প্রতীকী ছবি।
কয়েক দিনেই সব কিছু যেন অন্য রকম হয়ে উঠছে। নিয়ম করে সন্ধে হলে রিহার্সাল রুমে হাজির হচ্ছেন ওঁরা। কখনও আধ ঘণ্টা কখনও এক ঘণ্টা ধরে টানা চলছে অনুশীলন। আসলে বাস্তব জীবনটা যখন মঞ্চে ফুটে উঠবে, তাতে যেন নিখুঁত শিল্পের ছোঁয়া থাকে, সে চেষ্টাই করে যাচ্ছেন ওঁরা। ওঁরা মানে কোচবিহার যৌনপল্লির দেবী, দুর্গা, লক্ষ্মীরা।
ওঁরা নিজেদের জীবনের কাহিনি নিয়ে তৈরি নাটক নিজেরাই মঞ্চস্থ করবেন রবীন্দ্রভবনে। সব মিলিয়ে এগারো জন থাকবেন বিভিন্ন চরিত্রে। তাতে যেমন বয়স্ক মহিলা রয়েছেন তেমনই রয়েছেন তরুণীরা।
নাটক পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন কোচবিহার নাট্যজগতের দুই পরিচিত নাম দেবব্রত আচার্য এবং বৈশালী দাস। দেবব্রতবাবু জানান, তিনি বিভিন্ন সরকারি হোমের আবাসিক থেকে সংশোধনাগারের কয়েদিদের নিয়েও একাধিকবার নাটক মঞ্চস্থ করিয়েছেন। কিন্তু যৌনপল্লির বাসিন্দাদের নিয়ে নাটক এই প্রথম। তিনি বলেন, “অন্য কোনও কিছুর সঙ্গেই এর তুলনা হয় না। এই এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে কাজ করা যেমন একটা বড় চ্যালেঞ্জ তেমন আনন্দেরও। তাঁদের জীবনকথা যেন নিজেদেরই মন খারাপ করে দেয়। এত কষ্ট এত লড়াই এক একটা জীবনে!” তিনি জানান, কুড়ি থেকে তিরিশ মিনিটের ওই নাটকে সব কথা তুলে ধরার চেষ্টা হবে। কোচবিহার দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির পক্ষে থেকে জানানো হয়েছে, শুধু পেশা নয়, সাংস্কৃতিক কাজকর্মেও যৌনপল্লির বাসিন্দাদের আগ্রহ রয়েছে। সে দিকটা ভেবেই কলকাতার মতো এখানেও একটি সাংস্কৃতিক দল তৈরির চিন্তাভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া নাটকের মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের পেশার আইনি স্বীকৃতি সহ নানা দাবিও তুলে ধরবেন।
কোচবিহার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দুর্গাবাড়ির ঠিক পিছনেই যৌনপল্লি। কয়েকশো পরিবারের বাস সেখানে। শহরে মধ্যে থেকেও তাঁরা ব্রাত্য হয়ে থাকেন সেখানে। স্কুল, কলেজ, পড়াশোনা সবেতেই পিছিয়ে রয়েছে ওঁরা। সেই সব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন শিল্পী অর্ক মহলানবিশ। নানা সময়ে নানা অনুষ্ঠান হাতে নিয়েছেন তাঁরা।
এ বারে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর একটু বড় আকারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন তাঁরা। গোটা অনুষ্ঠানটির পরিচালনায় রয়েছে পাতাকুড়ি উত্তরণ সমাজ কল্যাণ সংস্থা। শুধু কোচবিহার নয়, কলকাতা থেকেও কোমল গান্ধার দলকেও হাজির করবেন তাঁরা। ওই সংস্থার পক্ষে অর্কবাবু বলেন, “আর পাঁচ জন সাধারণ মানুষের মতো যাতে তাঁরা জীবনযাপন করতে পারেন সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাওয়া।”