্ষকেরা এবং স্কুলের গণ্ডির মধ্যেই। কিন্তু নিজেদের ছেলেমেয়ের এমন হাতের কাজ ও নাচ-গানের বিষয়টি এত দিন টেরও পাননি অভিভাবকেরা।
শুক্রবার স্কুলে আয়োজন হয়েছিল পঠন মেলার। সেখানে হাজির হয়ে এ দিন ছেলেমেয়েদের এমন কর্মকুশলতা দেখে অভিভাবকেরা রীতি মতো তাজ্জব বনে গিয়েছেন। এ ঘটনা পুরাতন মালদহের কাদিরপুর কিরণময়ী প্রাইমারি স্কুলের। শুধু তাই নয়, এ দিন এই পঠন মেলা উপলক্ষে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফলপ্রকাশও করা হয়। পাশাপাশি প্রাক প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে প্রথম থেকে তৃতীয় স্থানাধিকারী ছাত্রছাত্রীদের হাতে পুরস্কারও তুলে দেওয়া হয়েছে।
কিরণময়ী প্রাইমারি স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা ১৮০। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক বছর ধরে প্রথাগত শিক্ষার বাইরেও স্কুলের ছেলেমেয়েদের মানসিক বিকাশে আঁকা, নাচ, গান, আবৃত্তি সহ নানা হাতের কাজ শেখানো হয়েছে। কিন্তু সেই কর্মকুশলতা অভিভাবকদের কাছে তুলে ধরা হয়নি। অভিভাবকদের কাছে নিজেদের ছেলেমেয়েদের সেই প্রতিভার কথা তুলে ধরতে এ দিন স্কুলেই আয়োজন করা হয়েছিল পঠন মেলার। এ উপলক্ষে সকাল থেকেই স্কুলে ছিল সাজ সাজ রব। গত এক বছরে পড়ুয়ারা যত ছবি এঁকেছে সেগুলি সাজানো হয়েছে একটি ক্লাসরুমে। পাশাপাশি আর একটি রুমে রাখা হয়েছে পড়ুয়াদের সমস্ত হাতের কাজগুলিও। বাইরে করা হয়েছে মঞ্চ। বেলা ১১টা বাজতে না বাজতেই স্কুলে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে হাজির হন অভিভাবকেরা। শুরু হয়ে যায় পড়ুয়াদের নাচ-গান, আবৃত্তি। সাংস্কৃতিক এই পরিমণ্ডলে জমে ওঠে পঠন মেলা।
এ দিন পঠন মেলায় এসেছিলেন কাদিরপুরের বাসিন্দা রঞ্জনা মণ্ডল। তাঁর মেয়ে এই স্কুলেই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ে এ দিন রবীন্দ্রনৃত্য পরিবেশন করে। রঞ্জনাদেবী বলেন, ‘‘আমার মেয়ে যে এত ভাল নাচ করে তা জানতেই পারিনি এত দিন। স্কুলে যে নাচ শেখে আমরা জানতাম না। খুবই ভাল লাগল। একই অভিব্যক্তি রামদাস মণ্ডল, বিভাস সরকার সহ অন্য অভিভাবকদেরও।’’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক তনয় মিশ্র বলেন, ‘‘স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের নিয়ে এই পঠন মেলা। এ দিন অভিভাবকেরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের সারা বছরের কর্মকুশলতা দেখেছেন।’’ তিনি জানান, এই মেলার মাধ্যমে পড়ুয়াদের কাছে শিক্ষা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে এবং বিদ্যালয় ও অভিভাবকদের মধ্যে সম্পর্কের আরও উন্নতি হবে। এ দিন তাঁদের উপস্থিতিতে বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশও করা হয়েছে।