Universities under Financial Crisis

অর্থসঙ্কটে উত্তরের সব বিশ্ববিদ্যালয়

রাজ্য বনাম আচার্য তথা রাজ্যপাল সংঘাতের জেরেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে ওয়াকিবহালদের অনেকে মনে করছেন।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৬
Share:

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

আর্থিক বরাদ্দ কম আসায় বিপাকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক ক্ষেত্রে এখনও অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকের বেতন বহির্ভূত বরাদ্দ মেলেনি। মালদহ থেকে কোচবিহার, সর্বত্রই এই সমস্যা সামনে এসেছে। বেতন-বহির্ভূত খাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে টাকা প্রয়োজন বা এতদিন দেওয়া হত, এ বার তার সামান্য অংশই মিলেছে। সমস্যায় পড়ে উপাচার্যের নির্দেশ মতো উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিভাগ দিনকয়েক আগে, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং প্রশাসনিক সমস্ত বিভাগকে জানিয়েছে, বরাদ্দ হঠাৎ কমে যাওয়ায় সবাই যেন বাজেট পরিকল্পনার ৩০ শতাংশ (গবেষণার ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ) অর্থ খরচ করে। নতুন বছরের মার্চ পর্যন্ত এটা করতে বলা হয়েছে। ফাঁপরে পড়েছে উত্তরবঙ্গের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও।

Advertisement

এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে সোমবার একাধিক বার ফোন করা হলেও, যোগাযোগ করা যায়নি রাজ্যের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে। জবাব মেলেনি মেসেজের। তবে শিক্ষা দফতরের এক কর্তার দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যদি মনে হয়, টাকা কম দেওয়া হয়েছে তা হলে সে টাকা খরচ করে হিসাব দিলে, ফের টাকা মিলবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশ জানিয়েছেন, বেতন বহির্ভূত বরাদ্দ থেকে বিদ্যুতের বিল, ল্যাবরেটরির কাজের জন্য রাসায়নিক এবং বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা, পরীক্ষার খাতা দেখার জন্য পরীক্ষকদের পারিশ্রমিক—খরচ করতে হয়। বরাদ্দ কম পেলে, শিক্ষার সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমন ‘প্রজেক্ট’, ‘সেমিনার’, ‘সিম্পোজ়িয়াম’-এর খরচ, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ছোটখাট কাজের টাকা এই বরাদ্দ থেকে খরচ হয়। এমনকি, ‘টিএ’, ‘ডিএ’, বাইরে থেকে আসা যে সব বিশেষজ্ঞেরা ‘পিএই ডি পেপার’-এর মূল্যায়ন করেন, তাঁদের পারিশ্রমিক এই বরাদ্দ থেকে দেওয়া হয়। পত্রপত্রিকা, বই কেনার খরচও এ থেকেই নেওয়া হয়।

Advertisement

রাজ্য বনাম আচার্য তথা রাজ্যপাল সংঘাতের জেরেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে ওয়াকিবহালদের অনেকে মনে করছেন। রাজ্য শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, গত ১২ ডিসেম্বর অর্থ দফতরের অনুমোদনের পরে, যে টাকা মিলেছে, বিশ্ববিদ্যালগুলোতে অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘যদি এই বরাদ্দে হবে না মনে হয়, তা হলে অর্থ খরচ করে প্রয়োজনের হিসাব দিলে ফের অর্থ মিলবে। তবে খুশি মতো খরচ করা যাবে না।’’ শিক্ষা দফতরের কর্তার ইঙ্গিত, একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ের মতো প্রয়োজনের বাইরে কিছু খরচ করা নিয়ে তাঁদের প্রশ্ন রয়েছে।

কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁদের যে সামান্য টাকা ক'দিন আগে মিলেছে, তা বকেয়া মেটাতে খরচ হয়েছে। তা-ও সবটা মেটেনি। তাই ফের খরচের হিসাব পাঠিয়ে টাকা চাওয়া হচ্ছে। ডিসেম্বর শেষ হলেও, দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয় এই তিন মাসের টাকা এখনও পায়নি। অথচ, সমস্ত খরচের হিসাব পাঠানো হয়েছে। উপাচার্য দেবব্রত মিত্র বলেন, ‘‘খরচের ইউটিলাইজ়েশন সার্টিফিকেট (ইউসি) পাঠানো রয়েছে। আশা করি, দ্রুত বরাদ্দ মিলবে। না হলে, সমস্যা হবে।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজস্ব ভবন না থাকায় তাদের মাসে ৫০ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হয়। শিক্ষক নিয়োগ না-হওয়ায়, সরকারি বেতন বরাদ্দ মেলে না। অতিথি বা চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মীদের টাকাও বেতন বহির্ভূত খাত থেকে খরচ করতে হচ্ছে। উপাচার্য এবং ফিনান্স অফিসারের খরচ ছাড়া, বাকি সব খরচই ওই খাত থেকে মেটানো হয়। সে জন্য প্রতি তিন মাসে অন্তত ৪০ লক্ষ টাকার মতো দরকার।

আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য-সমস্যায় সময় মতো খরচের ‘ইউসি’ দিতে পারেনি। তাই টাকাও মেলেনি। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁদের ১৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। সে টাকায় তিন মাসের খরচ কুলোবে না। ফের টাকা চাইতে হবে। কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগের জেরে, চার বছরের বেশি এই খাতে বরাদ্দ বন্ধ গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের। চেয়ে পাঠালেও, শেষ ত্রৈমাসিকের বরাদ্দ মেলেনি। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন মাসে এই খাতে ৬৩ লক্ষ টাকা দরকার। শেষ ত্রৈমাসিকে তারাও অনেকটা কম পেয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কর্তৃপক্ষের একাংশ মনে করছেন, টানা এমন চললে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন