Jalpaiguri

ট্রেন-হাতি সংঘর্ষ এড়াতে ৮২টি ‘সেন্সর’

রেললাইনের উপরে হাতি দাঁড়িয়ে কি না, তা বুঝতেও রাতের ট্রেনচালকের সমস্যা হয়। সে সমস্যা কাটাতে এ বার ধরণিপুর, রেডব্যাঙ্ক থেকে ডায়না, মরাঘাটের রেললাইনের আশেপাশে বসছে ‘সেন্সর’।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:২৮
Share:

রেল লাইনে সেন্সর। — ফাইল চিত্র।

এক জঙ্গল থেকে অন্য জঙ্গলে হাতির দল চলে নিজেদের মর্জিমাফিক। জঙ্গল চিরে চলে যাওয়া রেললাইনের উপরে কখনও দাঁড়িয়ে থাকে একটা-দু’টো বুনো হাতি বা হস্তিযূথ। রাতের অন্ধকারের সঙ্গে সহজেই মিশে যায় হাতির গায়ের কালচে রং। জঙ্গলের ভিতর হাতি যে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা দূর থেকে বোঝা কঠিন। কুয়াশা থাকলে তো কথাই নেই। রেললাইনের উপরে হাতি দাঁড়িয়ে কি না, তা বুঝতেও রাতের ট্রেনচালকের সমস্যা হয়। সে সমস্যা কাটাতে এ বার ধরণিপুর, রেডব্যাঙ্ক থেকে ডায়না, মরাঘাটের রেললাইনের আশেপাশে বসছে ‘সেন্সর’।

Advertisement

রাতের বেলায় হাতি রেললাইনের কাছাকাছি এলেই ‘সেন্সর’ সঙ্কেত পাঠাবে আশেপাশের রেলস্টেশনে, কন্ট্রোল রুমে, বন দফতরের রেঞ্জ অফিসে এবং লাগোয়া চা-বাগানগুলিতে। অন্ধকারে চলাফেরা করা প্রাণীটি যে হাতিই, তা ‘সেন্সর’ বুঝতে পারবে পাশ দিয়ে যাওয়া প্রাণীটির আকৃতি, দেহের তাপমাত্রা অনুধাবন করে।

হাতির দল রেললাইনের আশেপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে বুঝলে ট্রেনের চালক যেমন সতর্ক হতে পারবেন, তেমন বনকর্মীরাও হাতির দলটিকে লাইনের পাশ থেকে সরিয়ে দিতে পারবেন। ডুয়ার্সের এই সব এলাকায় কিছু দূরে দূরে নজরমিনার রয়েছে হাতি দেখার জন্য। তবে রাতের অন্ধকারে মিশে থাকা হাতির দলকে নজরমিনার থেকে দেখে বুঝতে পারা সম্ভব হয় না। নতুন ‘সেন্সর’গুলি সে সমস্যা মেটাতে পারবে বলে বন দফতরের আশা। আগামী শুক্রবার থেকে এই ‘সেন্সর’ কাজ করতে শুরু করবে।

Advertisement

বন দফতর এবং রেলের সমন্বয়ে মোট ৮২টি ‘সেন্সর’ বসছে। যন্ত্রগুলি বসেছে জোড়ায় জোড়ায়। দেড়শো থেকে দু’শো মিটার দূরত্বে দু’টি স্তম্ভ বসানো। দু’টি স্তম্ভে একটি করে ‘সেন্সর’ বসানো হয়েছে। স্তম্ভের মাঝখান দিয়ে হাতি গেলেই সেটি সঙ্কেত পাঠিয়ে দেবে রেলে, বন দফতরে, চা-বাগানে। এক-একটি ‘সেন্সর’-এর দাম প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

এশিয়ার হাতি সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা একটি মার্কিন সংগঠন অর্থসাহায্য করেছে। ‘সেন্সর’ বসাচ্ছে যে পরিবেশপ্রেমী সংগঠন, তার নির্বাহী অধিকর্তা কৌস্তুভ চৌধুরী বলেন, ‘‘এই সেন্সরের কার্যকারিতা বিভিন্ন জঙ্গলে প্রমাণিত। ডুয়ার্সের মরাঘাট কিংবা বিন্নাগুড়ির হাতি করিডরে এটি খুবই উপকারী হবে।’’

যে এলাকাগুলিতে ‘সেন্সর’ বসছে, সেটি হাতিদের সারা বছরের চলাফেরার পথ। প্রায় এক দশক আগে, রাতের অন্ধকারে রেললাইন পার হতে থাকা হাতির দলকে হুড়মুড়িয়ে এসে পড়া ট্রেন এসে ধাক্কা দিয়ে ছেঁচড়ে নিয়ে গিয়েছিল। সে বার ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সাতটি হাতির। মরাঘাটের সে ঘটনা এখনও ভুলতে পারেন না বন্যপ্রাণপ্রেমীরা। তার পরেও, ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু বন্ধ হয়নিএই এলাকায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন